ফরিদগঞ্জে বিলুপ্তপ্রায় লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষ

জসিম উদ্দিন : চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বাঙালি জাতির হাজার বছরের লালন করা গরুর হাল চাষ এখন আর চোখে পড়ে না। প্রান্তিক চাষিরা জমিতে বীজ বপন অথবা চারা রোপনের জন্য জমির মাটি চাষের ক্ষেত্রে গরুর হাল ব্যবহার করত। আর ওই মাটি মাড়িয়ে সমান করার জন্য মই ব্যবহার করা হতো। এভাবে কৃষি জমি আবাদের উপযোগী করে তোলার জন্য ষাঁড় ও মহিষের প্রয়োজন হতো। লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষ করতে প্রয়োজন একজন লোক (কৃষক) ও এক জোড়া গরু অথবা মহিষ। কিন্তু এখন আর দেখা যায় না মানুষের কাঁধে লাঙ্গল-জোয়াল, হাতে এক জোড়া গরুর দড়ি। এক সময় গ্রামবাংলায় গরু দিয়ে হাল চাষ ছিল স্বাভাবিক চিত্র। অথচ আধুনিক কৃষি যন্ত্রের আধিপত্যের ফলে ঐতিহ্যবাহী গরু দিয়ে হাল চাষ এখন বিলুপ্তির পথে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ এটি বিলুপ্তির পথে। বর্তমান যন্ত্রনির্ভর এই যুগের কৃষকরাও ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষাবাদ করে ফসল উৎপাদন করেন। অথচ দুই-তিন যুগ আগেও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে কৃষকরা গরু পালন করত হাল চাষ করার জন্য। আবার কিছু মানুষ গবাদিপশু দিয়ে হাল চাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
উপজেলার বালীথুবা পূর্ব ইউনিয়নের সানকি সাইর গ্রামের কৃষক মোঃ মোশারফ হোসেন ও সিরাজুল ইসলাম জানান, তাদের বাড়িতে এক সময় হাল চাষ হতো গরুর হাল দিয়ে। তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে ৩ থেকে ৪ জোড়া গরুর হাল ছিল। এ ছাড়াও আগে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গরু লালন-পালন করা হতো।
গরুগুলো যেন পরিবারের একেকটা সদস্যের মতো। তাদের দিয়ে একরের পর একর জমি চাষ করার কাজে ব্যবহার করা হতো। তাজা ঘাস আর ভাতের মাড়, খৈল-ভুসি ইত্যাদি খাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করে তোলা হালের জোড়া বলদ দিয়ে জমি চষে বেড়াতেন কৃষক। দেশে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ গরু ও মহিষের হাল বিলুপ্তির পথে।
বালীথুবা পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, আগে হাল চাষের মৌসুমে হাল চাষিদের তাদের কদর ছিল অনেক। কাকডাকা ভোরে মাঠের জমিতে হাল চাষ করার জন্য গরু, লাঙল, জোয়াল নিয়ে বেরিয়ে যেত কৃষকরা।
এ ব্যাপারে সাংবাদিক জসিম উদ্দিন (যুবরাজ) জানান,এক সময় গরু দিয়ে হাল চাষ আমাদের দেশের গ্রাম – অঞ্চলের একটা ঐতিহ্য বহন করে থাকতো। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারের ফলে কৃষিক্ষেত্রে অনেক সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে জমি চাষ করতে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার ব্যবহার হচ্ছে। যদিও কৃষি যন্ত্র দিয়ে স্বল্প সময়ে একের পর এক জমি হাল চাষ করা যায়। কিন্তু বিভিন্ন বাধাগ্রস্ততার কারণে অনেক জমিতে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। ফলে কৃষকের ফসলীজমি থেকেও অনেক জমিতে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রবীন অয়েকজন কৃষক জানান , আগে কৃষকরা গরু এবং নাঙ্গল-জুমান নিয়ে যেকোন স্থানে গিয়ে কৃষি জমি হাল চাষ করে ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম হতো। কিন্তু এখন পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর দিয়ে যেখানে সেখানে গিয়ে জমিতে হাল চাষ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না কারণ কৃষি জমি ভরাট করে অনেকেই বিভিন্ন ফসলের মাঠে বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস করছে। আধুনিক কৃষি যন্ত্র বা ট্রাক্টর সব জায়গায় নেওয়া যাচ্ছে না ।ফলে অনেক কৃষি জমি এখন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। সরকারিভাবে যদি উদ্যোগ নিয়ে কৃষকদের গরু দিয়ে হাল চাষ করার জন্য আবারো উদ্বুদ্ধ করা হতো। মনে হয় কৃষি উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পেত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *