জসিম উদ্দিন
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে মান্দাতা আমলের ঐতিহ্য হাতে ভাজা দেশি মুড়ি উপজেলা থেকে বিলুপ্তির পথে। যান্ত্রিক ব্যবস্থার যাতাকলে আর কালের বিবর্তনে হাতে ভাজা মুড়ি শিল্পটি আজ আর গ্রামের পাড়া মহল্লায় দেখা যায় না। মাহে রমজানে মুড়ি ছাড়া ইফতার যেন অকল্পনীয়। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে নানান খাবারের সঙ্গে এখনও ওতপ্রতভাবে মিশে আছে মুড়ির কদর। হাতে ভাজা মুড়ির স্থান দখল করে নিয়েছে কারখানার মেশিনের তৈরি মুড়ি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বর্তমানে হাতে ভাজা এই মুড়ির বাজার পুরোপুরি আধুনিক কল-কারখানার দখলে। তাই আর গ্রাম্য অঞ্চলে মানুষের কাছে মুড়ির কদর থাকলেও হাতে ভাজা মুড়ি মেলে না। শহরের সীমানা ছাড়িয়ে পল্লী গাঁয়ের পরিবার-বাড়িতেও কারখানার মুড়ির দখল। অথচ আগেকার দিনে গ্রামের ছোট-বড় যে কোনো পরিবারে সারা বছরই হাতে ভাজা মুড়ি পাওয়া যেত।
বিভিন্ন কোম্পানিগুলোও মুড়ি তৈরি করে শহর থেকে শুরু করে গ্রাম অঞ্চলের ছোটখাটো দোকানগুলোতে পৌঁচ্ছে দিচ্ছে। ফলে এ শিল্পটি আজ একেবারে হারানোর পথে।
উপজেলার শহিদ সৈয়দ নগর গ্রামের আরজুদা বেগম বলেন, মুড়ি ভাজাও একটি শিল্প। সহজ মনে হলেও এর কৌশল আছে। সবার হাতে মুড়ি ভালো হয় না। ভাতের চাল আর মুড়ির চাল এক রকম হলে হয় না। ধান সংগ্রহ করে প্রথমে আধাসিদ্ধ তারপর পুরোপুরি সিদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে তা দিয়ে মুড়ির চাল তৈরি করা হয়। এরপর সেই চাল থেকে তৈরি হয় হাতে ভাজা দেশি মুড়ি। হাতে ভাজা মুড়ি সু-স্বাদু ও স্বাস্থ্য সম্মত। তবে এখনও এর চাহিদা থাকলেও পাওয়া যায় না। তাই গ্রামের মানুষও মুড়ির দরকার হলে দোকান থেকে এক প্যাকেট কিনে এনে চাহিদা পূরণ করেন।
একই গ্রামের সাজুদা বেগম বলেন, কারখানার মুড়ির চেয়ে আমাদের তৈরি মুড়ি হাতে ভাজা একটু কষ্ট বেশি, সময় লাগে বেশি। দামও একটু বেশি। আর কোম্পানির মুড়িতে রাসায়নিক দ্রবাদি ব্যবহার করা হয়। অনেক কারখানায় আবার ইউরিয়া সারের পানি মুড়িতে মিশ্রিত করার কারণে সাদা, হালকা ও চকচকে মনে হয়।
এ বিষয়ে কাঁশারা গ্রামের আবুল কালাম,লিটন সরদার,মিন্টু তারা বলেন, এখন আধুনিক যুগ, মানুষ এতো ঝামেলা কষ্ট করতে চায় না। গ্রামের যেকোনো মুদি দোকানে গেলেই কারখানার তৈরি মুড়ির প্যাকেট পাওয়া যায়। যার কারণে হাতে ভাজা মুড়ির ঐতিহ্য আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছে। তবে তারা আক্ষেপ করে বলেন, আধুনিক যুগের থেকে আমাদের মান্দাতা আমলের অনেক কিছুই এখনও সবদিকদিয়েই ভালো। যেমন তার মধ্যে হাতে ভাজা মুড়ি।
এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা ফরিদগঞ্জ উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও নিরাপদ সড়ক চাই ফরিদগঞ্জ উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য ও স্বাদের বিবেচনা করে এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে ক্রেতা সাধারণের উচিত সু-স্বাদু এই হাতে ভাজা দেশি মুড়ির স্বাদ নেওয়া।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্ডেন অ্যাসসিয়েশন ফরিদগঞ্জ উপজেলা কমিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, এ চিরচেনা ঐতিহ্য আমাদের মাঝ থেকে প্রায় বিলুপ্তির পথে। এ দৃশ্য হাতেগোনা কিছু পরিবারের ব্যক্তিগত ছাড়া চোখে পড়ে না। এটা এক ধরনের শিল্প। কিন্তু আমাদের এই পুরনো ঐতিহ্য আর শিল্পটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে হাতে ভাজা মুড়ির সঙ্গে বর্তমানে কারখানায় তৈরি বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট মুড়ির তুলনা চলে না। সবদিক দিয়ে বিবেচনা করলে দেখা যাবে হাতে ভাজা মুড়ি অতুলনীয়।