স্টাফ রিপোর্টার এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে পাসের হার ৯৫.২৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন শিক্ষার্থী। রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানরা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে ফলাফল হস্তান্তর করেন।
আরও পড়ুন-এইচএসসিতে পাসের হার ৯৫.২৬ শতাংশ গণভবন থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ফল প্রকাশের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।এরপর দুপুর ১২টায় সারা দেশে একযোগে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রসঙ্গত, এর আগে জিপিএ–৫ পেয়েছেন সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলে সার্বিক পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। এর মধ্যে এইচএসসিতে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে ফল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি পরীক্ষার ফল গ্রহণ করেন।
এবারের এইচএসসিতে দেশসেরা হয়েছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৯৮.১১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২০ হাজার ৮৭৮ জন। যশোর বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ জন তবে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১ লাখ ২৮ হাজার ১৬৩ জন।
এরপর পাসের হারে এগিয়ে কুমিল্লা। এ বোর্ডে ৯৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এক লাখ ১৪ হাজার ৫৫৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন কুমিল্লা বোর্ড থেকে। এর মধ্যে পাস করেছেন এক লাখ ১১ হাজার ৬৮০। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ১৫৩ জন শিক্ষার্থী।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী বোর্ড। রাজশাহী বোর্ডে এবার মোট পাসের হার ৯৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৫০ হাজার ৯১৮ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৮৯ জন।
পাসের হারে রাজশাহীর পরে অবস্থান ঢাকা বোর্ডের। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মোট পাসের হার ৯৬ দশমিক ২০ শতাংশ। মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ৩ লাখ ১৫ হাজার ৯৫৭ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৯ জন।
পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বোর্ড। বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৬৬ হাজার ৭৯৬ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৩২ হাজার ৫৭ জন এবং ছাত্রী ৩৪ হাজার ৭৩৯ জন। পাস করেছেন ৬৩ হাজার ৯৬৪ জন।
তারপর রয়েছে ময়মনসিংহ বোর্ডের অবস্থান। এ বোর্ডে ৯৫ দশমিক ৭১ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন। মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ৭০ হাজার ৯৮২ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬৬ হাজার ২৫০ জন।
৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ পাসের হার নিয়ে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৩১ জন। এই বিভাগে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ৬৬ হাজার ৬৬১ জন। এর মধ্যে মোট উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬৩ হাজার ১৯৩ জন।
সিলেটের পরের অবস্থানে রয়েছে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে। এ বোর্ডে পাসের হার ৯২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। দিনাজপুর বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৮৬ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১ লাখ ৪ হাজার ৪৮৪ জন।
পাসের হার সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে। এ বোর্ডে পাসের হার ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৩ হাজার ৭২০ জন। এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৯৯ হাজার ৬২৮ জন। পাস করেছেন ৮৯ হাজার ৬২ জন।
এ ছাড়া মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ১৩ হাজার ১৬৭ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ৭৬৮ জন।
আর কারিগরীতে পাসের হার ৯২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৯৭ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ জন।
জিপিএ-৫ এ বিগত চার বছরকে ছাড়িয়ে গেছে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড। এ বছর কুমিল্লা বোর্ডে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ১১ হাজার ৬৮০ জন। ফলাফলে গড় পাসের হার ৯৭.৪৯ শতাংশ। মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য এই তিন বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ১৫৩ জন। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. আসাদুজ্জামান রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে এই ফলাফল ঘোষণা করেন।
তিনি জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৭৮ জন, ২০১৮ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯৪৪জন, ২০১৯ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৩৭৫ জন, ২০২০ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯ হাজার ৩৬৪ জন এবং এবছর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৪ হাজার ১৫৩ জন।
গতবারের তুলনায় এবার জিপিএ-৫ বেড়েছে ৪হাজার ৭৮৯জন। এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯৭ দশমিক ১১ শতাংশ। এ বিভাগে ২৪ হাজার ৯৭৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ২৪ হাজার ২৫৩ জন। মানবিক বিভাগে পাসের হার ৯৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এ বিভাগে ৫৪হাজার ৪১৮জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেছে ৫৩ হাজার ৩৬২ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৯৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ বিভাগে ৩৫ হাজার ১৬৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৩৪ হাজার ৬৫ জন।
কুমিল্লা বোর্ডের ফলাফলে এবছর এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। মেয়েদের পাসের হার ৯৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং ছেলেদের পাসের হার ৯৭ শতাংশ। এ বছর ৩৯৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৭টি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাসের কৃতিত্ব অর্জন করেছে এবং কোনও প্রতিষ্ঠানে পাসের হার শূন্য নেই। শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জিপিএ-৫ ও পাশের হারে আমরা খুবই খুশি। বিগত বছরগুলোয় যে সব বিষয়ে পরীক্ষার্থীরা পিছিয়ে ছিল সেইগুলোতে জোর দেয়ায় আমাদের ফলাফল ভালো হয়েছে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের সাফল্যের ধারা অব্যাহত
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ চাঁদপুর এইচএসসি পরীক্ষায় ৪র্থ ব্যাচেও সাফল্যের ধারা অব্যাহত। এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় ৪৩০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ৪১৭ জন শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পায় ৫৪ জন এবং পাসের হার ৯৬.৯৮ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগের পাশের হার ৯৯ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫১ জন, মানবিক বিভাগের পাশের হার ৯৯শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখার পাশের হার ৮৮ শতাংশ।
এবারের ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ চাঁদপুর-এর চেয়ারম্যান ড. মোঃ সবুর খান বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিক্ষার্থীদের মেধা ও সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে নিরলসভাবে কাজ করে উত্তরোত্তর সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের লক্ষ্য শিক্ষার্থীর মেধা ও সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধন করা এবং গুণগত শিক্ষার প্রসার ঘটানো। তাই যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে স্মার্ট এডুকেশন-এর মাধ্যমে আমরা আধুনিক ও মানসম্পন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত জাতি তথা স্বনির্ভর জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোঃ জামশেদুর রহমান বলেন, এ ঈর্ষণীয় সাফল্যের মূলে রয়েছে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশের আইটি বিপ্লবের অগ্রদূত ও শিক্ষানুরাগী ড. মোঃ সবুর খানের আদর্শ নেতৃত্ব ও সঠিক দিকনির্দেশনা। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি গৃহীত বিশেষ একাডেমিক কার্যক্রম ও নিয়ম-কানুন, কলেজের শিক্ষা ও সহশিক্ষা ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন সাধন, শিক্ষার্থীদের পাঠোন্নতির লক্ষ্যে করোনার মতো দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে স্মার্ট এডু’র মাধ্যমে নিয়মিত অনলাইন ক্লাস, মাসিক পরীক্ষা ও মনিটরিংয়ের ফলে বিগত বছরের ন্যায় এ বছরেও প্রশংসনীয় ফলাফল অর্জনে সহায়ক হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমার সকল শিক্ষকমন্ডলীর আন্তরিক প্রচেষ্টা ও অনলাইনে উন্নত পাঠদান, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ, করোনাকালীন সময়ে নিয়মিত ভার্চুয়াল অভিভাবক সমাবেশে অভিভাবকদের সচেতনতা ও তত্ত্বাবধান এবং সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের একনিষ্ঠ অধ্যয়ন ও ভালো ফলাফল অর্জনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাও এ ফলাফলের নেপথ্যে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
১৩ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টায় সারাদেশের ন্যায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ চাঁদপুরেও ফল ঘোষণা করা হয়। সন্তানেরা ভালো ফল করায় অভিভাবকগণ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, অধ্যক্ষ, শিক্ষকমন্ডলী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।