চাঁদপুরের হাটবাজারে তরমুজের ছড়াছড়ি : দামে ঊর্ধ্বগতি

স্টাফ রিপোর্টার/হাজীগঞ্জ প্রতিনিধি: চৈত্রের প্রায় শেষ দিকে এবছর শুরু হয়েছে মাহে রমজান। ঋতু বদলে শীতের মৌসুম কাটিয়ে ধীরে ধীরে গরম পড়তে শুরু করেছে। গরম অনুভব হলেই তৃষ্ণা মেটাতে মানুষজন রসালো ফল খেতে বেশি পছন্দ করেন। তরমুজ খায় না এমন মানুষ মনে হয় খুবই কম আছে। এখনো ভালো ভাবে গরম অনুভুত হয়নি এরই মাঝে চৈত্রের শেষে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে রসালো ফল তরমুজ চাঁদপুরে আসতে শুরু করেছে।

সোমবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে চাঁদপুর জেলার সর্ববৃহৎ তরমুজ ও কাচামালের আড়ৎ শহরের ১০ নং চৌধুরী ঘাটে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ট্রলার ও স্টীমার করে তরমুজ আসতে দেখা যায়। এখানে প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ীর মধ্যে তরমুজ বিক্রয় করে ১০-১৫ টি আড়ৎ। ট্রলার ও স্টীমার করে তরমুজ আসার পর আড়ৎগুলোতে তোলা হয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টির কারনে ফলন কম হয়েছে। চাষিরা নৌযানে করে প্রতিদিন নিয়ে আসছে তরমুজের বহর। বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা তরমুজ এখানে এনে বিক্রি করছেন। প্রতি ট্রলারে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার তরমুজ আসে। পাইকাররা এখান থেকে তরমুজ কিনে চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলায় ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন যোগে সরবরাহ করেন। ভোলা, পটুয়াখালী, রাঙ্গাবালী ও বরিশাল থেকে চাঁদপুরে বেশী তরমুজ আসে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

তরমুজ হাট ঘুরে দেখা গেছে, বড় সাইজের বাংলালিংক ১শ’ তরমুজ ২২-২৩ হাজার টাকা, মাঝারি সাইজের ১০০ তরমুজ ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা এবং ছোট সাইজের তরমুজ ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কালো ১শ’ তরমুজ ২০-২২ হাজার টাকা, মাঝারি সাইজের ১০০ তরমুজ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা এবং ছোট সাইজের তরমুজ ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে পাইকারী ও খুচরা বাজারের তফাৎ দ্বিগুণ বলে জানান কয়েকজন ক্রেতা।

তরমুজের বেপারী ওয়াদুদ জানায়, এ বছর ভোলার চরফ্যাশনের তরমুজ চাঁদপুরে বেশী আসছে।

১০ নং চৌধুরী ঘাটের সেলিম ট্রেডার্স এর পরিচালক হারুন হাওলাদার জানায়, বড় সাইজের একটি তরমুজ পাইকারী সর্বোচ্চ ২২০ টাকা ও ছোট সাইজের একটি তরমুজ নিন্মে ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে আমাদের ক্রয় করতে হয়।
১০ নং চৌধুরী ঘাট কাঁচামাল ব্যবসায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মেসার্স হারুন ট্রেডার্সের মালিক মোঃ হারুন হাওলাদার জানায়, বৃষ্টি না হওয়ার কারনে কৃষকরা কম ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভাল হয়েছে। চৌধুরীঘাট থেকে জেলা ও জেলার বাহিরে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজারের অধিক তরমুজ বিক্রয় হয়। গরম ও রমজানের কারনে দামটা কমছে না।
১০ নং চৌধুরী ঘাট কাঁচামাল ব্যবসায় সমিতির সভাপতি কালাম লস্কর জানান, চাষি, বেপারী ও ক্রেতারা যার যার ইচ্ছে অনুযায়ী তরমুজ কিনতে পারে। এখানে কোনো সিন্ডিকেট কিংবা চাঁদাবাজি নেই। আগামী বৈশাখের শেষ পর্যন্ত বাজারে তরমুজ বিক্রয় হতে পারে।
চাঁদপুর জেলার প্রাণকেন্দ্র হাজীগঞ্জে জমেউঠেছে তরমুজের আড়ৎধারী ব্যবসা। এ বছর গরমের শুরুতেই রোজা পড়ায় চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি এক এক তরমুজের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। তাইতো তরমুজের বেপারী, পাইকার, আড়ৎধার ও শ্রমীকদের কাজে চাঙ্গা মনোভাব লক্ষ করা যায়।
প্রহেলা রমজান রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাজীগঞ্জ পূর্ব বাজারের হাজী ফল ভান্ডার, ভাই ভাই ফলের আড়ৎ, রাজা ফল ভান্ডার, জিন্নাত এন্টারপ্রাইজ, আল্লাহর দান ফলের আড়ৎ, মানিক ও মন্নান মিয়াসহ প্রায় ১০ টি ঘর গোদিতে বেপারী আর পাইকারের মিলন মেলা। নদীপথে আসা ট্রলার থেকে তরমুজ মাথায় করে আড়ৎধারের ঘরে গুনে শুনে টাল দিচ্ছেন শ্রমিকরা। পাইকার ও হকারগন পিচ হিসাবে ছোট তরমুজের দাম ৪০/৫০ টাকা, বড় মালে ২৫০ টাকা থেকে ৪শ টাকা পর্যন্ত গড়ে ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা শ বিক্রি হচ্ছে।
দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা পাইকাররা এসব দামে ট্রাক বোজাই করে তরমুজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যায়। তাদের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে হাজীগঞ্জের পাইকাররা বেশী দামে তরমুজ ক্রয় করে তা উপজেলার বিভিন্ন হাট বিজারে পিচ হিসাবে ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫/৭ শত টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে আসছে।
এখানকার কয়েকজন আড়ৎধার ও বেপারী এবং পাইকারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রসালু ফল তরমুজ দেশের দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলের বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, খুলনা, বরগুনা, পাথরঘাটা এলাকা থেকে স্থানীয় চাষীদের কাছ থেকে ট্রলার যোগে বেপারীরা নিয়ে আসেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে। এখান থেকে আবার দেশের দক্ষিণ ও পূর্ব অঞ্চল, কুমিল্লা, হবিগুঞ্জ, সিলেট, ভ্রামনবাড়ীয়া, ফেনী, চিটাগাং সহ প্রায় ৩০/৩৫ জেলার পাইকাররা ট্রাকে করে তরমুজ নিয়ে যায়।
ভাই ভাই ফলের আড়ৎ এর মালিক সেলিম মিয়া ও রাজা ফল ভান্ডারের আড়ৎধার গাজী আলম বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর তরমুজের ব্যাপক আমদানী রয়েছে। তবে প্রচন্ড গরম ও সামনে রোজার মাস পাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে যে কারনে তরমুজের দামও একটু বেশী।
শ্রমীক সোহাগ, কবির, আলআমিন, রহমতউল্ল্যাহ বলেন, আমরা কমিশনে দৈনিক ৭/৮ শ টাকা রুজি করতে পারি। গত মার্চ মাস থেকে শুরু হয়ে আগামি জুন- জুলাই পর্যন্ত তরমুজের আমদানী রপ্তানি থাকবে।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ.স.ম. মাহবুব-উল আলম লিপন বলেন, এখানকার আড়ৎধার ব্যবসায়ীদের অনুরোধে দূর দূরান্ত থেকে আসা মানুষের সুবিদার্থে টয়লেট, পানি, সুডিয়াম লাইটসহ বিভিন্ন সু-ব্যবস্থা করেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *