শীতকালীন সবজির কোনো প্রভাব নেই খুচরা বাজারে
সকল ধরনের সবজির দাম ৫০ টাকার উপরে
স্টাফ রিপোটার
চাঁদপুরে প্রতি বছর শীতকালীন সবজি চাষ হয়। এসময় সবজির দাম কমে আসে তুলনা মূলকভাবে। কিন্তু এবার আর সেটা নেই। দাম কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে শীতের আগমনী বার্তা। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং চলে যাওয়ার পরে আবহাওয়ায় শীতের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যেই বাজারে চলে এসেছে শীতের সবজির প্রথম চালান। ফুলকপি, টমেটো, গাজর, শিমসহ অন্যান্য সবজিতে পরিপূর্ণ রাজধানীর কাঁচাবাজার। সবজির প্রাচুর্যতা থাকলেও দামের কারণে বেশিরভাগ সবজিই সাধারণ ক্রেতাদের হাতের নাগালের বাইরে। আগের সপ্তাহের তুলনায় সবজির দামও বেড়েছে বলে দাবি ক্রেতাদের। তবে বিক্রেতাদের দাবি, সিত্রাংয়ের প্রভাবে কিছু সবজির দাম বাড়লেও বেশিরভাগের দাম আগের মতোই রয়েছে। মাছের বাজারেও দাম বেশির অভিযোগ ক্রেতাদের।
কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সবগুলো সবজির দামই ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। এর বাইরে কাঁচা পেঁপের দাম শুধুমাত্র ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় দেখা গেল। এছাড়া শীতকালীন সবজি যেমন ফুলকপির দাম কেজি প্রতি ৮০ টাকা, টমেটো ও গাজরের দাম ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, শিম ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া বারোমাসি সবজি হিসেবে পরিচিত ঢেঁড়স বা ভেন্ডি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুন মানভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়, বরবটি ৯০ থেকে ১০০ টাকায়, করলা বড় ৬০ টাকা, করলা ছোট ৮০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, লাউ পিস প্রতি ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
‘গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে বাজারে সব সবজির দামই বাড়তি মনে হচ্ছে। প্রতিটি সবজিই ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দাম চাচ্ছে। সবকিছুতে ঘূর্ণিঝড়ের অজুহাত দেওয়া হচ্ছে। এভাবে খুব বেশিদিন চলা যায় নাকি? চাল, ডাল, আটা, তেল, চিনি সবকিছুর দাম অতিরিক্ত। ডিম তো ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে অনেকদিন ধরে।’
এ বাজারের ব্যবসায়ী মো. আনাস ভূঁইয়া সময়ের আলোকে বলেন, ‘বাজারে কোনও কিছুর দামই বাড়েনি। আমরা লসে বিক্রি করছি। কাঁচা সবজি পচে যায় যার ভয়ে বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না। এর মধ্যে বৃষ্টি হয়ে হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় বাজার এবং গুদাম। এতে করে প্রচুর সবজি কেনা দামের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছি। তারপরও ক্রেতারা খুশি না। তাদের ফ্রি দিলে মনে হয় খুশি হবে। এছাড়া খুশি হওয়ার আর কোনও উপায় নাই।’
এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় থাকা পেঁয়াজের দাম আরও ৫ টাকা বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গত সপ্তাহে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। গতকাল আরও ৫ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ দেশী পেঁয়াজের তুলনায় ৫ টাকা কমে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অপরদিকে আদা ও রসুনের দাম আগের সপ্তাহের মতোই রয়েছে বলে দাবি করেন তারা। গতকাল মানভেদে আদা ৯০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়। আর রসুন দেশী ও চায়না প্রকারভেদে ৮০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
চলতি সপ্তাহে ডিমের দামও বাড়েনি বলে দাবি ডিম ব্যবসায়ীদের। গতকাল ৫০ টাকা হালিতে ডিম বিক্রি হয়। ডাল বিক্রি হচ্ছে একই দামে। অ্যাংকর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায়। এছাড়া মসুর ডাল, মুগ ডাল ও ছোলার ডাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ক্রেতারা।
আগের সপ্তাহের তুলনায় চাল, আটা ও তেলের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানা যায়। তবে, চিনির দাম বেড়েছে। চিনির সঙ্কটের অজুহাতে দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। বিক্রেতাদের দাবি, চিনি পাওয়া যায় না পর্যাপ্ত। আমরা বেশি দামে কিনে আনছি। তাই চিনি মান ভেদে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করছি।
এদিকে আজ শনিবার (২৮ অক্টোবর) থেকে বাজারে আসবে ইলিশ মাছ। এ কারণে অন্যান্য মাছের দাম কিছুটা কম বলে দেখা যাচ্ছে। রুই মাছ বড় আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা কেজিতে। সেই মাছ গতকাল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। এছাড়া, নিম্ন আয়ের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ করা পাঙ্গাশ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। তেলাপিয়াও একই দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সামুদ্রিক মাছগুলো। ছোট এবং মাঝারি সাইজের রূপচাঁদা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫০ টাকা দরে। বড় সাইজের রূপচাঁদা বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে। এছাড়া কোরাল ৭৫০, বড় বোয়াল ৭০০, কাতল ৫৫০, শিঙ ৬০০ এবং চিংড়ী আকারভেদে ৫০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।