কলকাতায় চাঁদপুরের ইলিশ ৩ হাজার টাকা কেজি

পদ্মার-মেঘনার সুস্বাদু ইলিশ পেতে মরিয়া কলকাতার মানুষ। দুর্গাপূজা সামনে রেখে সেখানে ইলিশ নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়েছে। একবার ইলিশের স্বাদ চোখে দেখার বিনিময়ে অনেকেই সপরিবারে মাসের বাকি অংশ শুধু শাক-সবজি খেয়ে থাকতেও রাজি।

প্রচুর চাহিদার কারণে মাছটির দামও ঠেকেছে আকাশে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার রুপিতে, বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা। এর জেরে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ইলিশ পাচার হচ্ছে ভারতে। সম্প্রতি ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

কলকাতার লেক মার্কেটের এক মাছ বিক্রেতা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ক্রেতারা দুই কেজির ইলিশ ছয় হাজার রুপির বেশি দিয়েও কিনছেন, এমনটি দেখে আমরাই অবাক হয়ে যাচ্ছি। অবশ্য এর স্বাদের গ্যারান্টি রয়েছে।

সুনির্মল অধিকারীও এ ধরনের ইলিশপ্রেমী। চড়া দামে তিনি দেড় কেজির একটি ইলিশ কেনা থেকে নিজেকে আটকে রাখতে পারেনি। যদিও কালিঘাটের ওই শিক্ষক ঠিকই জানতেন, এত দামে ইলিশ কিনলে মাসের বাকি দিনগুলো হয়তো শুধু ডিম আর শাক-সবজি খেয়েই কাটাতে হবে। তিনি বলেন, আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি। রূপালি ইলিশ দেখেই আমার মুখে লালা চলে এসেছিল। আমি নিশ্চিত এর স্বাদ স্বর্গীয় হবে। এসব ইলিশের বেশীর ভাগ আসে চাঁদপুর, শরীয়তপুর, ভোলা, চরফেশনসহ মিঠানদীর জেলা সমূহ থেকে।

সীমান্তের দুই পাশেই বিপুল জনপ্রিয়তা থাকা ইলিশ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার কূটনীতির অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির বিরোধিতা করার পর ২০১২ সালে ভারতে ইলিশ রপ্তানি নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ। সেই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এখনো। তবে গত বছর দুর্গাপূজা সামনে রেখে ভারতে ১ হাজার ৪৭৫ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। কিন্তু এ বছর পূজা ঘনিয়ে এলেও ইলিশ পাঠানোর কোনো ইঙ্গিত নেই বাংলাদেশের তরফ থেকে। এ অবস্থায় কলকাতাবাসীর মুখের তৃপ্তি মেটানোর একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে পাচার হয়ে যাওয়া ইলিশ।

মাছ বিক্রেতারা জানান, কলকাতায় পৌঁছানো বেশিরভাগ ইলিশ যাচ্ছে নদীপ্রধান আঙ্গরাই-হাকিমপুর সীমান্ত দিয়ে। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি সীমান্ত দিয়েও পাচার হচ্ছে কিছু ইলিশ। সম্প্রতি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাদের একটি সীমান্তচৌকিতে বিপুল পরিমাণ ইলিশ জব্দ করেছে।

বাবলু লস্কর নামে লেক মার্কেটের এক মাছ বিক্রেতা বলেন, এ বছর মৌসুমের শেষ দিকে চোরাচালানের মাধ্যমে বাজারে ইলিশ আসছে। ছয়-সাতদিন ধরে সরবরাহ বেশ স্থিতিশীল এবং মাছ দেদারছে বিক্রি হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরিও স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশ থেকে কিছু ইলিশ তাদের বাজারগুলোতে যাচ্ছে। যদিও এটি চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

সময় ডেস্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *