সারাদেশে খালি বিসিকের ৯১৩ শিল্পপ্লট

উদ্যোক্তাদের শিল্পায়নে আগ্রহী করতে সারাদেশে প্লট বরাদ্দ দেয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকায় এসব শিল্পপ্লট পেতে মুখিয়ে থাকেন শিল্পোদ্যোক্তারা। দেশজুড়ে বিসিকের ১০ হাজারের বেশি প্লটে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এই মুহূর্তে খালি রয়েছে ৯১৩টি প্লট। দাম বেশি হওয়ায় এখন উদ্যোক্তারা কিছুটা বিমুখ বলে জানা যায়।

৩৬২টি প্লট খালি রয়েছে নতুন গড়ে ওঠা মুন্সিগঞ্জের বিশেষায়িত বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদন ও হালকা প্রকৌশল শিল্পনগরীতে, যা এখন বরাদ্দযোগ্য।

বিসিক সূত্রে জানা যায়, মোট খালি প্লটের বাকিগুলো বিভিন্ন জেলার বিসিক শিল্পনগরী এলাকায়। এর মধ্যে গোপালগঞ্জে ১৩৮টি, মৌলভীবাজারে ১২১টি, চুয়াডাঙ্গায়, ৭৮টি, বরগুনায় ৬০টি, মাদারীপুরে ৪৫টি, ঝালকাঠিতে ৩৯টি, খাগড়াছড়িতে ৩৩টি, সুনামগঞ্জে ১০টি, লালমনিরহাটে ৯টি, ভোলায় ছয়টি, মেহেরপুরে ছয়টি, পটুয়াখালীতে চারটি এবং কুমিল্লায় দুটি প্লট রয়েছে।

দেশের বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদন ও হালকা প্রকৌশল খাত স্থানান্তর হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের বিশেষায়িত শিল্পনগরীতে। সেখানকার ৩৬২টি প্লটের সবগুলোই এখন খালি। চলতি বছরের মাঝামাঝি প্রকল্পটির অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। এখানে দুই থেকে তিন শতাধিক শিল্প-কারখানা স্থাপন করা সম্ভব।

প্রকল্পটি শেষ হতে চললেও জমির দামের কারণে প্লট বরাদ্দ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না শিল্পোদ্যোক্তারা। তাদের মতে, জমি অধিগ্রহণের পর ভৌতকাজ সম্পন্নসহ যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তা প্রচলিত দামের চেয়ে অনেক বেশি। তারা এখন বলছেন, যৌক্তিক মূল্যে প্লট না পেলে শিল্প স্থাপন করা সম্ভব নয়।

কয়েক দশক আগেও দেশের বিসিক শিল্পনগরীতে ফাঁকা পড়ে থাকতো অধিকাংশ প্লট। সে অবস্থা এখন আর নেই। সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকায় এখন বিসিকের প্লটে আগ্রহ বাড়ছে। বেশিরভাগ শিল্পনগরীতেই সবগুলো প্লটে গড়ে উঠছে শিল্প-কারখানা। এর মধ্যে জেলায় জেলায় শিল্পপ্লটগুলো নতুন করে সম্প্রসারণের কারণে কিছু বরাদ্দযোগ্য প্লট থেকে যাচ্ছে।

বিসিকের সবশেষ তথ্যানুযায়ী, সারাদেশে সংস্থাটির ৭৬টি শিল্পনগরী রয়েছে। এগুলোতে প্লটের সংখ্যা ১০ হাজার ৯২২টি। এর মধ্যে ৪১২টি প্লট খালি হয়ে আটকা রয়েছে অবরাদ্দ হিসাবে। সেগুলোতে আইনিসহ বিভিন্ন জটিলতা রয়েছে। বরাদ্দ প্লটে গড়ে উঠেছে সারাদেশের ৫ হাজার ৮৮৫টি শিল্প ইউনিট। অধিকাংশ শিল্প ইউনিট একাধিক প্লট ব্যবহার করছে।

