অঙ্গীকার ও রক্তধারা বিষয়ে যা বললেন জেলা প্রশাসক

আশিক বিন রহিম: চাঁদপুরের ‘অঙ্গীকার’ ও ‘রক্তধারা’র সংস্কার নিয়ে অপপ্রচার বা বিভ্রান্ত না হবার অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। ৩০ মার্চ বুধবার অঙ্গীকার ও বঙ্গবন্ধু পার্ক বিষয়ে মানববন্ধন শেষে বাংলাদেশ শিল্পী সমাজের একটি প্রতিনিধি দল একটি স্মারকলিপি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
এসময় অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিলো চাঁদপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের দুটি বিশেষ ভাস্কর্য “অঙ্গীকার” ও “রক্তধারা”। বিশেষ করে অঙ্গীকার। বিভিন্ন সময়ে এটির মূল রং এর উপরে চুনকাম ও সাদা রং করে ভাস্কর্যটির ক্ষতি করা হয়েছিল। পলেস্তারা খসে পড়েছিলো, ছিলো না কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অবাধে গরু ছাগল বিচরণ করতো, অঙ্গীকারের দেওয়ালের গায়ে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ও অশ্লীল কথা লেখা থাকতো। এই ভাস্কর্যটিতে কখনও চুনকাম কখনও সাদা রংয়ের প্রলেপ দেওয়ায় ভাস্কর্যটি হারিয়েছিলো স্বকীয়তা। যা পত্র-পত্রিকাতেও সাংবাদিকগণ লেখালেখীর মাধ্যমে এটি সংস্কারের দাবী তুলেছিলেন।
এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আমি অন্জনা খান মজলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের অনুরোধে এই ভাস্কর্যটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করি। এক পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনার মহোদয়ের নিকট থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ২ লক্ষ টাকার একটি ফান্ড পেয়েছিলাম। তারপর এই কাজটি সম্পূর্ণ করার জন্য ১টি কমিটি গঠিত করা হয়। সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন দৈনিক চাঁদপুর কন্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত, বিশিষ্ট ছড়াকার ডা. পীযুষ কান্তি বড়ুয়া এবং মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান।
পরবর্তীতে কাজী শাহাদাত ও ফরিদ হাসান একসময় ভাস্কর মোঃ আনিসুজ্জামানকে নিয়ে আসেন এবং জানান, তিনি ভাস্কর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদের ছাত্র। সেই শিল্পি-যিনি ভাস্কর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদের ছাত্র, তাঁর তত্ত্বাবধানে ওই কমিটি এই সংস্কার কাজ সম্পাদন করেছিলেন।
ভাস্কর জানান, বিভিন্ন সময়ে চুনকাম এবং রঙ দেওয়ার কারণে ভাস্কর্যের (অঙ্গীকার) গঠন বিন্যাস বিকৃত হয়ে গেছে। যা আর সম্পূর্ণরুপে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বরং নিতে গেলে এর গঠনগত আরও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তিনি এটিকে সাদা রঙ করেন। কারণ তিনি যখন কাজ ধরেন তখনও সেটি বিবর্ন সাদা রং এর ছিল। এভাবেই অঙ্গীকারকে পুনঃসংস্কার করা হয়।
বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অঙ্গীকার ও বঙ্গবন্ধু পার্ক বিষয়ে যারা মানববন্ধন করেন তারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁদের সাথে কথা বলা শেষে ভাস্কর্যগুলো সংস্কারের বিষয়ে তাঁদের সহযোগিতা চেয়েছি এবং ভাস্কর্যগুলো সংস্কারে তাদেরকে প্রয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে তারা ঢাকায় কথা বলে নিশ্চিত করেন যে তারা ভাস্কর্যটিকে (অঙ্গীকার) পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন।
এসময় অভিনেতা, মঞ্চ নির্দেশক, নির্মাতা রামেন্দু মজুমদার ও নির্মাতা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেছি। তাঁরাও এ কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
ভাস্কর আব্দুল্লাহ খালিদের ছেলে সৈয়দ আবদুল্লাহ জহী তাঁর পিতার নামে নামফলক করায় জেলা প্রশাসক হিসেবে আমার প্রতি লিখিতভাবে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। সবাই একযোগে চাঁদপুরের ভাস্কর্যগুলো রক্ষার কাজে সহায়তা করবেন এমনটি জানিয়েছেন।
৩ কলাম ছবি ৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *