এস আর শাহ আলম: জেলেদের চাউল গেলো মাহফিলে। খোদ চেয়ারম্যান নিজেই দিয়েছেন বললেন মেম্বার। তাছাড়া জেলেদের চাউল কম দেবার অভিযোগ ও পাওয়া গেছে। চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার ২নং দক্ষিণ নায়ের গাও ইউনিয়নে এমন ঘটনা ঘটেছে। সোমবার ১৪ মার্চ সরজমিন গিয়ে জানাযায়, সকাল থেকে ওই ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত ৯৩৫ জন জেলে হলেও ৭০ জন জেলে মৃত ও প্রবাসি হিসেবে তালিকার চাউল পায়নি। ফলে ৮৬৫ জন জেলেদের দুই বারের ৪০ কেজি করে ৮০ কেজি চাউল বরাদ্ব করা হয়। সেখানে জেলেদের ৮০ কেজি বুঝিয়ে দিতে ৩০ কেজি করে দুইটি বস্তা ও খোলা ২০ কেজি দেয়ার কথা থাকে। সেখানে সকাল বেলায় ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার রাব্বানী উপস্থিতি থেকে জনপ্রতি জেলেদের দুই বস্তায় ৬০ কেজি দিয়ে পাঠিয়ে দেন। এতেকরে উপস্থিত কিছু জেলে প্রতিবাদ করলে, বিষয়টি মতলব নির্বাহী কর্মকর্তাসহ থানার অফিসার ইনচার্জ পর্যন্ত চলে যায়। পরে চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মৃধা (মামুন) আমাদের বিষয়টি নিশ্চিত করে পূণরায় জেলেদের বাকি চাউল বুঝিয়ে দেন বলে তিনি জানান। অপর দিকে আমাদের উপস্থিতিতে, মোঃ কাউসার পিতা মনসুর আলী, টেমাই গ্রাম ৭নং ওয়ার্ড তার সাথে আরো দুইজন বলেন, আমাদের তিনজনকে মোঃ শাহ আলম মেম্বার ৩০ কেজি ওজনের ৭ বস্তা চাল দিয়েছে বাকি ১ বস্তা দেয় নাই। তাৎক্ষণিক আমাদের এই প্রতিবেদক চেয়ারম্যানকে অবগত করলে তিনি আরেক বস্তা চাল দেবার নির্দেশ দেন মেম্বারকে। তবে আমাদের উপস্থিতিকালীণ সময়ে মেম্বার চাল না দিয়ে পরে দেবার কথা বলে। চাউল কম দেবার হট্টগোল শুনে মতলব থানার এস আই রুহুল আমিন ঘটনা স্থল পৌঁছার আগেই ৮নং ওয়ার্ড মেম্বারসহ জেলেরা চলে যান। এদিকে ৩০ কেজি চাউলের বস্তায় ২-৩ কেজি করে কম আছে বলে আমাদের কয়েকজন জেলেরা জানান। বিস্তারিত বিষয়ে চেয়ারম্যান মামুনের সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, সব সময় ৮নং ওয়ার্ডের জেলেরা ঝামেলা করে, তবে মেম্বার ভুল বশতঃ চাউল কম দিলেও আমি সকলকে ডেকে চাউল দিয়েছি।
তবে লক্ষ্য করা যায়, দুই বস্তায় ৪-৬ কেজি চাল কম হয়, তার সাথে খোলা ২০ কেজির পরিবর্তে ১৭-১৮ কেজি দেবার কারণে আরো ২-৩ কেজি কম হয়। সব মিলিয়ে একজন জেলে ৮০ কেজি চাউলের পরিবর্তে ৭২-৭৪ কেজি চাল পাচ্ছে। এই কম চাউলের বিষয়ে চেয়ারম্যানরা ঘাটতিসহ বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে নিজেদের দায় মুক্ত হবার কথা বললেও প্রকৃতভাবে সরকার মাথা পিছু জেলেদের ৪০ কেজি চাল বরাদ্দ করেন। সেই আলোকে ইউপি চেয়ারম্যানরা কেজি হিসেবে সিএসডি গোডাউন থেকে তালিকার সংখ্যার হিসেবে বস্তা গাড়িতে মজুত করে স্কেল দিয়ে মেপে আনেন। তাতে দেখা যায় জনপ্রতি বস্তার হিসেবে বাড়তি কয়েক’শ কেজির চাউলের বস্তা আসে। অথচ জেলেরা বস্তার হিসেবে তারা চাউল পায়, ১টি বস্তায় যদি ২-৩ কেজি কম হয়। তাহলে আরেকটি বস্তার চাল দিয়ে তাহা সরকার পূরণ করে দেয়। অথচ ইউপি সদস্যরা হতদরিদ্র ও জেলেদের চাল লটেপুটে খাচ্ছে। তা খোদ কর্মকর্তাগণরা নজর দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না বলে অভিযোগ অনেকের। কারণ নিজেদের এই দায় থেকে মুক্ত রাখতে অভিযোগকারীদের লিখিত অভিযোগ পেতে চান। আর লিখিত কোন অভিযোগ না থাকার কারনে কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন না।
জেলেদের চাউল গেল মাহফিলে
এবার দেখা গেল জেলেদের চাউল গেল মাহফিলে ৫০ কেজির একটি বস্তা অটোমিশুকে করে শাহ আলম মেম্বার নিজেই ছুটছেন। আমরা রাস্তা গতিরোধ করে অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে মেম্বারকে আপনি কি জেলে চাউল নিয়ে কোথায় যান ? বললে তিনি বলেন, আমার গ্রামে দরবার শরিফে মাহফিল হবে তাই চেয়ারম্যান সাহেব দিয়েছে। আমরা যখন চেয়ারম্যানের অফিসে ছিলাম তিনি তখন ফোনে বার বার বলেছেন মাহফিলের জন ৫০ কেজি চাল দিয়ে দেন।
আসলে একজন জনপ্রতিনিধি যদি মসজিদ বা মাদ্রাসার মাহফিলে কিছু শরিক হন তাহলে নিজের টাকায় তাহা কিনে দিতে হবে। তিনি তা না করে জেলেদের চাউল থেকে ৫০ কেজি চাউল দিয়ে নিজেই শরিক হলেন। এটা কি আইনের বহির্ভুত বিষয় নয় ? এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের।
মূলত বিষয় হচ্ছে প্রকৃত জেলেরা সরকারি সুবিধা থেকে এইসব সেবকদের কারনে সরকারি ত্রাণ থেকেও মাইনাস হবার পথে। সরকার মানুষের ন্যায্য অধিকার দিয়ে হতদরিদ্র পরিবারসহ জেলে পরিবারের মুখে আহার তুলে দিচ্ছেন। সেখানে সেই আহার কাদের পকেটে বা পেটের ভেতরে চলে যাচ্ছে। তা সঠিকভাবে খতিয়ে দেখা দরকার বলে জেলেরা দাবি করেন।