বিসিকের শিল্পনগরী ও সমন্বয় শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী নাসরিন রহিম জাগো নিউজকে বলেন, বিসিকে প্লট নিলে একজন উদ্যোক্তা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের জন্য তাকে আলাদা করে বিনিয়োগ বা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। এছাড়া বিসিকে নিরাপত্তা বেশি, ঝুঁকি কম।

বিসিকের প্লট কিস্তিতেও নেওয়া যায়। শিগগিরই বিসিকের খালি প্লটগুলো আগ্রহী শিল্প উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। এসব প্লটের মূল্য এককালীন অথবা ৫ বছরে ১০ কিস্তিতে পরিশোধ করা যায়। তবে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় জমির মোট মূল্যের ২০ শতাংশ দিতে হবে।

বিসিক বলছে, দেশের বড় বড় অনুকরণযোগ্য শিল্প বিসিকে রয়েছে। যার মধ্যে স্কয়ার, প্রাণ-আরএফএল, বিআরবি ক্যাবলস, হ্যামকো, ন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রিজ, ফরচুন সুজ, আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ, গ্লোব ইন্ডাস্ট্রিজ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া নিট ও তৈরি পোশাক শিল্পের প্রচুর কারখানা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার বিসিকে রয়েছে। পোলট্রি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের কারখানাগুলোও এখন বিসিকে হয়েছে। জামদানি ও হোসিয়ারি শিল্প ছাড়াও চামড়া, এপিআই, হালকা প্রকৌশল ও বৈদ্যুতিক পণ্য, প্লাস্টিক, মুদ্রণ, কেমিক্যাল শিল্প রয়েছে বিসিকের শিল্পনগরীগুলোতে।

জানা যায়, বর্তমানে ঢাকার আশপাশে বিসিকের প্লটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে কম পার্বত্য জেলার বিসিকগুলোতে। ফলে নরসিংদী, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জে আরও কয়েকটি শিল্পনগরীর কাজ শুরু করেছে বিসিক।

ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ের বর্তমান শিল্পনগরীর পাশে আরেকটি শিল্পপার্ক নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সবশেষ ঠাকুরগাঁও বিসিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পনগরীর চূড়ান্ত অনুমোদন মিলেছে একনেকে। এছাড়া মুন্সিগঞ্জে চলমান কেমিক্যাল পার্কের পাশে দোহার রোডে চারশ একরের আরেকটি শিল্পপার্ক, নরসিংদীর বেলাবতে চারশ একরের একটি এবং দুইশ একরের আরেকটি শিল্পনগরী হচ্ছে।

অন্যদিকে বগুড়ায় তিনশ একর, যশোরে তিনশ একর, সিরাজগঞ্জে চারশ একরের নতুন শিল্পনগরী তৈরির বিষয়টি চূড়ান্ত। পাশাপাশি রংপুর, চট্টগ্রাম ও পদ্মার পাড় শিবচরে শিল্পনগরীর জন্য জমি নিচ্ছে বিসিক। এছাড়া ভৈরবের শিল্পনগরীর কাজের জটিলতা কেটে নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ বিসিক গত ৫০ বছরে ৫৮টি শিল্পনগরী গড়ে তুলেছে। সংস্থাটির কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল মূলত ঋণদান কার্যক্রমের মাধ্যমে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি এসে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়। যার অংশ হিসেবে তৎকালীন ১৮টি জেলার প্রতিটিতে একটি করে মোট ১৮টি শিল্পনগরী স্থাপন হয়। স্বাধীনতার পর দেশে জেলার সংখ্যা বেড়ে ২০টিতে উন্নীত হলে বিসিকের শিল্পনগরীর সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়ায় ২০টিতে। আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসন করতে শিল্পায়নের ধারা অব্যাহত রেখে বর্তমানের বিসিক শিল্পনগরীর সংখ্যা ৭৬টি।

অনলাইন ডেক্স, ২৩ আগস্ট ২০২১;

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *