আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চাই না : শিক্ষামন্ত্রী

ছাত্রলীগকে আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির পরামর্শ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘ছাত্রলীগ তো ছাত্রদের কাগজ-কলম বইপত্র দেয়, অস্ত্রশস্ত্র নয়। ছাত্রলীগই তো ক্যাম্পাসে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। তাহলে এই ছাত্রলীগের কেন মন্দ কথা শুনতে হবে। যেখানে মন্দ কথা হয়, সেখানে নিজেরাই একটু বিশ্লেষণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতির পিতাই তো শিখিয়ে দিয়ে গেছেন, আত্মসমালোচনা করতে হবে, আত্মশুদ্ধি করতে হবে। তার কথা তো আমাদের মানতেই হবে।’

ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বটতলায় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। এতে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহিদ বুদ্ধিজীবী আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘নানান সময় নানান লোকের মন্দ কথা আমরা শুনতে পাই। কেননা, ছাত্রলীগের নামকে অনেকেই ব্যবহার করে। আগাছা-পরগাছার তো শেষ নেই। আমাদেরও ক্রটি আছে, দল ভারী করার জন্য কাকে নিচ্ছি অনেক সময় খেয়াল করে দেখি না। আর সুযোগসন্ধানীদের তো অভাব নেই। তারা তো সুযোগের সন্ধানে থাকে, কার নাম ব্যবহার করে বাড়তি সুবিধা, অন্যায় সুবিধা নিতে পারবে। কিন্তু দোষ পড়ে সংগঠনের ওপর। এজন্য আগাছাদের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।’

দীপু মনি বলেন, ‘মানুষের জন্য কাজ করার যে বোধ সেটা বোধহয় সবচেয়ে ভালো পারবে ছাত্রলীগ। কেননা, ছাত্রলীগের জন্মই এ কারণে। জাতির পিতা এ ভূ-খণ্ডের মানুষকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তার জন্য আগে ছাত্রলীগ গড়ে তুলেছিলেন।’
বিভিন্ন দুর্যোগের ত্রাণ কার্যক্রম, খাদ্য সহায়তা প্রদান, ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক পরিচালনা করায় ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের ব্লাড ব্যাংক কাজ করলে আর কোনো রক্তের অভাব হওয়ার কথা নয়।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার পক্ষেই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, ‘আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চাই না। বরং আমরা চাই আমাদের প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন টিকা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসে, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।‘

শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আরও অনেক বেশি সজাগ থাকতে হবে। করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। গত দেড় বছরে শিক্ষাখাতে যে ঘাটতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে সশরীরে ক্লাস করাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে অনেকই স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে যেভাবে চলছে, তাতে শিক্ষাখাতের সমস্যাটাই বেশি হবে। সন্তানদের কথা মাথায় রেখে আমরা প্রত্যেকেই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি।’
তিনি বলেন, ‘সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
সরকার নতুন করে আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চায় না বলে জানিয়েছে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছে। নতুন করে আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চায় না সরকার। এ কারণে শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
শনিবার রাজধানীর একটি কলেজের রজতজয়ন্তী উৎসব অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১২ বছর বয়স থেকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় শিক্ষার্থীদের আনা সম্ভব হলেও প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের এর আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে তাদের নিয়ে বেশি উদ্বেগ রয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন করে করোনা পরিস্থিতি বেড়ে গেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবারো বন্ধ করে দিলে কতদিনে আবার সচল করা সম্ভব হবে তা অনিশ্চিত। সে কারণে আমরা চাই ভ্যাকসিনেশনের আওতায় শিক্ষার্থীদেরকে এনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চালিয়ে যেতে।
এর আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন কারিকুলাম হবে দক্ষতা নির্ভর। শুধুমাত্র পরীক্ষা নির্ভর ও সনদ সর্বস্ব শিক্ষা নয়। শিক্ষা হতে হবে দক্ষতা নির্ভর। যা শিখছি তা যেন আমরা প্রয়োগ করতে পারি। শিখলাম পরীক্ষা দিলাম ভুলে গেলাম- এতে কোনো লাভ নেই। আমাদের সমস্যা সমাধান করতে শিখতে হবে। তার সঙ্গে সততা, মানবিকতা ও দেশপ্রেম থাকতে হবে। না হলে অর্জিত শিক্ষার কোনো মূল্য থাকবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *