গত ৩০ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে আয়োজিত বৈঠকে ‘নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’ কর্মসূচি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। নীতিগতভাবে সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত করার কিছু নেই। কেননা, করোনার মতো ভয়ংকর মহামারি প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন বা টিকার বিকল্প কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। কিন্তু সমস্যা হলো ‘নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার জন্য যে সামর্থ্য প্রয়োজন, তা আমাদের আছে কি না।
করোনা সংক্রমণের শুরুতে সরকার ঘোষণা করেছিল, জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকা কর্মসূচির আওতায় আনা হবে এবং সে জন্য অন্তত ২৬ কোটি ডোজ টিকা দিতে হবে। এই হিসাব করা হয়েছিল ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী নাগরিকদের কথা মাথায় রেখে। পরবর্তীকালে সরকার ১৮ বছরের নিচের শিক্ষার্থীদেরও টিকার আওতায় এনেছে। সে ক্ষেত্রে টিকার প্রয়োজন হবে আরও অনেক বেশি।
মন্ত্রীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী এ পর্যন্ত ১০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে; যার মধ্যে ৬ কোটি পেয়েছেন প্রথম ডোজ এবং দুই ডোজ পেয়েছেন ৪ কোটি। দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন এ রকম মানুষের সংখ্যা ২২ শতাংশের বেশি হবে না। কঠিন বাস্তবতা হলো পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা টিকা সংগ্রহ করতে পারিনি। উন্নত দেশ তো বটেই, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যেও আমাদের অবস্থান নিচের দিকে। অনেক দেশ প্রতিশ্রুত টিকা সরবরাহ করেনি। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ৩ কোটি টিকা আমদানির চুক্তি হলেও তারা ৮০ লাখ ডোজের বেশি সরবরাহ করতে পারেনি।
তাই কর্মসূচি বা উদ্যোগ যত মহৎ হোক না কেন, সামর্থ্য না থাকলে কার্যকর করা যাবে না। নো মাস্ক, নো সার্ভিস কর্মসূচি তেমন ব্যয়সাপেক্ষ নয়। সহজেই এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। টিকার বাস্তবতা ভিন্ন। দেশবাসী এখনো জানে না কবে কী পরিমাণ টিকা বিদেশ থেকে আসবে। বর্তমানে দৈনিক যে পরিমাণ টিকা দেওয়া হচ্ছে, তাতে আগামী এক বছরেও ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে না।
তাই ‘নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’ কর্মসূচি চালুর আগে প্রয়োজনীয় টিকার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এটি অবাস্তব ও লোকদেখানো কর্মসূচিতে পরিণত হবে।
কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল ॥