শীতের আগমনে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় পরিযায়ী পাখির আসতে শুরু হয়েছে। কয়েক দিন ধরে বিলে দলবদ্ধভাবে অতিথি পাখি বিচরণ করছে। প্রতি বছর এ অঞ্চলে অতিথি পাখি আসে। তবে বাঁশির সুরে পাখি শিকারসহ নানা কারণে এদের সংখ্যা কমে আসছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুধু বিলগুলোতেই নয় মেঘনা-ধনাগোদা নদী বেষ্টিত উপজেলার নদীর পাড় ও মেঘনায় জেগে ওঠা চরাঞ্চলে শীতের এই অতিথি পাখিদের বিচরণ রয়েছে। তবে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে আইনের তোয়াক্কা না করে নগদ অর্থের লোভে অভিনব কৌশলে এসব অতিথি পাখি নিধনে তৎপর হয়ে উঠেছেন শিকারিরা।
পাখি ধরতে নতুন কৌশল হিসেবে তাঁরা কাজে লাগাচ্ছেন বাঁশির সুর। শিকারের পর আকারভেদে এ সব পাখি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। আবার এক শ্রেণির মানুষ কোনো কিছু বিবেচনা না করেই এসব পাখি কিনে নিচ্ছেন কেবল বিলাসিতার জন্য। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শিকারিরা রাতের বেলায় অবাধে পাখি শিকার করে ভোরের আলো ফোটার আগেই তা বিক্রি করছে। এসব শিকারিরা রাতে জলাশয়ের পাশে ফাঁদ পেতে রেখে ধান খেতে বসে পাখির ডাকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাঁশি বাজায়। এতে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক পাখিই সেখানে উড়ে এসে শিকারির ফাঁদে পড়ে আটকে যায়।
এ ছাড়া নির্বিচারে ঝোপঝাড় উজাড়, চরাঞ্চলে ঘরবাড়ি নির্মাণ, জলজ আগাছা পরিষ্কার, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগসহ এসব অতিথি পাখি শিকার করার কারণেই এ অঞ্চলে দিনে দিনে অতিথি পাখির উপস্থিতি কমে যাচ্ছে।
জানা যায়, এসব অতিথি পাখি প্রবল তুষারপাত ও শৈত্যপ্রবাহ থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য তুলনামূলক কম শীত প্রধান হিসেবে প্রতি শীত মৌসুমেই আমাদের দেশে আসে। এ সব অতিথি পাখিদের বেশির ভাগ আসে সাইবেরিয়াসহ অধিক শীত প্রধান অঞ্চল থেকে।
অতিথি পাখির দল মতলবের চরাঞ্চল ও নদীর পাড়ে ছোট শামুক, ঘাস, শস্যদানা, ছোট মাছ আর পোকা-মাকড় খায়। আগত এসব পাখির মধ্যে বালিহাঁস, পিয়ং হাঁস, সেরিয়া হাঁস, চোখা হাঁস, কঙ্গাই হাঁস, কালকুচ, গঙ্গা কবুতর, গাঙচিল, বিলাতি শালিক উল্লেখযোগ্য।
অভিনব কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের এক শিকারি বলেন, তালপাতার
সঙ্গে স্কচটেপ জড়িয়ে মোটরসাইকেলের হাইড্রোলিক হর্নের কভারের এক মাথায় সুপারগ¬ু লাগিয়ে রাবারের সাহায্যে অভিনব এ বাঁশি তৈরি করা হয়।
এ ছাড়া শিকারিরা পাখির চলার পথে নাইলনের সুতা দিয়ে তৈরি ছোট-বড় ফাঁদ পেতে রাখে। রাতে উড়ে বেড়ানোর সময় ওই ফাঁদে আটকা পড়ে অনেক পাখি। আবার শিকারিরা চোখে আলো ফেলে, কেঁচো দিয়ে বড়শি পেতে, কোচ মেরে বা কারেন্ট জাল পেতেও পাখি শিকার করে থাকেন।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘অতিথি পাখি কখনো শিকার করা যাবে না। এ সব পাখি রাষ্ট্রীয় সম্পদ। তাই এ পাখি রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
মতলব প্রতিনিধি