কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল কয়েক দিন ধরেই বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ প্রায় সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম পড়তির দিকে। অন্যদিকে বাংলাদেশে দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এই মূল্য বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ বাজারে পণ্যের এক ধরনের সংকট বা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা। জোগান ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য না থাকার কারণে একটি সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। পণ্যের দাম আরও বাড়বে, এমন ধারণা থেকে কেউ কেউ পণ্য মজুত করে রেখেছেন।
সঠিক পরিসংখ্যানের কারণেও পণ্যের জোগান ও চাহিদায় সমস্যা হচ্ছে। দেশে কোন পণ্যের চাহিদা কত, উৎপাদন কত হয়, তার সঠিক পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমরা কেবল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা বলেই আত্মতৃপ্তি লাভ করছি। অন্যদিকে লাখ লাখ টন খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে। এই বিপরীতধর্মী চিত্রের মাঝে প্রকৃত চিত্র ঢাকা পড়ে গেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তাদের আয় বৃদ্ধি দূরে থাক, তা কমে গেছে। যা আয় করছে, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে তা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। অনেকে খাদ্য তালিকা থেকে মাছ-গোশতসহ অনেক পণ্য বাদ দিয়েছে। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষ পুষ্টিহীনতার শিকার এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। এর ফলে দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে, যা দেশের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
শুধু খাদ্য জোগাড় করতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে না, চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে গিয়েও অনেকে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সন্তানের শিক্ষা ব্যয় ও চাহিদা পূরণ করা অনেকের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সরকারের উচিৎ, সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বমুখীর লাগাম টেনে ধরা। অন্তত তারা যাতে স্বাভাবিক খাদ্যগ্রহণ করতে পারে, ব্যবস্থা করা। বলা বাহুল্য, শুধু বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধিই পণ্যমূল্যবৃদ্ধির একমাত্র কারণ নয়। বাজার ব্যবস্থাপনার সংকট ও সিন্ডিকেটও এক্ষেত্রে দায়ী। তাদের কারসাজিতে পণ্যমূল্য ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে যেসব সিন্ডিকেট জড়িয়ে রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন জরুরি।