রাজশাহীতে ধর্মঘটের মধ্যেই বিএনপির সমাবেশে মানুষের ঢল

স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ আজ শনিবার। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে দুপুর ২টায় এই গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তবে চতুর্মুখী চাপের ভেতরেও কৌশলী হয়ে গণসমাবেশ সফলের চেষ্টা চালিয়েছে দলটি। পরিবহন ধর্মঘটের পর এবার সিএনজি, থ্রি হুইলার মালিকরাও ধর্মঘটের ডাক দিলেও রাজশাহীতে ঢল নামছে বিএনপি নেতাকর্মীদের।
এদিকে, লন্ডন থেকে দফায় দফায় ফোন করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পুলিশ কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো ফাঁদে পা না দিতে নির্দেশ দিয়েছেন নেতাদের। পুলিশের কড়াকড়ি, আওয়ামী লীগের সতর্কবার্তা এবং বাস ও সিএনজি ধর্মঘটের মধ্যে দলটির নেতারা রাজশাহীকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে চান।
আরও ধর্মঘট: অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে এবার নতুন করে ধর্মঘট ডাক দিল সিএনজি ও থ্রি হুইলার চালকরা। আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেন তারা তাই সব সড়কে অবাধ চলাচল ও হয়রানিমুক্ত রেজিস্ট্রেশনের দাবিতে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও থ্রি হুইলার ধর্মঘট চলছে।
পরিবহন ধর্মঘটের পর বেশি ভাড়া নিলেও সাধারণ যাত্রীদের ভরসা হয়ে উঠেছিল এই সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও থ্রি হুইলার যান। কিন্তু আজ শুক্রবার দুপুরে হঠাৎ করে তারা ধর্মঘটের ডাক দেন। ফলে পুরো রাজশাহীর যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে শহর থেকে আন্তঃজেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আর ধর্মঘটের কবকে পড়ে সাধারণ মানুষকে যারপরনাই দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
রাজশাহী সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও থ্রি হুইলার মালিক সমিতির সভাপতি আহসান হাবিব জানিয়েছেন, পরিবহন মালিকরা তাদের বিরুদ্ধে ধর্মঘট পালন করছে। আর তারা পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। কারণ সড়কে চলাচলের অধিকার তাদেরও রয়েছে। এজন্য দুই পক্ষের আন্দোলন কর্মসূচি এক হলেও দাবি ভিন্ন।
সড়ক ও নৌপথে নেতাকর্মীদের ঢল: গণসমাবেশের আগে শুক্রবার বিকেলে বাঁধাভাঙা ঢল নামে নেতাকর্মীদের। আগের দুদিন খণ্ড খণ্ডভাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা এলেও শুক্রবার ছিল জনস্রোত। বিশেষ করে বিকেলে মাদ্রাসা মাঠের আশেপাশের সড়ক হাজার হাজার নেতাকর্মীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। মুহুর্মুহু স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চারপাশ।
বগুড়া থেকে আসা নেতারা জানান, এই জেলা থেকে আট হাজার মোটরসাইকেলে এসেছেন বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা থেকেও একইভাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা এসেছেন মোটরসাইকেল, সাইকেল ও নসিমনে চড়ে। শুধু সড়কপথেই নয়, নদীপথ পাড়ি দিয়েও রাজশাহীর গণসমাবেশে যোগ দিতে এসেছেন নেতাকর্মীরা।
রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ জানান, বাঘা ও চারঘাট থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী পদ্মা পাড়ি দিয়ে গণসমাবেশের উদ্দেশে রওয়ানা হন। কিন্তু নদীপথেও নৌপুলিশ বাধা দেয়। তবে বাধা পেড়িয়ে নেতাকর্মীরা গন্তব্যে পৌঁছেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘যে জোয়ার তৈরি হয়েছে তা আর থামানো যাবে না। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা আর ঘরে ফিরবে না। ১০ ডিসেম্বরের পর আর এই সরকার ক্ষমতায় থাকবে না।’
‘আমাদের শ্রমিকের কথা তো ভাবার কেউ নাই। সবাই শুধু ব্যবহার করে। এখন হরতালও করছি। প্যাটে ভাত গেল, নাকি গেল না, সে কথা ভাবার কেউ আছে?’ পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে জানতে চাইলে এভাবেই কথাগুলো বলেন বাসের হেলপার মো. সবুজ।
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকালে রাজশাহী নগরীর শিরোইলে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বাস টার্মিনালে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।
সবুজ বলেন, ‘চলতি সপ্তাহে আজকে নিয়ে দুই দিন গাড়ি বন্ধ। আগামী ৫ তারিখে শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সভা। সেদিনও বন্ধ থাকবে। এভাবে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলে খাব কি? আর কিস্তি দিব কোত্থেকে?’
বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশের আগে ১ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহী বিভাগে চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। গত ২৬ নভেম্বর নাটোরে এক সভা করে মহাসড়ক থেকে নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করাসহ ১১টি দাবি জানায় পরিবহন মালিক সমিতি। দাবি আদায় না হলে ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ধর্মঘট শুরু হয়েছে।
যদিও বিএনপি বলছে, সমাবেশে নেতা-কর্মীদের যোগ দেওয়া ঠেকাতে সরকার এই ধর্মঘট চাপিয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে রাজশাহীর শিরোইল বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, ধর্মঘটের কারণে শ্রমিকরা এখানে-সেখানে বসে সময় কাটাচ্ছেন। কেউ গাড়ি ধোয়ামোছা করছেন। আবার কেউ বাসের ভেতরে ঘুমাচ্ছেন। কেউ কেউ তাস খেলছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *