মাঝেমধ্যে আব্বা–আম্মাও কাবিলা নামে ডেকে ফেলেন…

বাংলা নাটকে ভিউর হিসাবে রেকর্ড করেছে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’–এর চতুর্থ সিজন। মাত্র ১৭ দিনে ধারাবাহিকটির প্রথম পর্বের ভিউসংখ্যা প্রায় কোটির ঘরে। নাটকটির সবচেয়ে আলোচিত কাবিলা চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিয়াউল হক পলাশ। তাঁর আরেকটি নাটক ‘দই’–এর এক মাসে ভিউসংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়েছে। এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন পলাশ

১.ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকটির চতুর্থ সিজনটি থেকে দর্শকদের সাড়া কি বেশি পাচ্ছেন?

সব সিজনেই সাড়া ছিল। তবে বছরখানেক বিরতি দিয়ে চতুর্থ সিজনটি প্রচারিত হচ্ছে। এই সিজনের প্রতি দর্শকদের আলাদা আগ্রহ ছিল। কারণ, নাটকটিতে কাবিলার সঙ্গে বোরহান চরিত্রের ঝামেলা ছিল। তৃতীয় সিজনের শেষ পর্বে কাবিলাকে জেলে যেতে দেখা যায়। ওখানেই দর্শকের আগ্রহ ছিল। এরপর কী হবে, কী হবে—এ ধরনের অপেক্ষা। এ কারণে চতুর্থ সিজন তৈরির জন্যও দর্শকের চাপ ছিল।

২.নাটকের এই সফলতায় আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

ভালো লাগছে, মানুষ নাটকটি আগ্রহ নিয়ে দেখছেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে ইউটিউবের ভিউর দিক থেকে বাংলা নাটক হিসেবে এটি রেকর্ড গড়েছে। এ জন্য নিজের মধ্যে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে। বাংলা নাটকের একটা ইতিহাসের সঙ্গে থেকে গেলাম।

মাঝেমধ্যে-আব্বা–আম্মাও-কাবিলা-নামে-ডেকে-ফেলেন

৩.আপনার অভিনীত আরেকটি নাটক ‘দই’–এর এক মাসে ইউটিউব ভিউও এক কোটি ছাড়িয়েছে। এই যে এত দর্শক ভিউ, তা কি নাটকের মানদণ্ড ঠিক করতে পারে?

এখানে কথা আছে। অনেক কাজই আছে মানের দিক থেকে ঠিক নেই। কিন্তু অনেক ভিউ। আবার অনেক ভালো কাজ আছে, দর্শক দেখেননি, ভিউ কম। কাজের কোয়ালিটির কারণে ভিউ আপ–ডাউন হয়। আমি মনে করি, কোয়ালিটিই আগে। এরপর ভিউটা প্যারালালি আসে। কাজের কোয়ালিটি ভালো হলে, দর্শক এক সময় না এক সময় কাজটি দেখবেনই। হয়তো সময় লাগতে পারে ভিউ হতে।

৪.‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকটিতে অভিনয় করে ব্যক্তি পলাশের জীবন পাল্টে গেছে কি?

কিছুটা তো পাল্টেছেই। আগে নরমাল একজন মানুষ ছিলাম। এখন ঘর থেকে বের হলে রাস্তাঘাটে দুই-চারজন মানুষ আমাকে চেনেন। আমার সঙ্গে ছবি তোলেন। অনেকে আমার অভিনয়ের প্রশংসা করেন। অভিনয় করে নিজের নামটাও পাল্টে গেছে।

৫.কেমন?

দেখেন না সবাই কাবিলা ডাকে আমাকে। আমার আসল নাম পলাশ যেন ঢাকা পড়ে গেছে। এমন অবস্থা হয়েছে, কখনো কখনো আমাকে পলাশ নামে ডাকলে হঠাৎ করে নিজের কাছে অন্য রকম মনে হয়। মজার ব্যাপার হলো, প্রথম দিকে আমার মা–বাবা ভাবতেন, তাঁদের দেওয়া নাম বাদ দিয়ে ছেলের নাম সবাই কাবিলা বলে ডাকে কেন। তখন তাঁরা আমার এই নাটক দেখেননি। পরে ব্যাপারটা বুঝতে পারেন। তাঁরাও এখন ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ দেখেন। মাঝেমধ্যে আব্বা–আম্মাও মুখ ফসকে কাবিলা নামে ডেকে ফেলেন। হা হা হা।

৬.আচ্ছা, কাবিলা চরিত্রটির ম্যাজিক কোথায়?

