ফরিদগঞ্জে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা : বিপন্ন জনজীবন

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি

একদিকে স্কুল, মাদ্রাসা আর বাজার। অন্যদিকে ঘন বসতিপূর্ণ লোকালয়। আর উভয়ের মাঝে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে মাহবুব চেয়ারম্যান ইটভাটা। ফলে দীর্ঘ বছর ধরে চলতে থাকা ইটভাটার দূষিত ধোঁয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনিক পদক্ষেপও রুখতে পারেনি ইটভাটাটিকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাহবুব চেয়ারম্যান ইটভাটার অবস্থান উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নে। এর মাত্র ৩০ গজের ভেতরে গাজীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাজীপুর মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়, গাজীপুর আহমদিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসায় প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী পড়া-শুনা করে এবং গাজীপুর বাজারের অবস্থান। আর লোকালয়ের গর্ভে থাকা ভাটাটিকে তিন দিক থেকে ঘিরে আছে বসত বাড়ি। ভাটায় নিয়মিত গাছের গুড়ি, তেলের গাদ, গার্মেন্টসের ঝুট আর ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারের ফলে তীব্র বায়ুদূষণের কবলে পড়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ। বায়ুদূষণজনিত রোগের প্রকোপ ব্যাপক হারে বেড়েই চলেছে। ভাটার দূষণের ফলে তিন পুরুষের ভিটায় বসবাস করা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ।
অন্যদিকে ইট তৈরীতে ফসলি জমির টপ সয়েল ব্যবহার করার কারণে সংশ্লিষ্ট জমির উর্বরতা কমে গিয়ে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে এবং ভাটা সংশ্লিষ্ট জমিগুলো দূষণের কবলে পড়ে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। সর্বোপরি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধ ইটভাটাটি ফসলি জমি বিনাশ করে গড়ে তোলা হয়েছে। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৯ এর আওতায় ভাটাটিকে অর্ধ-লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার পরেও রাষ্ট্রীয় আইনকে বৃদ্ধাগুলি প্রদর্শন করে ভাটা পরিচালনায় অনিয়ম অব্যাহত রেখেছে মালিকপক্ষ।
এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তির পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে ৯৫ থেকে ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনি। কাঠ পোড়ানো ও স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি ব্যবহার করায় ইটভাটাগুলোতে নির্গত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে কালো ধোঁয়া। এতে জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
ওই এলাকার সাধারণ মানুষ বলেন, লোকালয়ে এই ইট ভাটা হওয়ার কারনে পরিবেশের চরম ক্ষতি হচ্ছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি হওয়ায় ধোঁয়া, ধুলাবালির কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিনিয়ত সর্দি কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ জানান, একাধিকবার প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের দারস্থ হয়েও কোন প্রতিকার পাইনি। অবিলম্বে আমরা ব্রিক ফিল্ডটি বন্ধের জোর দাবী জানাচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশ্রাফ আহাম্মেদ চৌধুরী বলেন, ইটভাটা সৃষ্ট দূষণে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত নানা রোগ দেখা দিতে পারে এবং ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ইটভাটাসৃষ্ট দূষণ পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি উৎপাদন ও ফলমূলের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত এবং গাছপালার স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাঁধাগ্রস্ত করছে।
এ বিষয়ে ইট ভাটার পরিচালক মাওলানা দেলোয়ার হোসেনের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহ-পরিচালক আব্দুল হান্নান বলেন, আমরা উল্লেখিত ব্রিক ফিল্ডের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলি হরি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ওই ব্রিক ফিল্ডকে কাঠ, জুট এবং তেলেরগাদ পোড়ানোর দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। তিনি আরো বলেন, আমরা উক্ত ব্রিকফিল্ডের বিরুদ্ধে পূনঃরায় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *