চাঁদপুরে তৈল ছাড়া সম্পূর্ন চর্বিমুক্ত চাউলের গুড়ো দিয়ে তৈরী করা শুকনো চিতল পিঠা বিক্রির ২১ বছর পার হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ পিঠা বিক্রেতা লিটন ২১ বছর পূর্তি উৎসব পালন করেছে অত্যান্ত আনন্দের সাথে। সে ২১ বছর পূতি উৎসবে পিঠার ব্যবসাকে আরো গতিশীল করে এ ব্যবসা জমজমাট ভাবে আগামীতে চালানোর জন্য ভিন্নধর্মী ভাবে পিঠা উৎসব উপলক্ষে ১৫০০শ’ প্রান প্রিয় ক্রেতাকে বিনামূল্যে ফ্রি পিঠা খাওয়ালেন ভ্রাম্যমাণ পিঠা বিক্রেতা লিটন বেপারী।
এ উৎসব পালন করায় এ বিষয়টি পুরো শহরে এখন টকঅবদা টাউনে পরিনত হয়ে শহরে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে। সকলের কাছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লিটনের প্রশংসা আর মানবিকতা নিয়ে এক প্রকার ঝড় উঠেছে। সকলের মুখে একই কথা লিটন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হলেও তার মন ভাল এবং সে এক জন প্রকৃত ব্যবসায়ী। সে শুধু লাভের চিন্তাই করেনা বরং সে তার এ ব্যবসার সাথে নিত্যদিন যারা জড়িত সে সব ক্রেতাদের কথা ভেবে তাদের মনকে জয় করতে তাদের হৃদয়ে নিজেকে ধারন করে রাখতে একটি ভাল ও মহতি উর্দ্যোগ গ্রহন করেছেন।
চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র বাইতুল আমিন রেলওয়ে জামে মসজিদের নিকটে ও কোর্টস্টেশনের সন্নিকটে রেল লাইনের পাশে ফুট পাতে পিঠা বিক্রি করেন তিনি। পিঠা বিক্রির ২১ বছর পূর্ণ হওয়ায় বুধবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে বিনামূল্যে ফ্রি চিতল পিঠা খাওয়ার উৎসব।
লিটন শহরের পালবাজারে কালাম মিজির দোকানে ২০০১ সাল পর্যন্ত ১০০ টাকা মজুরিতে কাঁচামালের দোকানে কাজ করতেন। ওই বছর তিনি কাজ ছেড়ে দিয়ে পিঠা বিক্রি শুরু করেন। তার পিঠা বিক্রির ২১ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুধু মুখে দাওয়াত দেননি, রীতিমতো আমন্ত্রণপত্র দোকানে টানিয়ে দাওয়াত দিয়েছেন তার নিত্যদিনের পিঠা ক্রেতাদের। প্রতিদিন ৫ থেকে ১০টাকায় ক্রয় করে খাওয়া ক্রেতারা বিনামূল্যে ফ্রি পিঠা খেয়ে খুশি সকল ক্রেতা। তার এই মহত উদ্যোগে সাধুবাদ জানিয়েছেন ক্রেতারা। জীবিকা নির্বাহের ফাঁকে বিশেষ দিনে এ উদ্যোগ নিয়েছেন চিতল পিঠা বিক্রেতা লিটন বেপারী।
ফ্রি পিঠা খেয়ে জসিম, মিনহাজ ও রুবেল জানান, চাঁদপুর শহরে অনেকই বিভিন্ন পিঠা বিক্রি করেন। কিন্তু ক্রেতাদের জন্য এমন আয়োজন কেউ কখনো করেনি। লিটন বেপারীর প্রতি বছর একবার ফ্রি বিনা মূল্যে পিঠা খাওয়ান। তিনি একজন বড় মনের মানুষ। তিনি আমাদের পিঠা খাওয়াতে পেরে খুব খুশি হয়েছেন, আমরাও তেমনি খুশি।
পিঠা বিক্রেতা লিটন বেপারী বলেন, চাঁদপুর শহরে পিঠা বিক্রির আমার ২১ বছর হয়েছে, তাই আমার প্রাণের ক্রেতাদের বিনামূল্যে ফ্রি পিঠা খাওয়ালাম। এতে আমি অনেক আনন্দ পেয়েছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই, আমি আমার কথা রাখতে পেরেছি। ফ্রি পিঠা খাওয়ানো বড় কথা নয়, মানুষ যে আমাকে ভালোবেসে আমার কাছে আসে সেটাই বড় পাওয়া ও বড় আনন্দের। পাঁচ চুলায় পিঠা বানিয়ে দেড় হাজার পিঠা মানুষকে খাওয়ালাম। এতে আমার মনটা সত্যিকারর্থে ভরে গেছে।
পিঠ বিক্রেতা লিটন বেপারী বলেন, বিনামূল্যে ফ্রি পিঠা খাওয়ার দাওয়াত দিলেও এটা আসলে আমার ২১ বছর এ ব্যবসার সাথে যারা জড়িত সে সব পিঠাপ্রেমী ভাই-বোনদের প্রতি আমার এটু সামান্ন ভালোবাসার ইকটু সন্মান। এ পিঠা খাওয়ানো শুরু হয় দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত এই আয়োজন চলে। কেউ দুইটা, কেউ ৩টা আবার কেউ চারটা পিঠাও খেতে দেখা গেছে।
পিঠা বিক্রেতা লিটন বেপারী জানান,দীর্ঘ ২১ বছর যাবত পিঠা বিক্রি করেই চলে আমার সংসার। শুধু তাই নয়, পিঠা বিক্রির আয় দিয়ে স্কুল, কলেজে পড়াশোনা করছে আমার তিন মেয়ে। আমি পিঠা তৈরির পাশাপাশি সবজি বিক্রি, রিকশা চালানোসহ বিভিন্ন কাজ করে থাকি। তবে আগে অনেক পিঠা বিক্রি হতো। এখন আগেরমত আর পিঠা বিক্রি হয়না। করোনার কারনে এখন খোলা(ভ্রাম্যমাণ) দোকানে সচেতন মানুষ কম আসে। করোনার কারনে এখন মানুষ পিঠা ক্রয় করে পুর্বের মত বাড়ি নিচ্ছেনা। ক্রেতারা নিজে একটা খেয়ে চলে যায়।