শাহরাস্তি থানার বিদায়ী ওসি আবদুল মান্নানের আবেগঘন স্ট্যাটাস

শাহরাস্তি প্রতিনিধি চাঁদপুরের শাহরাস্তি মডেল থানার বিদায়ী ওসি মোঃ আবদুল মান্নান শাহরাস্তি থানাকে শান্তির জনপদ উল্লেখ করে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে তিনি কর্মস্থল ত্যাগ কালে এ স্ট্যাটাস দেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওসি শাহরাস্তি আইডিতে দেয়া স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন,
সম্মানিত শাহরাস্তিবাসী
আসসালামু আলাইকুম
আমি মোঃ আবদুল মান্নান, অফিসার ইনচার্জ
শাহরাস্তি মডেল থানা, চাঁদপুর।
বদলী সূত্রে আমার পরবর্তী কর্মস্থল ফরিদ্গঞ্জ থানা, চাঁদপুর।
এই আইডিতে পূর্বে বহু স্ট্যাটাস দিয়েছি কিন্তু এই আইডি থেকে নিজের বিদায়ী স্ট্যাটাস দিতে হবে এটাই চাকরি জীবনের অনিবার্য বাস্তবতা।
পূর্বেও আমি এ এলাকায় চাকরি করেছি। আপনাদের থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে আমার যোগদানের ২ বছর হয়ে গেছে, কিন্তু মনে হচ্ছে গতকালই মাত্র এসেছি।
আমি এ থানায় কাজ করতে গিয়ে শ্রদ্ধেয় অভিভাবক মহান মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টর কমান্ডার মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি গণ, সাংবাদিক ভাইয়েরা ও আপামর জনসাধারণের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি, চিরকাল আমার অন্তরে সুখস্মৃতি হিসেবে তা সংরক্ষিত থাকবে।
আল্লাহর অলী হযরত শাহরাস্তি (রঃ) এর পবিত্র স্মৃতিধন্য শাহরাস্তি থানা। আমি চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায় কাজ করেছি। আমার অভিজ্ঞতায় এ অঞ্চলের মানুষ শান্তিপ্রিয় ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ থানার মানুষের জন্য আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ রহমত এ অঞ্চলের অভিভাবক মহান মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টর কমান্ডার মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি, যিনি তাঁর প্রতিটি ফোন কল, প্রতিটি নির্দেশনায় একটি কথাই বারবার বলতেন যে, ‘মান্নান আমার এলাকার মানুষ যেন কষ্ট না পায়’। এলাকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি মানুষের যেকোন সহায়তা, এমনকি ছোটখাট আর্থিক প্রয়োজনে পর্যন্ত খোঁজ নিতেন। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত যেকোন বয়সী মানুষ একটিমাত্র ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েই স্যারের কাছ থেকে সহায়তা নিতেন।
একজন অফিসার ইনচার্জ হিসেবে কাজ করতে গিয়ে এই এলাকার অভিভাবক মাননীয় সংসদ সদস্য মহোদয়ের কাছ থেকে পিতার স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ ও পরম অভিভাবকের সহমর্মিতা পেয়েছি।
আমি এখানে ২ জন দুজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পেয়েছি একজন বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোহাম্মদ হুমায়ন রশীদ ও আরেকজন কয়েকমাস পূর্বে বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব শিরীন আক্তার। তাদের সাথে একত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। এছাড়া আমার কাজে উপজেলার বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহায়তা আজীবন স্মৃতিতে থাকবে।
এই উপজেলার সম্মানিত চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের সকল চেয়ারম্যানদের সাথে কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে সবাই একটি পরিবার। প্রিয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, আপনাদের আন্তরিকতায় এই থানা এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বিরাজমান।
এই এলাকায় কাজ করার সময় সহযোগী হিসেবে পেয়েছি একঝাঁক নিবেদিত প্রাণ সাংবাদিক ভাইকে। যাদের বিগত সময়ে এলাকার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ বা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোন উস্কানিমূলক সংবাদ পরিবেশন করতে দেখিনি।
সর্বোপরি এই এলাকার মানুষ শান্তিপ্রিয় বলেই শাহরাস্তি শান্তির জনপদ। এখানে কোন সাম্প্রদায়িক উস্কানি বা রাজনৈতিক হানাহানি নেই। এলাকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে কখনো কারো উপর গুলি তো দূরের কথা, লাঠিচার্জ পর্যন্ত করতে হয় নি। আমার আচরনে কারো মনে কোন কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আমি কখনো কারো প্রতি কঠোর হলে সেটা এই এলাকার শান্তি রক্ষার্থে হয়েছি।
এখানে কাজ করার যে চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়েছে তা প্রিয় স্মৃতি হিসেবে সাথে নিয়ে যাচ্ছি। আপনাদের সবাইকে খুব মনে পড়বে। সকলকে আবারও ধন্যবাদ এবং ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *