ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি
বর্ষার ভরা মৌসুমে শ্রাবনের এই সময়ে প্রচণ্ড খরার কারণে খেতেই শুকিয়ে মরে যাচ্ছে পাট। খালে বিলে পানি নেই, তাই পাট পচাতে বা জাগ দিতে না পেরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। বর্ষার ভরা মৌসুমেও খাল-বিলে পানি না থাকায় জলাশয়, ডোবা, পুকুরে পাটের জাগ দিতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে। কমছে গুনগত মান। পাটে কালো দাগ পড়তে শুরু করেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফরিদগঞ্জে ভালো পাট উৎপন্ন হতো, কিন্তু বর্তমানে পানির অভাবে কৃষকরা এর উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে । চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় মোট ১৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর এ শস্যের চাষ কম করা হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পানি না থাকায় কৃষকরা পাট নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিশেষ করে বন্যা কবলিত এলাকার বালিথুবা ১, বালিথুবা ২, সুবিদপুর ৩, সুবিদপুর ৪, ৫ নং গুপ্টি এলাকার কিছু চাষী জোয়ার-ভাটার পানির উপর পাট চাষে এবং পচাতে নির্ভরশীল। কিন্তু জোয়ার-ভাটার পানি নদী থেকে বিভিন্ন মাঠে না উঠায় পাট জাগ দিতে বিভিন্ন রকম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
উপজেলার নদী, মাছ চাষের পুকুর, খাল, বিলে, কোথাও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছেন না তারা। কোনো উপায় না পেয়ে পাট কেটে খেতেই রাখছেন তারা। অনেকে বন্যার পানির আশায় পাট না কেটে রেখে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পর্যাপ্ত পানি না পেয়ে নিচু জায়গায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে জাগ দিচ্ছেন।
এবার পাটের ফলন ভালো হলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাটের আঁশে কালো বর্ণ ধারণ করেছে। কিছু কিছু জায়গায় পাট ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। এতে সোনালী এ শস্যের বাজারমূল্য অনেক কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ জমির পাট কাটা শুরু হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠে পানি নেই। জমি থেকে নদী বা খালের দূরত্ব অনেক। যে কারণে সেখানে পাট নেওয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। অনেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে শ্রমিক এনে খালে নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। জমি থেকে পাট দূরে নিয়ে জাগ দেওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বালিথুবা ইউনিয়নের মহসিন নামের এক কৃষক জানান, এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ কম, আষাঢ় শ্রাবণ মাস শেষ হয়ে গেছে। এখনও কোথাও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নেই। বন্যার পানির আশায় আছি। আষাঢ় মাসের প্রথম ভাগে জোয়ার ভাটায় সামান্য পানি আসলেও এখন সে পানিও চলে গেছে। প্রয়োজনীয় পানির অভাবে পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
সিরাজ সরদার নামে অপর কৃষক জানান, পাট চাষে কোনো লাভ নেই। অনেক খরচে জমি প্রস্তুত করা, বীজ বপন, সেচ দেওয়া, সার দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাট ধোয়া পর্যন্ত যে খরচ হয়, হিসাব করলে কৃষকদের লোকসান ছাড়া লাভ হয় না।
পাট চাষি চলেমান জানান, এ বছর পাটের স্বাভাবিক ফলন হয়েছে। বাজার দর ভালো, কিন্তু পানি না থাকায় পাট কাটা সম্ভব হচ্ছে না।যেখানে পাট চাষ করেছি সেখানে গত বছর এই সময়ে ৫ ফুট পানি ছিল। কিন্তু এই বছর সেখানে এক ইঞ্চি পানি ও নাই। অন্যান্য বছর পাট যেখানে কাটতাম সেখানেই জাক দিতাম, যার কারণে খরচ একেবারেই কম পড়তো। এছাড়া জমি থেকে বিভিন্ন পুকুরে পাট জাগ দেওয়ার কারণে মাছ মারা যায়, যার কারণে পাট জাগ দিতে পারছিনা।
উপজেলা কৃষি অফিসার আশিক জামিল মাহমুদ বলেন, ফরিদগঞ্জের কৃষকদের মধ্যে সৌখিনতা বেশি। আমরা শত চেষ্টার পরেও এদেরকে এই শস্য পলাতে আনতে পারছি না।এছাড়া তিনি বলেন, পাটের ফলন করতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকতে হয়, কিন্তু গত কয়েক বছর পানির অভাবে ফরিদগঞ্জের কৃষকরা পাট চাষ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
ডিপ্লোমা কৃষি অফিসার নুরে আলম জানান, ফরিদগঞ্জ উপজেলা একটি বেড়িবাঁধ এলাকায়।এ বেড়িবাঁধ এলাকায় শত শত খাল থাকা সত্বেও, খালগুলো সংস্কার না করার কারণে পানির অভাব দেখা দেয়। আর এই পানি পর্যাপ্ত না থাকার কারণেই কৃষকরা পাট চাষ করতে আগ্রহী নয়।