এটি আমি বলতে পারব না। কারণ, আমি চরিত্রটি করেছি, মানুষ দেখছেন। আমি চরিত্রটি করতে গিয়ে মনেই করি না যে আমি অভিনয় করতে এসেছি, অভিনয় করছি। এই প্রেশার আমি নিতে চাই না। কারণ, কাজ করে আমি দুনিয়া উল্টে ফেলব, এটা ভাবিই না। কাজের সময় শুটিং জোনে গিয়ে চরিত্রের মধ্যে ঢুকে যাই। চরিত্রটি যেভাবে হাঁটে, যেভাবে কথা বলে, সেটাই করার চেষ্টা করি। এর বাইরে কোনো কিছুই মাথায় নিই না।

৭.কীভাবে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকটির সঙ্গে যুক্ত হলেন?

২০১৩ সালে ছবিয়ালের সঙ্গে কাজ শুরু করি। দীর্ঘদিন ফারুকী ভাইয়ের সঙ্গে সহকারী হিসেবে কাজ করেছি। এরপর ইশতিয়াক আহমেদ রোমেলের সহকারী। ২০১৭ সালে কাজল আরেফিন অমির সঙ্গে সহযোগী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু। আমি ভাবিনি যে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’–এ অভিনয় করব। শুটিংয়ের আগে আগে আমি ও অমি ভাই মিলে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকটির ক্রিপ্ট করছিলাম। আমার বাড়ি নোয়াখালী। নাটকটিতে নোয়াখালীর একটা চরিত্র আছে। অমি ভাই একদিন বললেন, ‘চরিত্রটি তোমাকে করতে হবে।’ কিন্তু একই নাটকের সহযোগী পরিচালক, আবার অভিনয়, চাপ পড়ে যাবে। করতে চাইনি। পরে অমি ভাইয়ের চাপাচাপিতে শুরু করলাম। ভাবলাম, অভিনয়ে আমার হারানোরও কিছু নেই, পাওয়ারও কিছু নেই। আমার মাথায় ছিল ভালো করলেও কিছু হবে না, খারাপ করলে তো বাদই।

৮.নোয়াখালী অঞ্চলের তরুণ কাবিলা চরিত্রের কারণে বাস্তবে নোয়াখালীতে অনেক পরিচিতি আপনার, তা–ই না?

আগে যেমন মা–বাবার সঙ্গে নোয়াখালীতে গেলে পরিচিতজনেরা ছাড়া তো কেউ চিনতেন না। ২০১৭ সালে এই নাটকের প্রচার শুরু হওয়ার পর নোয়াখালীতে গেলে বাড়তি কদর তো পাই। বাড়িতে গেলে বাড়ির সামনে কিছু মানুষের ভিড় হয়, দূরদূরান্ত থেকে অনেকে কথা বলতে, ছবি তুলতে আসেন। বড়রা এখন একটু বেশি আদরযত্ন করেন, ভালোবাসেন।

৯.এই জনপ্রিয়তা অনেক সময় ঝামেলা মনে হয় কি?

না, এই ঝামেলা জিনিসটা আমি মাথায়ই নিই না। আমি আগে নাখালপাড়ার রেলগেটে যে চায়ের দোকানে চা খেতাম, এখনো সেখানেই চা খাই। যে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, সেই বন্ধুদের সঙ্গেই আড্ডা দিই। আগে আসতেন না, এখন দশটা মানুষ কাছে আসেন, তাঁদের সঙ্গে ছবি তুলি। এখন যদি এটাকে ঝামেলা বা সমস্যা মনে করি, তাহলেই নিজের কাছে সমস্যা মনে হবে।

১০.অনেকে বলেন, চিত্রনাট্য ছাড়াই ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকটির কোনো কোনো চরিত্রের শুটিং করা হয়, সত্যি কি?

চিত্রনাট্যের পুরো আউটলাইন নিয়েই শুটিং করা হয়। তবে কোনো কোনো সময় তো ইম্প্রোভাইজ হয়ই। এখন ধরেন, আমরা দুজন হয়তো একটা দৃশ্য করব। দৃশ্যের পরিস্থিতির ওপর পরিচালক ব্রিফ করে দিলেন। সেই অনুযায়ী আমরা সংলাপ বলতে থাকলাম। একটা সময় দেখা গেল, পরিচালকের ব্রিফের বাইরে আমরা নিজের মতো করে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছি। যদি দৃশ্যের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হয়, তাহলে বাড়তি সংলাপের কিছু অংশ তখন পরিচালক রাখেন। না হলে ফেলে দেন, ব্যাপারটা এমন।

১১.আপনি পরিচালকও। পরিচালক নাকি অভিনেতা—শেষে কী হতে চান?

সবার আগে পরিচয় আমি একজন আর্টিস্ট। পরিচালকও আর্টিস্ট, একজন অভিনেতাও আর্টিস্ট। কারণ, পরিচালকের সংলাপ লিখতে হয়, চিত্রনাট্য লিখতে হয়, শিল্পীকে অভিনয়ের ব্রিফ দিতে হয়। আবার একজন অভিনেতা অভিনয়ের সময় একজন আর্টিস্ট হিসেবেই অভিনয় করেন। পরিচালকও শিল্পী, আর্টিস্টও শিল্পী। আমি একজন আর্টিস্টের সত্তাকে উপভোগ করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *