বোনকে হত্যার ১৮ বছর পর ফরিদগঞ্জে ছেলের হাতে মা খুন

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৮ বছর পুর্বে বাড়ির সর্ম্পকে চাচাতো রূপবানুকে ঘরের সামনে কুপিয়ে হত্যা করে মমিন দেওয়ান। ওই মামলা থেকে জামিনে বরে করে আনতে যেই কষ্ট করেছেন সেই জন্মদাত্রী মাকে একই কায়দায় ১৮ বছর পর বুধবার (২৭ অক্টোবর) ভোরে কুপিয়ে হত্যা করলো ঘাতক ছেলে।

তবে ঘাতক মমিন গাজী তার হাতে নিহত মা মনোয়ারা বেগমকে নিজের মা বলে স্বীকার করেন না। তার মতে তার মা আরো আগে মারা গেছেন। এই মহিলা তার রূপ ধরে তার সাতে ছলনা করছেন। যদিও স্থানীয় লোকজন নিশ্চিত করেছেন কিছুটা মানসিক বিকারগ্রস্থ বা উগ্র স্বভাবের কারণে সে তার মায়ের সসম্পর্কে একথা বলেছে। না হলে খুন করে সে খুন করা দা টি ধুয়ে এবং জামাকাপড় পাল্টে নির্বিঘ্ন পালিয়ে যায় কিভাবে। ঘাতক মমিন দেওয়ান ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার পশ্চিম বড়ালি গ্রামের মরহুম আব্দুল হাশেম দেওয়ানের ছেলে।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সুত্র জানায়, মমিন দেওয়ান তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০০৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি একই বাড়ির রূপবানু বেগম নামে চাচাতো বোন কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর সে পালিয়ে সৌদি আরবে চলে যায়। পরে ২০১১ সালে সে দেশে ফিরে আসলে পুলিশ তাকে আটক করে।

জেলে থাকা অবস্থাই রূপবান হত্যা মামলার বাদী রূপবানুর বোন সুফিয়া বেগমের সাথে মমিন দেওয়ানের মা মনোয়ারা বেগমসহ অন্যরা যোগাযোগ করে মামলাটিকে আপস যোগ্য করতে চেষ্টা করেন। এরই এক পর্যায়ে বাদী আপত্তি না থাকায় তিন বছর জেল ভোগের পর মা মনোয়ারা বেগমের সহযোগিতায় জামিনে বেরিয়ে আসে মমিন। এরপর ২০১৪ সালে পৌর এলাকার চরকুমিরা গ্রামে রাবেয়া বেগমকে বিয়ে করে সে। তাদের ঘরে আছিয়া আক্তার নামে ৬ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। কিন্তু স্বামীর উগ্র স্বভাব ও মারমুখি আচরণের কারণে স্ত্রী রাবেয়া বেগমও স্বামীর বাড়ী ছেড়ে বাপের বাড়িতে চলে যায়।

এর পর হত্যা মামলা চলাকালে আদালতে নিয়মিত হাজিরা না দেওয়ায় , তার বিরুদ্ধে আবারো ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়। ফলে ২০১৭ সালে সে আবারো জেল হাজতে যায়। এছাড়া জামিনে এসে সে এলাকার বিভিন্ন মানুষকে হুমকি ধমকি দিতো। ফলে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসীও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করে। পরে চলতি বছরের জুন মাসে সে সর্বশেষ জামিনে বেরিয়ে আসে। জামিনে এসেও মমিন তার মা মনোয়ারা বেগমকে ও তার এক ভাগ্নিকে হত্যার হুমকি দিতো, বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মমিনের ভাগ্নে আশিক।

বুধবার (২৭ অক্টোবর ) দুপুরে হত্যাকান্ডে ঘটনা নিয়ে প্রেসব্রিফিং কালে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো: শহিদ হোসেন জানান, আজকাল মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নানা বিতর্কিত কাজে ব্যবহার করে, কিন্তু মাকে হত্যকারী ছেলে মমিন দেওয়ানকে ধরতে পুলিশী অভিযানের সাথে সাথে মানুষের সহযোগিতা নিতে ফেসবুক ব্যবহার করি। ফলে ঘটনা ঘটার মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যেই তাকে আটক করতে সক্ষম হই। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে জানান, মমিন তার মা সর্ম্পকে অসংলগ্ন কথা বলেছেন। তবে সে হত্যার কথা স্বীকার করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা দেন। এতে বোঝা যায়, সে পুরোপুরি মানসিক রোগী নয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ জানায়ং, ঘটনার সময় পাশের ঘরে মমিন দেওয়ানের ভাবী পান্না বেগম ছিলেন। তিনি তার শাশুড়ি মনোয়ারা বেগমকে ছেলে মমিন দেওয়ানের কাছে তাকে না মারার জন্য আকুতি করতে শুনেছেন। একই সাথে মায়ের আত্মচিৎকার শুনলেও মমিন দেওয়ান মেরে ফেলার ভয় দেখানোয় তিনি সাহস করে আর বেরুতে পারেন নি।

উল্লেখ্য, ফরিদগঞ্জে গর্ভধারিণী মা মনোয়ারা বেগম(৬৫) কে কুপিয়ে হত্যা করেছে ছেলে মমিন দেওয়ান (৪২) । ঘটনার পরপরই সে পালিয়ে গেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যাকারীর ছবি দেখে লোকজনের সহযোগিতায় ঘাতককে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ঘটনাটি পৌর এলাকার পশ্চিম বড়ালি গ্রামে বুধবার(২৭ অক্টোবর) ভোরে ঘটে। পুলিশ নিহত মনোয়ারা বেগম(৬৫) এর লাশ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেমের জন্য চাঁদপুর পাঠিয়েছে। এব্যাপারে নিহত মনোয়ারা বেগমের বড়ভাই রুহুল আমিন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে। ঘাতক মমিন ২০০৩ সালের রূপবানু নামে তার এক চাচাতো বোনকে একই ভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।

স্টাফ রিপোর্টার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *