ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে : ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ঢাকায় আগামী ১০ ডিসেম্বর যে বিভাগীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বিএনপি- তা নিয়ে সরকার ভয় পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, “আমরা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। কিন্তু তারা (আওয়ামী লীগ) তাদের ক্ষমতা হারানো ভয়ে ঘুম হারাম করে ফেলেছে। তারা আতঙ্কে ভুগছে।
“বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলো দেখে তারা ভয় পেয়েছে। এখন ১০ তারিখের নয়া পল্টনে সমাবেশের কথা শুনে আওয়ামী লীগ ভয় পেয়েছে।”
শনিবার বিকালে রাজশাহী নগরীর মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন ফখরুল।
ঢাকায় সমাবেশ নয়াপল্টনে করতে চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করেছিল বিএনপি। তবে দলটিকে ২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলা হয়েছে, যা নিয়ে টানাপড়েন চলছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা তাদের বলতে চাই, বিএনপি নয়াপল্টনে বহু সমাবেশ করেছে। সেখানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আমরা সমাবেশ করেছি। কই তখন তো কোনো সমস্যা হয়নি।
“এখন তারা (সরকার) জঙ্গি নাটক শুরু করেছে। নিজেদের প্রয়োজনে জঙ্গি বানায়, নিজেরাই বাস পুড়িয়ে অগ্নি সন্ত্রাস করে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।”
জ্বালানি তেল ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানো, দলের নেতা-কর্মীদের গুলি করে হত্যা, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজশাহী মহানগর বিএনপির উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে সমাবেশ শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৪টায়।
মহানগরের বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডসহ বগুড়া, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাটের থেকে নেতা-কর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন ও জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে এ সমাবেশে অংশ নেন। হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে জনসভা মাদ্রাসা মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের সড়কেও বিস্তৃত হয়।
মঞ্চে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য দুটি চেয়ার সংরক্ষিত করে রাখা হয়।
‘সরকার সমর্থিত পরিবহন মালিকদের ডাকা’ পরিবহন ধর্মঘট এবং পথে পথে বাধা অতিক্রম করে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতা-কর্মীরা গত তিনদিন ধরে ঈদগাহ মাঠে রাত্রিযাপন করে।
সমাবেশ চলার মধ্যে দুপুরের পর রাজশাহীতে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
‘এবার রুখে দাঁড়াতে হবে’
বর্তমান সরকারের এক যুগের নিপীড়ন নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, “এভাবে আর কত কাল আমরা কষ্ট করব। আমরা উঠে দাঁড়াব, রুখে দাঁড়াব? রুখে দাঁড়াতে হবে।
“আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এই ভয়াবহ দানব যে আমাদের সব কিছু ছারখার করে দিচ্ছে, তাকে যদি সরাতে না পারি- আমাদের ভবিষ্যত শেষ হয়ে যাবে; যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছিলাম, সেই স্বাধীনতা টিকবে না, আমাদের সব অর্জন সব শেষ হয়ে যাবে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমাদের এই আন্দোলন বিএনপিকে ক্ষমতায় পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন নয়, আমাদের এই আন্দোলন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর জন্য নয়, আমাদের এই আন্দোলন তারেক রহমান সাহেবকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর জন্য নয়।
“আমাদের এই আন্দোলন মানুষের অধিকারকে ফিরে পাবার আন্দোলন, আমাদের মানুষের ভোটের অধিকার পাওয়ার আন্দোলন, আমাদের এই আন্দোলন দেশে একটা সুষ্ঠু সুন্দর, শান্তিময় পরিবেশ তৈরি করার আন্দোলনৃ।”
তিনি বলেন, “আমরা এই আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের পরিষ্কার কথা যে, এবার শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই নিরপেক্ষ সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে।
“সেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ইনশাল্লাহ একটা পার্লামেন্ট গঠন হবে, যে পার্লামেন্টে আন্দোলনের সকল দলকে নিয়ে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব বলেছেন যে, জাতীয় সরকার গঠন করবেন।”
নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি মহাসচিব।
‘আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল নয়’
মির্জা ফখরুল বলেন, “আওয়ামী লীগ এখন কোনো রাজনৈতিক দল নয়, তারা লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। নিজেরা সম্পদ লুট করে পাহাড় বানাচ্ছে, বিদেশে অর্থ পাচার করছে, ইসলামী ব্যাংকের টাকা নামে-বেনামে ঋণের নামে লুট করছে। আওয়ামী লীগ দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করে ফেলেছে।”
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসা’র সভাপতিত্বে ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুনুর রশীদ, জেলার সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকারের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য কবির হোসেন, মিজানুর রহমান মিনু, শাহজাহান মিয়া, আবদুল মান্নান তালুকদার, হাবিবুর রহমান হাবিব, এমএ লতিফ খান, কেন্দ্রীয় নেতা হারুনুর রশীদ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, নাদিম মোস্তফা, শামসুজ্জোহান খান, সৈয়দ শাহিন শওকত, এএইচএম ওবায়দুর রহমান চন্দন, তাইফুল ইসলাম টিপু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, দেবাশীষ রায় মধু, সালেক চৌধুরী, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ, মোশাররফ হোসেন।
মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, য্বুদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের হেলাল খান, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, উলামা দলের শাহ নেছারুল হক, জিয়া পরিষদের অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, রাজশাহীর আবু সাঈদ চান, নাটোরের সাবিনা ইয়াসমিন ছবি, জয়পুরহাটের শামসুল হক, নওগাঁর আবু বকর সিদ্দিক নান্নু, সিরাজগঞ্জের সাইদুর রহমান বাচ্চু বক্তব্য দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *