শীতকালীন সবজি বেচা কেনায় ব্যস্ত পালবাজারের আড়ৎদাররা

প্রকৃতির নিয়মানুসারে নির্দিষ্ট সময়ের পর ঋতুর পরিবর্তন ঘটে। সেই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশে এখন শীতকাল। শীতকাল মানে নানাদিক দিয়ে এক উপভোগ্য ঋতু। এ ঋতুতে বাঙালির রসনা মেটাতে বাজারে আসে নানান জাতের শাঁক সবজি। যেমন সীম, টমেটো, বাঁধা কপি, ফুলকপি, মুলা, লাল শাঁক, কুমড়োর শাঁক, গাজর, ধনেপাতা, শসা সহ নানান জাতের শাঁক সবজি। আর এসব শাঁক সবজি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে নৌ পথে ও সড়ক পথে এসে উঠছে চাঁদপুরের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী পালবাজারের কাঁচা মালের পাইকারি আড়ৎ গুলোতে।

এ বাজারে ছোট বড় সব মিলিয়ে মোট ৩৫ টি কাঁচা মালের আড়ৎ আছে। আর এ আড়ৎ গুলোতে আছে শতাধীক কর্মচারি, মালামাল উঠা নামার জন্য আছেন অর্ধশত ভ্যান চালক। তাদের প্রত্যেকেই সকাল হতে সন্ধ্যা অবধি দারুন ব্যস্ত সময় পার করছেন এখন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে দেদারছে আসছে মৌসুমী সব শাক সবজি। ভোর রাত হতে শুরু করে রাত গভীর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে নৌ পথে ও সড়ক পথে আসছে শীত কালিন সব শাঁক সবজি। জেলার আশ পাশের চর হতে এবং জেলার বাইরে হতে নৌ পথে ছোট বড় বিভিন্ন ট্রলার যোগে এসব সবজি এসে ভোর রাতে নোঙর করছে ১০ নং চৌধুরী ঘাটে।

বাজারের প্রায় ২৫ টি ভ্যান গাড়ী যোগে এসব মালামাল ঘাট থেকে নিয়ে আসা হয় পাল বাজারের বিভিন্ন আড়ৎগুলোতে। তেমনিভাবে সড়ক পথে আসা সবজি বোঝাই ট্রাক গুলোও আসে রাত গভিরে। ফলে সেগুলোও আন লোড করতে হয় রাতের ভেতরেই। বাজারের এসব কর্মচারি ও ভ্যান চালকদের দম ফেলবার ফুসরতও যেনো নেই এখন। তারপর সুর্য্যোদয়ের পর হতেই শুরু হয় এসব সবজি বিক্রি। সাধারনত বাজারের সব আড়ৎদাররা দর আর সারা হিসেবেই এসব কাঁচামাল পাইকারি দরে খুচরো বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। এসব কাঁচা মালের পাইকারি ক্রেতাদের অধিকাংশই মূলত আশ পাশের উপজেলার বিভিন্ন বাজারের যেমন ফরিদগঞ্জের, রুপসার, গোয়াল ভাওর, নয়ারহাটের, চান্দ্রার, সাহেব বাজারের, মতলবের,কামতা, গল্লাকের, মুন্সিরহাঁটের, গাজীপুর বাজারের, মহামায়া বাজার সহ নানান বাজারের খুচরো কাঁচা মাল বিক্রেতারাই এ পালবাজারের খরিদদার।

এসব বাজারের খুচরো ব্যবসায়ীরা পালবাজার হতে পাইকারি দরে কাঁচা মাল কিনে অটোরিক্সা যোগে তাদের বাজারে নিয়ে গিয়ে খুচরো বিক্রি করে থাকেন। কথা হয় নয়ার হাট বাজারের কাঁচা মাল ব্যবসায়ী হাবু মিজি, চান্দ্রা বাজারের কবির বেপারী,কামতা বাজারের সালেহ রাঢ়ী সহ আরো অনেকের সাথে। তারা জানায় এখন মৌসুমী সবজি তরকারির মৌসুম। ক্রেতাদের চাহিদা বেশী। ফলে তাদের বেচা বিক্রিও বেশী। এতে তাদের মুনাফাও একটু বেশী হয় তাই তারা আনন্দীত। তেমনিভাবে পালবাজারের ভ্যান চালক আব্বাস, শাকিল, রুহুল আমিনও তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানান যে, ভোর হতে রাত গভীর পর্যন্ত তাদেরকে ভ্যানে করে সবজি আনা নেয়ার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়,এতে তারা খুশি কারন শীত কালিন সবজির মৌসুমে তাদের আয় রোজগার অনেকটা বেড়ে যায়, এতে করে আন সিজনে কাজ কম থাকার ক্ষতিটা তারা কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারেন।

