ঈদের দিন বজ্রপাতে প্রাণ গেল ১০ জনের

বজ্রপাতে দেশের সাত জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইলে একই স্থানে তিন কিশোর মারা গেছে। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, হবিগঞ্জে দুইজন, বাগেরহাটে একজন, মেহেরপুরে একজন ও কক্সবাজারে একজন ও নোয়াখালীতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলের কা‌লিহাতী‌ উপজেলায় নদীতে গোসল করার সময় বজ্রপা‌তে তিন কি‌শোর নিহত হ‌য়ে‌ছে। এ ঘটনায় আহত হ‌য়ে‌ছে নদীর পা‌ড়ে থাকা আ‌রও দুইজন। মঙ্গলবার (৩ মে) সকা‌লে উপ‌জেলার দশ‌কিয়া ইউনিয়নের হা‌তিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘ‌টে।

যারা মারা গেছে তারা হ‌লো- উপ‌জেলার হা‌তিয়া এলাকার র‌বিউলের ছে‌লে আরিফ (১৫), আব্দুর রাজ্জাকের ছে‌লে র‌ফিক (১৪) এবং দশ‌কিয়া পূর্বপাড়া গ্রা‌মের জুলহা‌সের ছে‌লে ফয়সাল (১৬)।

দশ‌কিয়া ইউনিয়ন প‌রিষ‌দের চেয়ারম্যান মা‌লেক ভূঁইয়া ব‌লেন, ঈদের নামাজ পড়ার আগে সকা‌লে তারা নদীতে গোসল কর‌তে গি‌য়ে‌ছিল। এ সময় সেখা‌নে বজ্রপাত ঘটলে ঘটনাস্থ‌লেই একজন মারা যায়। গুরুতর আহত হয় চারজন। টাঙ্গাইল জেনা‌রেল হাসপাতা‌লে নেওয়ার প‌থে মারা যায় র‌ফিক ও ফয়সাল‌। তাদের মরদেহ বা‌ড়িতে আনা হ‌য়ে‌ছে। এ ঘটনায় এলাকায় শো‌কের ছায়া নে‌মে এ‌সে‌ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় বাবার কবর জিয়ারত করার সময় বজ্রপাতে রনি মিয়া (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলা সদরের দুর্গাপুরে এ ঘটনা ঘটে। রনি ওই এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রনি ঈদের নামাজ আদায় শেষে বাবার কবর জিয়ারত করতে স্থানীয় একটি কবরস্থানে যান। কবর জিয়ারত করা অবস্থায় বজ্রপাত হলে তিনি গুরুতর আহত হন। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক শ্যামল রায় জানান, হাসপাতালে আনার আগেই রনি মিয়ার মৃত্যু হয়েছে।

হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জে বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ও বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। আজমিরীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.মাসুক আলী ও শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামের শাহজাহান মিয়া সকাল ৯টার দিকে বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে যান। এ সময় হালকা বৃষ্টির সময় বজ্রপাত ঘটলে তিনি আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে শায়েস্তাগঞ্জে বজ্রপাতে সাবাজ মিয়া (২৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার লাদিয়া গ্রামের ইলিয়াস মিয়ার ছেলে। বিকেলে সাবাজ মিয়া বাড়ির পাশে ধানের জমিতে কাজ করার সময়ে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্য হয়।

বাগেরহাট

বাগেরহাটের মোংলায় কাঠ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে মহির উদ্দিন শেখ (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে মোংলা উপজেলার আগা মাদুরপাল্টা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মহির উদ্দিন শেখ মোংলা উপজেলার মাদুরপাল্টা গ্রামের বাসিন্দা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য অজিত মজুমদার জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢালিরখন্ড এলাকা থেকে জ্বালানি কাঠ নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন মহির উদ্দিন শেখ। পথিমধ্যেই বজ্রপাতের শিকার হন তিনি। স্থানীয়রা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওনাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, বজ্রপাতে মহির নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আমরা তার পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করব।

মেহেরপুর

মেহেরপুর সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে বজ্রপাতে আব্দুর রাজ্জাক (৫৩) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তার ভাই মন্টু (৪৮) আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, সকালে ঈদের জামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন রাজ্জাক ও মন্টু। পথে বজ্রপাত হলে দুজনই আহত হন। এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আব্দুর রাজ্জাককে মৃত ঘোষণা করেন।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোখলেছুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

কক্সবাজার

কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডীতে বজ্রপাতে শামসুল আলম (৫০) নামে এক লবণচাষির মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরও একজন। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত লবণচাষি শামসুল আলম সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের নতুন মহাল মাঝের পাড়ার ইসমাইলের ছেলে। আহত দেলোয়ার একই এলালার মৃত আজম আলীর ছেলে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মনিরুল গিয়াস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওসি জানান, বিকেলে চৌফলদন্ডী নতুন মহাল মাঝেরপাড়ায় বৃষ্টি থেকে লবণ রক্ষা করতে গিয়ে হঠাৎ বজ্রপাতের কবলে পড়েন শামসুল আলম। তখন তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সেখান থেকে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *