একটি সেতুর জন্য ৫০ বছর অপেক্ষা

 

দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে একটি সেতুর জন্য অপেক্ষায় আছে ১৫ টি গ্রামের লাখো মানুষ। দিন মাস বছর চলে গেলেও সেই সেতুর দেখা পাচ্ছেনা তারা। এভাবে একটি মাত্র পাকা সেতু নির্মাণের অপেক্ষায় দিন পার করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ছেত্রা নদী এলাকার লাখেরও বেশি মানুষ। সেতুর কারণে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। বর্ষাকালে তাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। এত দীর্ঘ বছর অপেক্ষার পরেও তারা জানে না আদৌ সেখানে কোন সেতু নির্মাণ হবে কি না। তাই শুষ্ক মৌসুমে নদী পারাপার জন্য সেখানকার দুটি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের মানুষ প্রতিবছর প্রায় ৯০০ ফুট লম্বা এবং ছয় ফুট চওড়া দৈর্ঘ্যরে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে।

স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন গ্রামের মানুষে স্বেচ্ছাশ্রমে ১৯৯৭ সালে বাঁশের একটি সাঁকো প্রথমে নির্মাণ করেছিলেন। এরপর থেকে তারা প্রতিবছর বর্ষা এলে পুরনো সাঁকোটি তুলে নেয় এবং শুষ্ক মৌসুমে আবারও সাঁকো স্থাপন করে। বর্ষাকালে গ্রামের মানুষ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নদী পারাপারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেতুর পূর্ব প্রান্তে অরুয়াইল বাজার, দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, কয়েকটি মাদ্রাসা, দুটি কলেজ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস রয়েছে। এই বাঁশের সাঁকো ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার কোন বিকল্প পথ নেই ১৫ গ্রামের মানুষের।

সেতুর অভাবে ভোগান্তি পোহানো গ্রামগুলো হলো- অরুয়াইল ইউনিয়নের রাণীদিয়া, কাকুরিয়া, রাজাপুর, অরুয়াইল, বাদে-অরুয়াইল, বারপাইকা, বুনিয়ারটেক, ধামাউড়া, দুবাজাইল এবং পাকশিমুল ইউনিয়নের পাকশিমুল, ফতেপুর, পরমানন্দপুর, হরিপুর, সাতবাড়িয়া ও বরইচারা। ওইসব গ্রামের বাসিন্দারা বর্ষাকালে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে নৌকা ব্যবহার করে, শুষ্ক মৌসুমে তাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বাঁশের সাঁকো। শুধুমাত্র একটি সেতুর অভাবে ওই এলাকার মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে।

তাছাড়াও দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ওই এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। হাওড় বেষ্টিত, কৃষি নির্ভর এই গ্রামগুলোতে উৎপাদিত ধানসহ বিভিন্ন ফসলাদি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।
গ্রামবাসীরা জানান, রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচনের আগে আমাদের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পর তারা তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কথা মনে রাখে না।

রাণীদিয়া উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বশির আহমেদ বলেন, সাধারণত স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রী এবং রোগীরা, বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদেরকে এই পরিস্থিতির কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিতে হয়।

অরুয়াইল আব্দুস সাত্তার ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো. মুখলেছুর রহমান বলেন, নদীতে পাকা সেতু নির্মাণের জন্য আমরা বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আবেদন জানিয়ে কোনো সুফল পাইনি।

স্থানীয় রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও দেউবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছালাতুর রহমান সবুজ বলেন, “প্রায় ২৫ বছর আগে সাঁকোটি গ্রামবাসীরা নির্মাণ করেছিলেন। গ্রামের মানুষ প্রতি বছর সাঁকোটি মেরামত করতে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা দেয় এবং মেরামতে খরচ হয় প্রায় চার লাখ টাকা। প্রতি বছর শত শত গ্রামবাসী মেরামত কাজে স্বেচ্ছাশ্রম দেয়।”

এ বিষয়ে অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জানান, ছেত্রা নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা তো দুরের কথা, দেশ স্বাধীনের ৫০ বছরেও এই এলাকার মানুষ পুরনো বাঁশের সাঁকো মেরামতের জন্য কখনোই সরকারিভাবে কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি। বর্ষাকালে গ্রামের মানুষ ও শিক্ষার্থীদের নদী পারাপারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এজন্য নদীর উপর একটি কংক্রিটের সেতুর দাবি এলাকাবাসীর।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদ বলেন, “অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের মানুষ একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘ বছর ধরে কষ্ট করছে। আমি এই নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য এলজিইডি মন্ত্রণালয়কে ডিও লেটার দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এই নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উদ্যোগ নেবে বলে আমরা আশাবাদী।

এ ব্যাপারে এলজিইডির সরাইল উপজেলার মাঠ পর্যায়ের আবাসিক প্রকৌশলী আব্দুল হালিম বলেন, “একশ মিটারের চেয়ে বড় আকারের সেতু নির্মাণের জন্য আলাদা প্রকল্প প্রয়োজন। এই নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব তৈরি করে সফট কপি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে এটা প্রক্রিয়া শেষে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *