চাঁদপুরে অস্তিত্ব সংকটে হাতে ভাজা মুড়ি

মতলব উত্তর প্রতিনিধি আধুনিক জীবনযাত্রা আর পরিবর্তনের ছোঁয়ায় মান্ধাতার আমলের ঐতিহ্য হাতে ভাজা দেশি মুড়ি চাঁদপুর থেকে বিলুপ্তির পথে। যান্ত্রিক ব্যবস্থার জাঁতাকলে আর কালের বিবর্তনে হাতে ভাজা মুড়িশিল্প আজ আর গ্রামের পল্লি-প্রান্তরে দেখা যায় না। মাহে রমজানে মুড়ি ছাড়া ইফতার যেন অকল্পনীয়। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে নানান খাবারের সঙ্গে এখনো ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে মুড়ির কদর। হাতে ভাজা মুড়ির স্থান দখল করে নিয়েছে কারখানার মেশিনের তৈরি মুড়ি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার আটটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বর্তমানে হাতে ভাজা এই মুড়ির বাজার পুরোপুরি আধুনিক কলকারখানার দখলে। তাই শহর, উপশহর আর গ্রাম্য অঞ্চলে মানুষের কাছে মুড়ির কদর থাকলেও হাতে ভাজা মুড়ি মেলে না। শহরের সীমানা ছাড়িয়ে পল্লি গাঁয়ের বিভিন্ন বাড়িতেও কারখানার মুড়ির দখল। অথচ আগেকার দিনে গ্রামের ছোট-বড় যেকোনো পরিবারে সারা বছরই হাতে ভাজা মুড়ি পাওয়া যেত।
কালের পরিক্রমায় আধুনিক সমাজব্যবস্থায় চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু কারখানায় মুড়ি উৎপাদিত হওয়ায় হারিয়ে গেছে সুস্বাদু হাতে ভাজা দেশি মুড়ি। শুধু তা-ই নয়, দেশের বড় বড় নামীদামি কোম্পানিগুলোও মুড়ি তৈরি করে শহর থেকে শুরু করে পল্লির ছোটখাটো দোকানগুলোতে পৌঁছে দিচ্ছে। ফলে এ শিল্প আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে।
মতলব উত্তর উপজেলার ফতেপুর পশ্চিম ইউনিয়নের পূর্ব নাউরী গ্রামে হঠাৎ চোখে পড়ে হাতে মুড়ি ভাজার দৃশ্যটি। ওই গ্রামের নুরুল গাজীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৬০)। তিনি হাত দিয়ে মুড়ি ভাজার কাজে খুব পারদর্শী। এ কাজে তাঁর হাতযশ ভালো। ফাতেমা বেগমের মুড়ি ভাজার অভিজ্ঞতা প্রায় ৪০ বছর। গ্রাম ছাড়াও আশপাশের গ্রামের বিভিন্ন পরিবারের মুড়ি ভেজে দেন। এটা তাঁর পেশা ও নেশা—দুটোই।
ফাতেমা বেগম বলেন, ছোট সময় থেকেই মা-দাদির কাছ থেকে দেখা ও শেখা। মুড়ি ভাজাও একটি শিল্প। সহজ মনে হলেও এর কায়দা আছে। সবার হাতে মুড়ি ভালো হয় না।
পূর্ব নাউরী গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা মো. সিরাজ খাঁ (৭০), নান্নু মোল্যা (৮০), জরুনা বেগম (৬৯) বলেন, ‘ছোটকাল থেকে দেখে এসেছি, খেয়ে এসেছি হাতে ভাজা মুড়ি। এখনো নিজেদের জমির ধান থেকে আলাদাভাবে মুড়ি ভাজার জন্য চাল তৈরি করে মুড়ি ভাজি এবং সারা বছরই ঘরে মুড়ি থাকে। কোনো সকালে অথবা কোনো বেলা ভাতের বদলে মুড়ি খেয়ে থাকে অনেকেই। তাই বলে গ্রামের সব বাড়িতে হাতে ভাজা মুড়ি পাওয়া যাবে না।’
ফতেপুর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘এ চিরচেনা ঐতিহ্য আমাদের মাঝ থেকে প্রায় বিলুপ্তির পথে। এ দৃশ্য হাতে গোনা কিছু পরিবারের ব্যক্তিগত ছাড়া চোখে পড়ে না।’
মতলব উত্তর প্রেসক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, ‘হাতে ভাজা মুড়ি আমাদের একটি ঐতিহ্য। এটা একধরনের শিল্প। কিন্তু আমাদের এই পুরোনো ঐতিহ্য আর শিল্পটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে হাতে ভাজা মুড়ির সঙ্গে বর্তমানে কারখানায় তৈরি বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট মুড়ির তুলনা চলে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *