ঢাকা ছাড়লেন ব্রুনাইয়ের সুলতান

সফর শেষে সোমবার (১৭ অক্টোবর) ঢাকা ছেড়েছেন ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদদৌল্লাহ।

আজ সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ব্রুনেইয়ের সুলতানকে বহনকারী বিশেষ বিমান উড্ডয়ন করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্রুনাইয়ের সুলতানকে বিদায় জানান।

 

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে শনিবার দুপুরে ঢাকায় পৌঁছান সুলতান বলকিয়াহ। রাষ্ট্রপতি ব্রুনেইয়ের সুলতানকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনাও দেওয়া হয়।

বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান শেষে সুলতান সাভারে জাতীয় স্মৃতি সৌধে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়া, সেখানে একটি গাছের চারা রোপণ এবং দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষরও করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর সুলতান বঙ্গভবনের ক্রিডেনশিয়াল হলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে সুলতান রাষ্ট্রপ্রধানের রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

 

সফরের দ্বিতীয় দিন রোববার (১৬ অক্টোবর) ব্রুনেইয়ের সুলতান ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিকেলে ব্রুনাইয়ের সুলতান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে সরাসরি বিমান যোগাযোগ, জনশক্তি রপ্তানি, তরলীকৃত গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম সরবরাহসহ পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে একটি চুক্তি ও ৩টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢাকা সফররত ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা নিয়ে রোববার (১৬ অক্টোবর) রাতে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।

 

বিবৃতি বলা হয়, বাংলাদেশে জ্বালানি চাহিদা বাড়ছে। ব্রুনাই এ অঞ্চলে একটি স্থিতিশীল জ্বালানি যোগানদার। জ্বালানি খাত বিশেষ করে, এলএনজি ও অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্য বাংলাদেশে যোগানের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার ভিত্তিতে নতুন উপায় খুঁজে বের করার জন্য সম্মত হয়েছেন উভয় নেতা।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, স্বচ্ছ, নিয়মতান্ত্রিক ও সঠিকভাবে অভিবাসনের প্রক্রিয়ার বিষয়ে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষ জনশক্তি নিতে সম্মত হয়েছে ব্রুনাই। স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে, ব্রুনেইতেও স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন। সেটি বিবেচনা করে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠানোর বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করার প্রয়োজনীয়তা উভয়পক্ষ স্বীকার করেছে।

 

ব্রুনাইয়ে হালাল বাণিজ্য অনেক বেশি জনপ্রিয়, সেখানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। সেজন্য বিবৃতিতে দুই নেতা হালাল বাণিজ্যে সহযোগিতা আরও দৃঢ় করতে সম্মত হয়েছেন। উভয় পক্ষ মানসম্মত উচ্চতর শিক্ষা খাতে সহযোগিতা করবে। উভয় পক্ষ তথ্যপ্রযুক্তি, গ্রিন টেকনোলজি ও সমুদ্র অর্থনীতি খাতে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে ঐকমত্য পোষণ করেছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে ব্রুনাইকে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ব্রুনাই খাদ্য ও কৃষি খাতে বিনিয়োগে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

 

 

 

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরাতে ব্রুনাইয়ের রাজনৈতিক সমর্থনকে প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ। শান্তি ও স্থিতিশীলতার লক্ষ‌্যে এই সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে ব্রুনাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *