মতলব দক্ষিণে বিষমুক্ত টমেটো চাষে কৃষকের হাসি

মতলব প্রতিনিধি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে ক্ষতি পুষিয়ে বিষমুক্ত টমেটো চাষ করে হাসি ফুটেছে কৃষক হারুণের মুখে। হারুণ মিয়ার বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী উত্তর ইউনিয়নের উপাদী গ্রামে। তাঁর মতো এভাবে ওই গ্রামের শতাধিক কৃষক কয়েক দফা বৃষ্টির ক্ষতি পুষিয়ে ভালো দামে বিষমুক্ত টমেটো বিক্রি করে স্বস্তি পাচ্ছেন। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে ওই টমেটো বিক্রি করে লাভের আশা গুনছেন। ধারকর্জও শোধ করছেন।

গত অক্টোবরে পৈতৃক দুই একর জমিতে টমেটোর আবাদ করেন। এরপর তিন দফা বৃষ্টিতে টমেটো গাছ, কুঁড়ি ও ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবু ভেঙে পড়েননি। নিয়মিত খেতের পরিচর্যা ও যত্নআত্মি করেন। এতে টমেটোর ফলন ভালো হয়। গত জানুয়ারি থেকে খেত ভরে যায় পাকা ও আধাপাকা টমেটোতে। বিষমুক্ত হওয়ায় বেচাবিক্রিও ভালো। প্রত্যাশিত দাম পেয়ে হারুণ ও আশপাশের চাষিদের চোখেমুখে স্বস্তির ছাপ। হলুদ হাসি।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, গত অক্টোবরে শুরু হওয়া চলতি রবি মৌসুমে উপজেলার ছয় ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২৭০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ করা হয়। টমেটোর আবাদ হয় ৫০ হেক্টর জমিতে। এবার টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়।

শুক্রবার সকালে উপজেলার উপাদী গ্রামে দেখা যায়, সেখানে রাশি রাশি টমেটোখেত। গোটা বিল জুড়েই কাঁচা-পাকা টমেটোর দাপট। পাতা ভেদ করে পাকা ও আধাপাকা হাজারো টমেটো উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। টমেটোর হাসি ছেয়ে গেছে চারপাশ। গোটা এলাকাই টমেটোময়। কিছু কৃষক পরিচর্যা করছেন টমেটোখেতের। কেউ কেউ পাকা ও আধাপাকা টমেটো তুলে বিক্রির জন্য ডালায় ভরছেন। তাঁদের চোখেমুখে স্বস্তি ও তৃপ্তির হাসি।

ওই গ্রামের কৃষক হারুণ মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগে বিদেশ থেকে ফেরেন। এরপর লেগে যান টমেটোর আবাদে। এবার কুমিল্লা থেকে চারা এনে পৈতৃক দুই একর জমিতে টমেটোর আবাদ করেন। তিন দফা বৃষ্টিতে বেশ কিছু টমেটোখেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবু হাল ছাড়েননি। খেতের পরিচর্যা চালিয়ে যান। এতে ফলও পাওয়া যায়। এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি ছাড়াও তাঁর গ্রামের শতাধিক কৃষক টমেটোর আবাদ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে গত জানুয়ারি থেকে বিক্রি শুরু করেন পাকা ও আধাপাকা টমেটো। পাইকারি ২৫ টাকা এবং খুচরা ৩০ টাকায় প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি করছেন। বিষমুক্ত হওয়ায় এবং রং ভালো থাকায় দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। পরিবহন ও শ্রমিক খরচও তুলনামূলক কম। বৃষ্টির ক্ষতি পুষিয়ে এখন লাভের আশা গুনছেন। এক হাজার মণের বেশি টমেটো উৎপাদনের আশা করছেন। সেগুলো বিক্রি করে ধারকর্জ শোধ করে পরিবারে সচ্ছলতাও আনতে পারবেন।

ওই গ্রামের কৃষক হান্নান কবিরাজ, শামীম কবিরাজ, ফোরকান মিয়াজী ও বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘টমেটোর ফলন ও রং খুব ভালা অইছে এবার। খেতে ও বাজারে নিয়া বেচতাছি। প্রতি মণ টমেটো হাজার টেয়ায় বেচতাছি। নিজেরা খাইয়া আত্মীয়স্বজনগোও দিতাছি। মনডাত খুব শান্তি লাগতাছে। মনে অয়, এইবার সব ঋণ শোধ দিতে পারুম। অভাবও ঘুচব।’

উপাদী গ্রামের দায়িত্বে থাকা উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আয়েত আলীর ভাষ্য, এবার তাঁর উপজেলায় টমেটোর আশানুরূপ ফলন হয়েছে। টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দাম ভালো হওয়ায় কৃষকেরাও লাভবান হচ্ছেন। টমেটোচাষে কৃষকদের আগ্রহও বাড়ছে এতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *