বর্তমানে নিত্য পণ্যের উর্ধগতির এক জনপদের নাম হলো চাঁদপুর। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দিশাহারা নির্মাণ শ্রমিজ, জেলে ও খেটে খাওয়া শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষ। নিত্যপণ্যের দাম যে হারে বেড়েছে আয় বাড়েনি একগুণও। ফলে প্রাপ্ত মজুরি দিয়ে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কম খেয়ে, খরচ কমিয়ে কোনো মতে চলতে হচ্ছে।
তিন বছরে নিত্যপণ্যের খরচ বৃদ্ধিজনিত কারণে ব্যয় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তিনবছরে চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। সবজির দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। পেঁয়াজ, তেল, ডালের অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়া দামই স্থির হয়ে গেছে।
পাশাপাশি করোনাকালীন কর্ম হারোনা ও বেতন হ্রাসের মতো পরিস্থিতি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ পড়েছে। জীবন নির্বাহের খরচ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, সরকারের হিসেবেই তা উঠে এসে এসেছে। যদিও বাজারের প্রকৃত চিত্রের চেয়ে সরকারের হিসেবে কম প্রতিফলিত হয় বলে আলোচনায় আছে। তারপরও বাজার দর সরকারের প্রাক্কলিত লক্ষ্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
চলতি বছরের মূল্যস্ফীতি লক্ষ্য আছে ৫.৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫.৬ শতাংশ। বাজারের ভয়াবহ চিত্র সরকারের হিসেবেই ফুটে উঠেছে এবং অব্যাহতভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। মূলত নিত্যপণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। শ্রমজীবী মানুষ এ ব্যয় সামাল দিতে খাওয়া কমিয়ে দেওয়া বা অন্য খরচ কমিয়ে দিনাতিপাত করছে।
চাঁদপুরে প্রধান শ্রম বাজার নির্মান শ্রমিকরা। পাশাপাশি পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে কোন পেশার মানুষই আয়ের সাথে এখন হিসেব মিলাতে পারছে না।
রিকশা শ্রমিক আল-আমিন জানান, “ যাত্রীরা এখন অটোতে চড়ে, রিকশায় কম ওডে। সারা দিনেও জমার টাকা উঠানো যায় না। এরপর সংসার চালাতে খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়।
নিত্য পন্যের সাথে আয়ের মিল নেই বলে জানিয়েছেন, নির্মান শ্রমিক সাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘যেই হাজিরা পাই তা দিয়ে চাইল ডাইল কিনে আর টাকা থাকে না। তাই ঔষধ পত্র কিনতেও পারি না। অসুস্থতা নিয়েই কাজে যাই। আবার সব সময় কামও থাকে না। অনেক কষ্টে সংসার চালাইতাছি।
নদীতে মাছ না থাকার অভিযোগ এনে চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচরের জেলে জাকির হোসেন জানান, নদীতে মাছ নাই। অভিযান শেষ হওয়ার পর সব মাছ সাগরে চইলা গেছে মনে হয়। যে মাছ পাই তা দিয়ে কোন কিছুই হয় না। জিনিষপত্রের যেই দাম। কি করমু কোন কিছু পাই না। অন্য কোন কামও নাই।
অটো ড্রাইভার রাসেল জানান, আগের মতো এখন আর যাত্রী পাওয়া যায় না। সব কিছুর দাম বাড়লেও যাত্রীর ভাড়া বাড়ে না। সারা দিন চালিয়ে জমা দিয়ে ২/৩ শ’ টাকা থাকে। এই দিয়ে কোন রকম চলাও যায় না। তাই জিনিষ পত্রে দাম না কমলে আমরা যামু কই ?
একটি প্রাইভেট কোম্পানীর অফিস পিয়ন পদে চাকরি করেন আজাদ। তিনি বলেন, জিনিস পত্রের দামের যেই অবস্থা সামান্য বেতনের চাকুরী চোখে মুখে জুনি দেখি। কারো কাছে চাইতেও পারি না। কি যে করমু কোন উপায় দেখছি না। জিনিস পত্রের দাম না কমলে আমাদের মরণ ছাড়া আর কোন উপায় নাই’।
আসলে সবাই একই কথা বলছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম না কমলে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের পথ একটাই সেটা হলো নিত্যপণ্যের দাম কমানো। মানুষের আয় বাড়ানো সম্ভব নয়। বরং যতোই দিন যাচ্ছে মানুষের আয় কমে আসছে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।
স্টাফ রিপোর্টার