পালবাজারের প্রায় সব আড়ৎদারদের মুখেই এখন হাসির ঝিলিক। বেচা কেনায় দারুন ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। খাতায় লিখতে লিখতে কখনো আঙুল ব্যথা হয়ে যায় তাদের। ভাই ভাই ট্রেডার্সের মালিক এ বাজারের পুরনো ব্যবসায়ী হারুন পাটোয়ারী, মিজান ট্রেডার্সের মালিক মিজানুর রহমান হাওলাদার, মক্কা ট্রেডার্স, মদিনা ট্রেডার্সের মালিক হারুন, রাজ্জাক ট্রেডার্স সহ প্রায় সব আড়ৎগুলোতে ক্রেতাদের পর্যাপ্ত ভিড় লক্ষ করা যায়, মিজান ট্রেডার্সের পুরনো কর্মকর্তা মাসুদ ঢালির সাথে কথা হলে তিনি জানান যে, আমাদের এখন সিজন, বাজারে প্রচুর মালের আমদানি আছে, ক্রেতা এবং বিক্রিও বেশী তাই আমরা খুশি। তপদার ট্রেডার্সের মালিক ও বাজার কমিটির নেতা মাহাবুব তপাদারের সাথে আলাপ কালে তিনি জানান যে, এখন মৌসুমে আমাদের বেচা বিক্রি অনেক বেড়ে গেছে, এখন শীতকালিন সবজি তরকারির মৌসুম। তাই আমাদের বেচা কেনা অনেক বেশী। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, এখন আপনাদের এই ৩৫ টি আড়তে গড়ে কত টাকার কাঁচা মাল বিক্রি হচ্ছে?

এমন প্রশ্নের জবাবে মাহাবুব জানান যে, আগে যেখানে সব আড়ৎদারদের প্রতিদিন গড়ে বেচা কেনা হতো ৩০ হতে ৩৫ লাখ টাকা এখন তা বেড়ে গড়ে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা বেচা কেনা হচ্ছে। খোজ নিয়ে জানা যায় যে বাজারে এখন শীত কালিন সবজির ব্যপক চাহিদা। বিশেষ করে সিম, টমেটো, ফুল কপি,বাঁধা কপি, লাল শাঁক, লাউ, জলপাই। আর এসব সবজি আসছে জেলার আশ পাশের চর এবং অন্যান্ন জেলা হতে যেমন সিম আসছে যশোর দিনাজপুর হতে, ফুল কপি বাধা কপি আসছে মেহের পুর, বগুড়া কুষ্টিয়া হতে,মুলা আসছে যশোর পাবনা হতে, জলপাই রাজশাহী হতে, বেগুন যশোর ও দিনাজপুর হতে, শসা ময়মনসিং ও বরিশাল হতে আসছে, কাঁচা মরিচ, পেপে, পটল ঢাকা এবং উত্তর বঙ্গ হতে, ধনেপাতা, লাল শাক মুলা শাক আসছে কাঁচি কাটা, বালুরচর ও শরিয়তপুর হতে। টমেটো আসছে ভারত হতে, গাজর আসছে চীন হতে। খোলা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজি, সিম ৫০/৬০ টাকা কেজি, ফুলকপি ও বাধাকপি ৩০/৫০ টাকা পিসে, মুলা ২৫ টাকা কেজি, ধনেপাতা ৮০ টাকা কেজি, লাল শাক ৩০ /৪০ টাকা কেজি, পুই শাক ৪০ টাকা কেজি, মরিচ ৫০/৬০ টাকা কেজি, পটল ৩৫/৪০ টাকা কেজি,বরবটি ৭০ টাকা কেজি, জলপাই ৪০ টাকা কেজি, বেগুন ও করলা ৪০ টাকা কেজি,পেপে ২০ টাকা কেজি, লাউ ৫০/৮০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে এখনো দেশি টমেটো ও গাজর না আসার কারনে টমেটো ও গাজরের দাম অন্যান্ন সবজির তুলনায় একটু বেশি।

খোলা বাজারে এখন প্রতি কেজি টমেটো ও গাজর ১০০/১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পালবাজারের খুচরো কাঁচমাল ব্যবসায়ী দুলাল গাজী ও সাত্তার জানান যে সামনে বাজারে দেশি টমোটো গাজর নতুন আলু সহ অন্যান্ন সবজির আমদানি বাড়লে টমোটো গাজর সহ প্রায় সব সবজিরই দাম কিছুটা কমবে।

স্টাফ করেসপন্ডেট, ১৮ নভেম্বর ২০২২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *