গ্যাসের দাম আরেক দফা বাড়লো

স্টাফ রিপোর্টার

শিল্পখাতে গ্যাসের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ভর্তুকি সমন্বয়ে গ্যাসের এ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

এর আগে গত বছরের জুনে গ্যাসের মূল্য ২২.৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ওই সময় সার উৎপাদনে ২৫৯ শতাংশ, শিল্পে ১১.৯৬ শতাংশ (বৃহৎ শিল্পে ১১.৯৮ টাকা, মাঝারি শিল্পে ১১.৭৮ টাকা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ১০.৭৮ টাকা, চা শিল্পে ১১.৯৩ টাকা), বিদ্যুতে ১২ শতাংশ, ক্যাপটিভে ১৫.৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়।

এছাড়া আবাসিকে একচুলার দর ৯৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা, দুই চুলা ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০৮০ টাকা করা হয়। প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের ইউনিট প্রতি দর ১২.৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা, সার উৎপাদনে ঘনমিটার ৪.৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তকে গণবিরোধী আখ্যায়িত করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। বুধবার (১৮ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিদ্যুতের পর আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এবার গ্যাসের মূল্য প্রায় তিনগুণ বাড়ানো সরকারের গণবিরোধী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। সরকার বিদ্যুতের পর গ্যাসের দাম বাড়িয়ে চরম দুর্ভোগে থাকা জনগণকে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

তিনি বলেন, গণবিরোধী সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, অব্যবস্থাপনা, ভুল নীতির কারণে এমনিতেই জনগণ চরম দুঃসময় অতিক্রম করছে। এর মধ্যে গত চার দিন আগে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর এখন বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, বিদ্যুৎকেন্দ্র এমনকি হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে গ্যাসের দাম দুই থেকে তিনগুণ বাড়ানোর ফলে প্রতিটি পণ্য, বিদ্যুৎ ও খাদ্যের দাম আবারও অস্বাভাবিকভাবে বাড়বে। ব্যবসায়ীদের অনুরোধ উপেক্ষা করে একতরফাভাবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে সবকিছুতেই এর প্রভাব পড়বে।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এমনিতেই গ্যাসের সংকট চরমে, কল-কারখানা এমনকি বাসা বাড়িতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নেই, গ্যাস সংকটে বাসা বাড়ির চুলা জ্বলছেই না, কল-কারখানার উৎপাদনও ক্রমাগত কমছে। এমন অসহনীয় পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে শিল্প-কারখানা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে, জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে।

তিনি বলেন, সরকার নির্বাচিত নয় বলে, একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত জনগণের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। জনগণের পকেট কাটতে ও একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে অবৈধ সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। সরকারের দুঃশাসন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের কারণে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলা যাচ্ছে না, ব্যবসা-বাণিজ্যে চরম অস্থিরতা ও হতাশা বিরাজ করছে।

ফখরুল বলেন, জনজীবনে চলছে মারাত্মক সংকট। উন্নয়নের নামে দেশে চলছে সীমাহীন লুটপাট। দেশে গণতন্ত্র নেই, বাকস্বাধীনতা নেই, বিচার বিভাগে স্বাধীনতা নেই, নেই রাজনৈতিক অধিকারও। প্রতিবাদ করলেই নামে নির্যাতনের খড়গ। চাল, চিনি, তেলসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সব জিনিসের দাম এখন আকাশচুম্বি।

তিনি বলেন, সরকারের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও দলীয় লোকদের সিন্ডিকেটের কারণে বিগত ১৪ বছর ধরেই সব জিনিসের দাম বেড়েছে কয়েকগুণের বেশি। বর্তমানে সাধারণ মানুষের ত্রাহী অবস্থা, মানুষের বেঁচে থাকাই এখন দায়। এ অবস্থায় আবারও বিদ্যুতের পর গ্যাসের দাম বৃদ্ধি জনদুর্ভোগ আরও বাড়াবে, যা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে সরকারকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *