ঈদ্ম-মেঘনা-ডাকাতিয়া আর ধনাগোদা নদীর জলধারায় বিধৌত দেশের অন্যতম প্রাচীণ জনপদ চাঁদপুর। মেঘনা কন্যা চাঁদপুরকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কেউ বলেন,‘রূপসী চাঁদপুর’ কেউ বলেন,‘ইলিশের দেশ চাঁদপুর’। সরকারি ব্র্যান্ডিং নাম ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’।
চাঁদপুরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে হাজার হাজার প্রত্নসম্পদ। মেহের কালীবাড়ি, হযরত শাহরাস্তি ও তার দরগা,পঞ্চদশ শতকের পর্তুগীজ দুর্গ, একটি মোঘল গ্রাম অলিপুর ও দুটি মসজিদ-স্থাপত্য শৈলীর অনুপম নিদর্শন, লোহাগড়া মঠ, সাহেবগঞ্জ নীল কুঠির, হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ, মৎস গবেষণা কেন্দ্র, পদ্মা-মেঘনা মিলনস্থল, শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির, মনষামুড়া, সাহার পাড়ের দিঘি, উজানী বখতিয়ার খা মসজিদ, নাটেশ্বর রায়ের দিঘি, কড়াইতলী জমিদার বাড়ি, সাহাপুর রাজবাড়ি, কাশিমপুর রাজবাড়ি চাঁদপুর জেলার দর্শনীয় স্থান।
এসবের কারণে বিশেষজ্ঞরা চাঁদপুরকে পর্যটনের জন্য অপার সম্ভাবনার স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করতে চান। এখানে নান্দনিক ও শৈল্পিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু এমন সম্ভাবনার কথা চাঁদপুরবাসী অনেক শুনেছে, অনেকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। বিশেষ করে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া বিধৌত চাঁদপুর শহরকে যে নান্দনিকতার ছোঁয়ায় আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায় সে আশার কথাও শুনিয়েছেন অনেকে। এসব স্বপ্ন বাস্তবে দেখার আগ্রহের দিন গুণছিল চাঁদপুরবাসী। কিন্তু সে রকম কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল না। বেসরকারিভারে কোনো বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে নি। তাই চাঁদপুরের জনগণ ভাবছিল এই শহরকে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন সম্ভবত স্বপ্নই থেকে যাবে।
এসবের মাঝে গেলো বছর চাঁদপুর পর্যটন বিকাশে একটি বেসরকারি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নিয়েছে। জাপান-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ‘ব্লু-রিভার আইল্যান্ড রিসোর্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম ক্লাব লিমিটেড’ মেঘনার চরে নান্দনিক ও শৈল্পিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলবে। এতে ব্যয় করা হবে ৬ হাজার কোটি টাকা। আর এর জন্য উপযোগী জায়গা হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে চাঁদপুর সদর উপজেলার কল্যাণপুর ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দাসাদী সংলগ্ন মেঘনা নদীর তিনটি চরকে। শহর থেকে এটির অবস্থান হচ্ছে- বড় স্টেশন মোলহেড থেকে তিন কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে।
কিন্তু করোনার কারণে এটি আর এগিয়ে যায়নি। আশা করি পর্যটন সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চাঁদপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পর্যটন নগরী চাঁদপুর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসবে এমনটিই প্রত্যাশা।
কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল