জাটকা রক্ষায় প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতা

আবদুল গনি দেশের প্রাণী ও মৎ্স্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঘোষিত মার্চ-এপ্রিল মাসে চাঁদপুর মেঘনা নদী দেশের অভয়াশ্রমগুলোতে ৩৭২ কিলোমিটার নৌ-সীমানার অভয়াশ্রমগুলোতে সরকার মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করে জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
১ মার্চ মঙ্গলবার থেকে এ কার্যক্রম দেশের তথা অভয়াশ্রমগুলোতে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও শরিয়তপুর জেলার মোট ৩৭২ কি.মি এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
জাটকা নিধন বন্ধ হলে দেশের নদ-নদীতে জাটকাগুলো খাদ্যের সন্ধানে বিচরণ করার সুযোগ পাবে এবং শারীরিকভাবে বাড়তে সুযোগ পাবে । এতে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে দেশের নদ-নদীতে ইলিশ সম্পদ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান ।
প্রাপ্ত তথ্য মতে- চাঁদপুর জেলার উত্তরে ষাটনল হতে দক্ষিণে চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার অভয়াশ্রমে,লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডারের চর হিলশা থেকে চর পিয়াল পর্যন্ন ৯০ কিলোমিটার,ভোলার চরবভন্ডরিয়া থেকে পটুয়াখালী পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার,বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থেকে হিজলা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার,
শরিয়তপুরের ভেদেরগঞ্জ থেকে নড়িয়া পর্যন্ত ২০ কি.মি এলাকার নৌ-সীমানার ভেতর এ নিষেধাজ্ঞায় সরকারিভাবে সকল প্রকার মাছ ধরা,আহরণ,পরিবহন ও জাটকা নিধন বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন,কোস্টগার্ড,সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসন,নৌ-পুলিশ ও মৎস্য বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ ।
মঙ্গলবার ১ মার্চ থেকে জাটকা সংরক্ষণ এ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। দেশের অভয়াশ্রমের মধ্যে চাঁদপুরের মেঘনা-পদ্মা নদীর ইলিশ অভয়াশ্রমে সকল প্রকার মৎস্য আহরণবন্ধসহ জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি পালন হচ্ছে।
চাঁদপুরে ২৩ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জাটকা নিধন প্রতিরোধে টাস্কফোর্স কমিটির একসভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেছেন,‘আগামি মার্চ-এপ্রিল এ দু মাস কোনো জেলে নদীতে কোনো প্রকার জাল ব্যবহার কিংবা কোনো প্রকার মাছ শিকার করতে পারবেনা না। এ সময়ের মধ্যে সরকার ত্রাণ তহবিল থেকে তালিকাভুক্ত জেলেদের খাদ্য সহায়তা ও নগদ অর্থ প্রদান করবে । ইলিশ দেশের সম্পদ । তাই অভিযানের সময় নদীতে ড্রেজিংও বন্ধ রাখতে হবে। যারা ড্রেজিং করছে,তাদেরকে চিঠি দেয়া হবে। অভিযানের সময় প্রশাসনকে সঠিক তত্ত্ব দিতে হবে। যাতে করে ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে সত্যতা পায়।’
তিনি আরোও বলেন,‘পাশাপাশি স্ব স্ব উপজেলার মৎস্য অফিস উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সমন্বয়ে স্ব-স্ব ইউনিয়ন পরিষদের অভ্যন্তরের সকল খালগুলোর মুখ ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে বন্ধ করে দেয়া হবে। দেশের জাতীয় সম্পদ ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রচার অভিযান,সভা,আড়ৎ পরিদর্শন ও পাহারাসহ সকল প্রকার সরকারি ও জেলা টাস্কফোর্স এর নির্দেশনা পালন করবে ।’
চাঁদপুর মৎস্য কর্মকর্তা মো.গোলাম মেহেদী হাসান মঙ্গলবার তাঁর দপ্তরে সকাল এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন ।
চাঁদপুর মৎস্য কর্মকর্তা বলেন,‘ আগামি কাল মঙ্গলবার থেকে দু মাসব্যাপি সরকারি নিদের্শণা মতে চাঁদপুরের নৌ-সীমানার অভ্যন্তরে ১০০ কিলোমিটার এলাকায় সকল প্রকার মৎস্য আহরণ রন্ধ থাকবে ও জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি পালিত হবে। দেশের প্রাণি ও মৎস সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ দু’ মাস চাঁদপুরের নেী-সীমানায় মৎস্য আহরণবন্ধ ও জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি পালন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির আলোকে মেঘনা নদীতে অভিযান পরিচালনা করবে জেলা টাস্কফোর্স ও উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি ।’
চাঁদপুর জেলা টাস্কফোর্সসহ মতলব উত্তর,মতলব দক্ষিণ,চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি মার্চ ও এপ্রিল এ দু মাস চাঁদপুরের নৌ-সীমানায় জাটকা রক্ষার ক্ষেত্রে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাবে।
এছাড়াও জেলার সব নিবন্ধিত জেলেদের প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে ভিজিএফ চাল প্রদনের নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য বিভাগ । ’
তিনি আরো বলেন,‘জাটকা সংরক্ষণ অভিযান সুষ্ঠ ভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলেদের যে খাদ্য আসছে, তা সঠিক সময়ে, সঠিক নিয়মে বিতরণ করা হবে। প্রতিজন জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দিতে হবে। একটা চাল ও তাদেরকে কম দেয়া যাবেনা। জেলেদের তালিকার পরিপূর্ণ চাল আসছে। চাল কম দিবেন না। এধরনের সংবাদ আসলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযান সফল করতে প্রচার প্রচারণা করতে হবে। বিভিন্ন খালের মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে। বন্ধ মুখ যাতে খুলতে না পারে-সেজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। জাটকা সংরক্ষণ অভিযানের সময় বহিরাগত জেলেরা মাছ স্বীকার করতে আসলে সাথে সাথে প্রশাসনকে অবগত করতে হবে।’
এদিকে জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি যথাযথ বাস্তবায়নে চাঁদপুর জেলায় জেলা প্রশাসন,পুলিশ প্রশাসন,নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা সাংবাদিকগণ,রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন সুধিজনকে নিয়ে জেলা টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এছাড়াও মতলব উত্তর ও দক্ষিণ, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলায় পৃথক পৃথক উপজেলা কমিটি,মৎস্য বিভাগ সমন্বয় করে জাটকা রক্ষা কর্মসূচি পালন করবে বলে জানা যায়।
মৎস্য আইনের ধারায় বলা হয়েছে-সরকার নিষিদ্ধ ঘোষিত অবস্থানগুলোতে মার্চ-এপ্রিল এ ২ মাসে মাস মাছের অভয়াশ্রমগুলোতে স্বাধীনভাবে বিচারণের লক্ষ্যে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
কেউ এখন যদি এ সময়ে মাছ ধরে, পরিবহন করে কিংবা আহরণ বা ক্রয়- বিক্রি করে- তাহলে কমপক্ষে এক বছর বা তার অধিক ২ বছর পর্যন্ত জেল বা ৫,০০০ টাকা জরিমানাসহ সশ্রম কারাদণ্ডের বিষয়টি রয়েছে মৎস্য সংরক্ষণ ১৯৫০ আইনে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *