অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন ও নাব্যতা সংকটে চাঁদপুরে ইলিশ নেই

চাঁদপুরে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেছেন,আমরা চাই মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময়গুলোয় জেলেদের জন্য আলাদা কর্মসংস্থান তৈরি করে দেওয়া হোক। জেলেরা ওই সময়ে ব্যস্ত থাকলে কেউ তাদের নদীতে নামাতে সাহস পাবে না। জেলেদের যে প্রণোদনা দেওয়া হয়, সেটি না দিয়ে ১০টা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা চাই জেলেরা জেল না খেটে কাজে ব্যস্ত থাকুন। মন্ত্রণালয়ের এই বিষয়গুলো নিয়ে চিঠি পাঠানো হবে। যাতে জেলেদের জন্য নতুন কর্মপরিকল্পনা করা হোক।

‘বেশি বেশি মাছ চাষ করি, বেকারত্ব দূর করি’, এই প্রতিপাদ্য ধারণ করে চাঁদপুরে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব বলেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।

এ সময় বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিউটের মুখ্য ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, বি এম হান্নান, গিয়াসউদ্দিন মিলন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল রুশদী, এএইচএম আহসান উল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল রুবেল, আলম পলাশ, রিয়াদ ফেরদৌস, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শান্ত, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তালহা জুবায়ের।

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ আরো বলেন, চাঁদপুরে জেলেদের তালিকা নতুন করে হালনাগাদ করা হবে। যারা বাদ পড়েছে এবং মারা গেছেন, সেসব জেলের নাম নতুন করে হালনাগাদ করা হবে। প্রকৃত জেলেরাই হালনাগাদে থাকবেন। অনেক জনপ্রতিনিধি মা ইলিশ ও জাটকা নিধনে সম্পৃক্ত রয়েছেন। আমার তার প্রমাণও পেয়েছি। আমাদের পক্ষ থেকে বারবার তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। সবার সহযোগিতা যদি আমরা পাই, তাহলে অভিযান সফল হবে। কারণ ৭০ কিলোমিটার নদী প্রশাসনের পক্ষে একা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এর জন্য সবার সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের যদি বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকে, তাহলে জেলেরা মাছ ধরবেনই। তাই জেলেদের স্বল্প পরিসরে ট্রেনিং নিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। কী করলে চাঁদপুরে ইলিশ বাড়বে, ইলিশের বাজার তৈরি হবে, তার পরিকল্পনাই আমরা করছি।

ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেছেন, ইলিশ বেড়েছে, কিন্তু চাঁদপুরে কেন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না, এটাই সবার প্রশ্ন। চাঁদপুরে দুই-তিন বছর ধরে ইলিশ কম। আমি গবেষণা করে দেখেছি, চাঁদপুরে ইলিশ চলাচলের যে রুট রয়েছে, সেখানে নদীর তীব্র নাব্য-সংকট রয়েছে। এ ছাড়া বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর দূষিত পানির কারণও রয়েছে। সাগর থেকে যে ইলিশ আসবে, তার রাস্তাটি কেমন হতে হবে, সেটা বড় বিষয়। আসার রাস্তাটি নাব্যতা তৈরি হয়, তাহলে ইলিশ কীভাবে আসবে।

তিনি আরও বলেন, চাঁদপুরে ইদানিং নদী থেকে যেভাবে বালু তোলা হচ্ছে, তা খুবই অপরিকল্পিত। এটি সরাসরি ইলিশের বাস্তুতন্ত্রে আঘাত করে। এটি যে শুধু ইলিশের ডিম নষ্ট করে তা-ই নয়, এটি অন্যান্য মাছেরও ক্ষতি করে।

তিনি বলেন, আরও গবেষণা চলছে। বাস্তুতন্ত্রের কারণে ইলিশ তাদের রুট পরিবর্তন করছে। নদীতে যেভাবে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন করা হয়, সেটি পরিকল্পিতভাবে হলে আমরা উপকার পাব।

স্টাফ রিপোর্টার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *