আজারবাইজানের হামলায় শতাধিক আর্মেনিয় সেনা নিহত

বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এর আগে আজারবাইজানের হামলায় নিহত আর্মেনীয় সেনাদের সংখ্যা অর্ধশত বলে জানানো হয়েছিল।

আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান বলেছেন, গত সোমবার থেকে আজারবাইজানের সাথে সীমান্ত সংঘর্ষে শতাধিক আর্মেনীয় সেনা নিহত হয়েছে। অন্যদিকে আজারবাইজান বলেছে, একই সংঘর্ষে তাদের নিজস্ব ৫০ জন সৈন্যও নিহত হয়েছে। মূলত এই লড়াইয়ের জন্য উভয় পক্ষই একে অপরকে দায়ী করছে।

মূলত বিতর্কিত অঞ্চল নাগরনো-কারাবাখ নিয়ে এই দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের পুরনো শত্রুতা রয়েছে এবং এই বিষয়টি নিয়েই নতুন করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে উভয় দেশ। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যেকেই দুই দেশের মধ্যে শান্তির আহ্বান জানিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়ার সময় বুধবার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান বলেছেন, সোমবার রাত থেকে আজারবাইজানের হামলায় ১০৫ আর্মেনীয় সেনা নিহত হয়েছে। তার অভিযোগ, চলতি সপ্তাহে আজারি সৈন্যরা ১০ বর্গ কিমি (৪ বর্গ মাইল) আর্মেনিয়ান ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে এবং সামরিক সহায়তার জন্য তিনি এখন রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছেন। বস্তুত রাশিয়া হচ্ছে আর্মেনিয়ার দীর্ঘদিনের মিত্র।

তবে আর্মেনিয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে আজারবাইজান। এর পরিবর্তে আজারবাইজান দাবি করেছে, তার প্রতিবেশী কালবাকার জেলায় সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে গোলাবর্ষণের মাধ্যমে সংঘাত শুরু করেছে। রয়টার্সের খবরে আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমাদের ইউনিটগুলো প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

গত সোমবার আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ চলে। এরপর মঙ্গলবার রাশিয়ার মধ্যস্থতায় একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি হলেও তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় উভয় দেশ। পরে বিবদমান উভয় পক্ষই চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য অপরকে দোষারোপ করেছে এবং বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সহিংসতা অব্যাহত ছিল বলে খবর পাওয়া গেছে।

১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আজারবাইজার ও আর্মেনিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। উভয় দেশই সেসময় সোভিয়েত শাসনের অধীনে ছিল। একপর্যায়ে আর্মেনিয়ান বাহিনী নাগোরনো-কারাবাখের নিকটবর্তী অঞ্চলের কিছু অংশ দখল করে, যা মূলত দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অঞ্চল হিসাবে স্বীকৃত।

পরে ২০২০ সালে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়ে সেসব অঞ্চল পুনরুদ্ধার করে আজারবাইজান। সেসময় ছয় সপ্তাহের সেই যুদ্ধ রাশিয়ার মধ্যস্ততার মাধ্যমে শেষ হয়। এরপর যুদ্ধের কারণে পালিয়ে যাওয়া হাজার হাজার বাসিন্দা সেখানে ফিরে আসেন।

এরপর গত প্রায় দুই বছরে নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে উভয় দেশের নেতারা বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন।

উল্লেখ্য, বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান কয়েক দশক ধরে বিবাদে লিপ্ত রয়েছে। নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভূখণ্ডের ভেতরে অবস্থিত হলেও ১৯৯৪ সালের এক যুদ্ধের পর থেকে আর্মেনিয়ার সমর্থনে জাতিগত আর্মেনীয় বাহিনী ওই অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করছিল।

আর্মেনিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। ২০২০ সালের নভেম্বরে এই ভূখণ্ড ঘিরে দুই দেশের মাঝে শুরু হওয়া যুদ্ধ রাশিয়ার মধ্যস্থতায় বন্ধ হয়। এরপর ওই অঞ্চলে প্রায় ২ হাজার শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেখান থেকে শান্তিরক্ষীদের পরে প্রত্যাহার করে নেয় মস্কো।

২০২০ সালের ওই সংঘাতে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *