ফরিদগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে ৬ পরিবারের স্বপ্ন ছাই

আনিছুর রহমান সুজন, জসিম উদ্দিন

ফরিদগঞ্জের গুপ্তি পশ্চিম ইউনিয়নের হাটখোলা বাড়ির ৬টি পরিবারের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে। শুধু সংসারের আসবাবপত্রই ছাঁই হয়নি, ছাঁই হয়ে গেছে তিলে তিলে করে গড়ে তোলা স্বপ্নময় ভবিষ্যৎ। শুধুমাত্র শরীরে থাকা কাপড় ছাড়া আর কিছুই রক্ষা করতে পারলো না পরিবারগুলো। পুড়েছে ঘর ভেঙ্গেছে স্বপ্ন। আর কিছুই বাকী রইলোনা। বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে ৬টি পরিবারকে।

ঘটনাটি ঘটেছে ১৫ জানুয়ারি রবিবার দিবাগত গভীর রাতে। উপজেলার গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের হুগলি হাটখোলা বাড়ির ৬টি পরিবারের ছোট-বড় ১২টি ঘর নিমেশেই পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। অগ্নিকান্ডের সংবাদ শুনে ১৬ জানুয়ারী বিকেল ৫টায় একদল সংবাদকর্মী ঘটনাস্থল গিলে তথ্য সংগ্রহ করেন।

অগ্নিকান্ডে সিরাজুল ইসলাম, আব্দুল মজিদ, উসমান গাজী, মোবারক, শফিকুর রহমান ও মাঈন উদ্দিনের ঘরগুলো পুড়ে যায়। এর মধ্যে শফিকুর রহমানের ৩৫ ভরি স্বর্ণ, নগদ ২০ লাখ টাকা, উসমানের ৫ লাখ টাকাসহ সকল পরিবারের ঘর, আসবাবপত্র, নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

হাটখোলা বাড়িতে প্রায় ২০০টি ঘর রয়েছে। সবগুলো ঘরই একটার সাথে আরেকটা লাগানো। অল্পের জন্যে বেঁচে গেছে পুরো বাড়ি। নিকট অতিতে এমন ঘটনা ঘটেনি। ভয়াবহ এই ঘটনা দেখতে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা লেগেই ছিলো। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে শান্তনা দিতে এবং আগুনের ভয়াবহত দেখতে আসা মানুষের ভিড় লেগেই আছে।

স্থানীয়রা জানান, যখন অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে তখন বাড়ির সকল লোকজন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলো। আগুনের লেলিহান তাপে ও চিৎকারে আমাদের ঘুম ভাঙ্গলে আমরা এসে দেখি আগুনে সব নিঃশেষ হয়ে গেছে। আগুন লাগার পরপরই মুহূর্তের মধ্যেই আগুনের লেলিহান শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে একই সারিতে থাকা ছোট বড় ১২ টি ঘর পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়। বাড়ির লোকজন ও ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দীর্ঘ চেষ্টায় চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেত সক্ষম হলেও ততক্ষণে সব কিছুই পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়।

কি ভাবে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে যানতে চাইলে বাড়ির লোকন ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন জানান, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। অগ্নিকান্ডে কত টাকার ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে জানান, প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের দাবি, এই অগ্নিকান্ডে তাদের প্রায় কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে।

গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শরীফ গাজী জানান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তিনি ঘরের মালিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারি ও স্থানিয়দের সহায়তা দাবী করেন।

গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বুলবুল আহাম্মেদ জানান, অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়েছি এবং ফায়ার সার্ভিস ও এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই ছোট বড় ১২টি ঘর পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়।

ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন লিডার বিল্লাল হোসেন বলেন, অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে আড়াই ঘন্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি এবং বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে ধারণা করা যাচ্ছে ।

উপজেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা শুনেও ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ঘটনাস্থলে না গিয়ে তার প্রতিনিধিকে পাঠান। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন- সংবাদ শুনে রাতেই কর্তব্যরত পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এতো বড় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেও এই সংবাদ লিখা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলিমুন নেছা বলেন- অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি শুনেছি। ফায়ার সার্ভিস আগুণ নিয়ন্ত্রনে এনেছে। চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছি ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করার জন্য। বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসক স্যারকেও অবগত করেছি। তবে জেলায় আমার একটি মিটিং থাকায় ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *