শিক্ষাবিদ আব্বাস উদ্দিন জেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত

স্টাফ রিপোর্টার জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষে চাঁদপুর জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রধানশিক্ষক মো.আব্বাস উদ্দিন‘শ্রেষ্ঠ প্রধানশিক্ষক’হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান,অসংখ্য শিক্ষার্থীর শিক্ষাগুরু,শিক্ষক সংগঠনের শিক্ষক নেতা,চাঁদপুরে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের নানাবিধ দাবি আদায়ের একজন অগ্রজসৈনিক এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ব্যক্তিত্ব হিসেবে চাঁদপুরে সম্যক পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি বর্তমানে চাঁদপুর জেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী গণি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক।
মহান শিক্ষকতার পাশাপাশি চাঁদপুর জেলা সদরের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে তিনি নিজকে সম্পৃক্ত করে নিজের মেধা,মননশীলতা,দক্ষতা অর্জন ও সাহিত্য গগনে বিচরণের সুযোগেও আজকের এ সফলতা আনতে সক্ষম হন।
চাঁদপুরের এ বিদগ্ধ শিক্ষাবিদ ও প্রধানমশিক্ষক ১৯৬৪ সালের ৯ জানুয়ারি মতলব উত্তর উপজেলার পশ্চিম ফতেহপুর ইউনিয়নের ফৈলাকান্দি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুর রহমান মোল্লা এবং মাতার নাম আনতেষা বেগম। তিনি তাঁর পরিবারে পাঁচ বোনের এক ভাই। মহান স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের সময় তাঁর বয়স ছিল ৬ বছর।
প্রধানশিক্ষক আব্বাস উদ্দিন ছোটবেলায় অত্যন্ত মেধাবী ও আদর্শিক ছাত্র হিসাবে পরিচিত ছিল।তিনি ১৯৭৪ সালে ফৈলাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা ও পারিবারিক ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করে নাউরী আহম্মদীয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভর্তি হন। তিনি ১৯৮০ সালে ঐ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৮২ সালে ছেঙ্গার কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৮৯ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ডিগ্রি লাভ কালে বাংলাদেশ ছাত্র লীগের একজন সক্রীয় সদস্য থাকায় তৎকালীন এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন। অত:পর তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৯৪ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। অনার্স ডিগ্রী গ্রহণ করার পর ১৯৯০ সালে সর্বপ্রথম মতলব উত্তর উপজেলার বাগানবাড়ি আইডিয়াল একাডেমিতে একজন সহকারী শিক্ষক হিসাবে শিক্ষকতার মহান পেশায় যোগদান করেন। ১৯৯৫ সালে কুমিল্লা টি টি কলেজ থেকে শিক্ষকতার লাইসেন্স হিসেবে খ্যাত বিএড ডিগ্রী নেন।
২০০২ সালের জুলাই পর্যন্ত ১৩ বছর তিনি এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পরে ২০০২ নন্দলালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধানশিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ স্কুলে কর্মরত ছিলেন ।
২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলা সদরের স্বনামধন্য ও ঐতিহ্যবাহী গণি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।এ স্কুলে যোগদানের পর তাঁর এ বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে,শিক্ষার্থীদের শিক্ষার উন্নয়নে, শিক্ষক-কর্মচারীদের পেশাগত মান বাড়াতে এবং জেলার শিক্ষক সংগঠনে য়োগ দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করেন ।
শিক্ষাবিদ
পেশাগত কারণে শুরু থেকেই বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের শিক্ষক কর্মচারীদের দাবি আদায়ের আন্দোলন করেন। চাঁদপুর গণি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক হওয়ার পর জেলার মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কর্ণধার হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
তৎকালীন সময়ে ঢাকার রাজপথে ও চাঁদপুরে আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত থেকে শিক্ষকদের দাবি আদায়ের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে আজ পর্যন্ত শিক্ষক নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি এর ব্যানারে থেকে ও জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টে থেকে শিক্ষকদের এ দাবি আদায়ে কাজ করেন।
তিনি শিক্ষার মান-উন্নয়নে শিক্ষা বিভাগের নির্দেশিকা অনুসরণ করে, নতুন নতুন কারিকুলাম মতে এলাকাবাসী ও ছাত্র-অভিভাবক,শিক্ষা প্রশাসনের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রেখে তাঁর বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। অত্যন্ত সুলভ আচরণ এর মাধ্যমে তিনি একজন ভালো প্রধানশিক্ষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করার সামর্থ্য অর্জন করেন । ২০১৬ সালেও চাঁদপুর সদর উপজেলা থেকে তিনি শ্রেষ্ঠ উপজেলা প্রধানশিক্ষক হিসেবে ও এবার জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২২ এ তিনি জেলা পর্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শ্রেষ্ঠ প্রধানশিক্ষক নির্বাচিত হন।
এ ছাড়াও ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসন কর্তৃক ঘোষিত জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার,২০১৭ সালে চাঁদপুর লায়ন্স ক্লাব কর্তৃক বিশেষ অবদান ও ২০১৯ সালে জাতীয় পর্যায়ে নজরুল সাংস্কৃতিক সংঘ কৃতিত্ব রাখায় পুরস্কার লাভ করেন। ২০২২ সদর উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হন। এছাড়াও চাঁদপুর ও মতলবের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি এ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ সংগীত বিদ্যাপীঠ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নজরুল সংগীত বিভাগে ভর্তি হয়ে বাংলাদেশ বেতার ও টিভির নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ও একাডেমিরশিক্ষক এম এ মান্নানের স্বান্নিধ্য লাভ করেন। কিন্তু তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থার কারণে সে সময় এরশাদবিরোধী আন্দোলনে মহানগর ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে ব্যস্ত থাকায় সঙ্গীত জীবনে একাডেমিক ক্যারিয়ার শেষ করতে পারেননি ।
শিক্ষকতার পাশাপাশি অবস্থায় তিনি যৌথভাবে একটি ইংরেজি গ্রামার প্রণেতা ও জেলার সকল শিক্ষকদের সাথে যোগসূত্র স্থাপনে ২০১৪ সালে একটি ‘টিচার্স ফোন গাইড ’ প্রকাশ করেন। বর্তমানে নিজের কবিতাগ্রন্থ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণার পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন।ে এছাড়াও শিক্ষামূলক গবেষণার কাজে মনোনিবেশ করছেন বলে জানান।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে ও শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান হওয়ার স্বীকৃতি পাওয়ার পর তাঁর বিদ্যালয়ের নিজ অফিসে ২৭ মে এক সাক্ষাৎকারে বলেন ,‘ সংশ্লিষ্ঠ কমিটির মূল্যায়নের ফলে আমি ‘ চাঁদপুর জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান’ বিবেচিত হওয়ায় কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই এবং তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । শিক্ষকতা একটি মহান পেশা।একজন শিক্ষক সততা, পেশাগত দায়িত্ব পালনে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব বলে তিনি মতামত দেন। ’
তিনি আরোও বলেন,‘ দৈনন্দিন রুটিন মাফিক কাজ সম্পন্ন করা, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখাও পেশাগত দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সাথে ভালো ব্যবহার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সাথে আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব ।’
তাঁর সহধর্মিণীর নাম শিরিনা আকতার । তিনি দু’পুত্র ও দু’কন্যা সন্তানের সৌভাগ্যশীল পিতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *