শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরতে ব্যাকুল শিক্ষার্থীরা

১২ সেপ্টেম্বর একযুগে খুলতে যাচ্ছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা। এমন খবর গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা ব্যকুল হয়ে উঠছে স্কুল-কলেজে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠ গ্রহণের জন্য। দীর্ঘ ৫শ’ ৩৫ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার দরুণ তারা শ্রেণি কক্ষে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। দীর্ঘদিন গৃহবন্ধি থাকার কারণে জিমিয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা জীবন নিয়ে হতাশায় ভুগছিলেন তারা।

এমনি অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আর না বাড়িয়ে আগামী ১২ই সেপ্টেম্বর থেকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করার ঘোষণা দেন, শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। গত শুক্রবার চাঁদপুর সদর উপজেলার মহামায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন শেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে এ ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী।

তবে ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল কলেজ খোলা হলেও সেখানে সবাইকে মানতে হবে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি । পর্যায়ক্রমে সকলকে ভ্যাক্সিন প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সংবাদ বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকা ও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আনন্দে উৎফুল্লে মেতে উঠে।

কচুয়া সানরাইজ কিন্ডারগার্টেনের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিহা আক্তার নুহা জানায়, স্কুল খুলছে, এটা খুবই মজার খবর, পড়া লেখার সাথে সাথে আবারো সহপাঠীদের সাথে খেলাধুলায় মেতে উঠতে পারবো।

কোয়াকোর্ট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী দুর্জয় পোদ্দার টুসু বলেন, আগামী শনিবার স্কুল খুলছে তাই বই, খাতা, ব্যাগ ও স্কুল ইউনিফর্ম গুছিয়ে রাখছি। এখন স্কুলে যাওয়ার অপেক্ষা করছি।

কচুয়া ক্যামব্রিয়ান স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিম তালুকদার জানায়, করোনার কারনে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার পর আগামী শনিবার থেকে স্কুল খুলে দেওয়ার সংবাদে আমাদের মনে হচ্ছে আমরা এক বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাচ্ছি। বাসায় থেকে অনলাইন ক্লাস আর এ্যাসাইনমেন্ট লেখার যাতাকল থেকে মুক্ত হতে পারবো। দীর্ঘদিন স্কুলে যাইনি। তাই বন্ধুদের সাথেও মেলামেশা হয়নি ঠিকমত। স্কুল খুললে আবার সবাই একসাথে হই-হুল্লুরে মেতে উঠতে পারবো। এখন শুধু স্কুলে ক্লাস করার অপেক্ষায় আছি।

ড. মনসুর উদ্দীন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার জানান, কলেজ খুলছে এমনি সংবাদে মন আনন্দে মেতে উঠছে। দীর্ঘদিন কলেজ বন্ধ থাকায় পড়ালেখা ভেস্তে যাচ্ছিল। আগামী শনিবার থেকে কলেজের গিয়ে ক্লাস করতে পারবো এ সংবাদ যেন ভেস্তে যাওয়া স্বপ্ন পুনঃজাগ্রত হচ্ছে। কলেজ বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন কলেজের সহপাঠীদের সাথে দেখাও হয়নি। বাসায় এক বন্দী জীবন পার করতেছিলাম। ডিসেম্বরে আমার এইচএসসি পরীক্ষা। কিন্তু কলেজে ক্লাস না হওয়ায় অনেক পাঠ এখনো বাকী রয়েছে। কলেজ খুললে সেই পাঠগুলো সম্পন্ন করতে পারবো।

ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তারের অভিভাবক শামছুন্নাহার বেগম জানায়, প্রায় দুই বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে পড়ায় আমরা অভিভাবকরা সন্তানদের পড়াশুনা নিয়ে এক গভীর অন্ধকারে নিমজ্জ্বিত হয়ে পড়েছিলাম। তারা পড়ালেখা বাদ দিয়ে সারাক্ষণ মোবাইল গেমস, কাটুন দেখায় ব্যস্ত ছিল। এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সংবাদে আমরা অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখছি।
কচুয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঃ মান্নান বলেন, করোনার কারনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তারা মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ে। আমরা অনলাইনে ক্লাস এবং এ্যাসাইনমেন্ট দিচ্ছিলাম। তারপরও হতাশ ছিলাম অনলাইন ক্লাসে সবাই যুক্ত না হওয়ায়। স্কুল খুলছে এ সংবাদে আমাদের হতাশা কেঁটে যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ক্লাস চালু করার জন্য আমরা এখন সকল প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।

কোয়াকোর্ট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, আগামী শনিবার স্কুল খুলছে এমনি সংবাদে বিদ্যালয় আঙ্গীনা, শ্রেণি কক্ষ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। আবারো ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হই হুল্লুরে স্কুল আঙ্গীনা মেতে উঠবে তারই অপেক্ষায় দিনক্ষণ গুনছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *