সুখে নেই সাধারণ মানুষ ॥ জানে না মাথাপিছু আয়ের যোগ-বিয়োগ

অনেক মানুষ আছে, যাদের ধন-সম্পদের অভাব না থাকলেও মনে সুখ নেই। আবার এমন অনেকে আছে, যারা দুবেলা দুমুঠো পেটভরে খেতে পারলেই নিজেকে সুখী মনে করে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ এই দলে। উন্নত বিশ্বের মানুষের কাছে সুখের সংজ্ঞা ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক।

তাদের খানা-খাদ্যের অভাব না থাকলেও অনেকে নিজেকে অসুখী মনে করে। তারা আরও অনেক কিছুই চায়। অর্থনীতির ভাষায়, মানুষের চাহিদার শেষ নেই। একটির চাহিদা মিটে গেলে আরেকটির চাহিদা সামনে হাজির হয়।

উন্নত বিশ্বের জনগণের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বেশি কাজ করে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে আমরা দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করতে পারিনি, সেখানে দরিদ্র মানুষের মূল চাহিদাই হচ্ছে, দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করা। একটি দিন এই চাহিদা মিটাতে পারলে, পরের দিনও যাতে এভাবে চলতে থাকে তারা এ কামনাই করে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় সুখী। বিশ্ব সুখী দেশের প্রতিবেদন তাই বলছে। ২০২১ সালে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০১। গত বছর ছিল ১০৭। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ৬ ধাপ এগিয়েছে। এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার। যেখানে দেশের ৬ কোটি বেশি মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছে, সেখানে এই সুখের তালিকা কতটা যৌক্তিক, তা বিবেচনা করা দরকার। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, বিদেশী সংস্থা কি করে আমাদের দেশের মানুষের সুখের পরিমাপ করে? অবশ্য তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ, তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন সূচকের পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিয়ে এ তালিকা করে।

এসব পরিসংখ্যান দেয়া হয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকে। যেমন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলেছে, চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হবে ২৫৫৪ ডলার। গত বছর ছিল ২২২৭ ডলার। এক লাফে তা ৩২৭ ডলার বেড়ে গেছে। করোনায় দুর্দশায় নিপতিত হওয়া অর্থনীতির মধ্যে এ পরিসংখ্যান কি বাস্তবসম্মত?

যেখানে অর্থনীতিবিদসহ দেশের বিভিন্ন সংস্থা বলছে, সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে, কোটি কোটি মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছে, সেখানে এ আয় বৃদ্ধি কি সাধারণ মানুষের কাছে কাঁটা গায়ে নুনের ছিটার মতো মনে হচ্ছে না? জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতিতে অসংখ্য মানুষ ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে যেখানে অনাহারে, অর্ধহারে কিংবা কম খাবার খেয়ে কোনোরকমে দিন পার করছে, সেখানে তাদের আয় বৃদ্ধির বিষয়টি প্রহসন ছাড়া আর কি হতে পারে? তবে করোনার মধ্যেও কিছু মানুষের আয় বেড়েছে। তারা কারা?
তারা হচ্ছে, ধনী শ্রেণী কিংবা লুটেরা শ্রেণী, যারা করোনার জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনার মধ্যেও কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। এক কোটি টাকা বা তার বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে প্রায় এক কোটি। সরকার এদের আয় বৃদ্ধিকেই ধরে নিয়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পরিসংখ্যান দিয়েছে।

কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *