এক বছর ধরে গৃহকর্মীকে ধর্ষণ করছিলেন ছাত্র নিলয়

এক বছর ধরে গৃহকর্মীকে ধর্ষণ করছিলেন ছাত্র নিলয়
এক বছর ধরে গৃহকর্মীকে ধর্ষণ করছিলেন ছাত্র নিলয়

চাঁদপুর সময় রিপোট-চাঁদপুর শহরের ওয়ারলেস এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ বরকন্দাজের বাড়িতে মা-বাবাসহ বসবাস করেন ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালের শিক্ষার্থী আমজাদ মাহমুদ নিলয় (২১)। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গত এক বছর যাবৎ নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন তিনি। বাবা-মা কর্মজীবী হওয়ায় তাদের অনুপস্থিতিতে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে আসছিলেন নিজ বাড়ির গৃহকর্মীকে। এক বছর ধরে চলা এ যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পেতে গত শুক্রবার পালিয়ে এসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ভুক্তভোগী। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রাণে রক্ষা পান তিনি।

অভিযোগ আছে, ধর্ষণের ঘটনাটি জানতেন নিলয়ের বাবা-মা। কিন্তু তারা বিষয়টি নিয়ে নিশ্চুপ ছিলেন। ভুক্তভোগী উল্টো মারধরের শিকার হয়েছেন বারবার। কোনো প্রতিকারই তিনি পাচ্ছিলেন না। বাবা-মাসহ নিলয়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ তার মাকে গ্রেপ্তার করেছে। বাবাসহ আত্মগোপনে গেছেন নিলয়।

নিলয়ের বাবার নাম আব্দুল মাজেদ, মা শাহনাজ বেগম। তারা ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার চরশফী গ্রামের বাসিন্দা। বাবাসহ পালিয়ে গেলেও তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ।

জানা গেছে, চাঁদপুর শহরের ওয়ারলেস এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ বরকন্দাজের বাড়িতে থাকেন চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এ কর্মরত আব্দুল মাজেদ ও শাহনাজ বেগম দম্পতি। তাদের বড় ছেলে নিলয়। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এখন বাবা মায়ের সঙ্গে থাকেন তিনি। তাদের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেন এক তরুণী (২৪)। বাবা-মা যখন অফিসে থাকেন, সে সময় নিলয়ের যৌন নির্যাতনের শিকার হতেন ওই গৃহকর্মী।

গত এক বছর এই বিষয় নিয়ে নিলয়ের বাবা ও মাকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগী। সর্বশেষ গত ২৪ এপ্রিল ফের ধর্ষণের শিকার হন তিনি। এবারো বিষয়টি গৃহকর্তা-কর্ত্রীকে জানিয়ে বিচার চেয়েছেন ওই গৃহকর্মী। তবে আবারো অপবাদের মুখে পড়ে মারধরের শিকার হন তিনি। এমনকি চার বছর ধরে কাজ করলেও ভুক্তভোগীকে গৃহকর্তা কোনো টাকা-পয়সা দেননি বলেও অভিযোগ আছে। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে চুপ থাকতে বাধ্য করা হয়।

গত ১৪ এপ্রিল দুপুরে আব্দুল মাজেদ দম্পতি অফিসে চলে গেলে সেই সুযোগে নিলয় তাদের গৃহকর্মীকে আবারও ধর্ষণ করে। ভুক্তভোগী ঘটনাটি আবারও আব্দুল মাজেদ দম্পতিকে জানিয়ে প্রতিকার চান। এতে রেগে গিয়ে মা-ছেলে মিলে তাকে নির্যাতন করে। এমন পরিস্থিতিতে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ৩০ এপ্রিল বাসা থেকে বের হয়ে সড়কে গিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই যুবতী। এ সময় স্থানীয়রা তা দেখে ফেলায় এই যাত্রায় রক্ষা পান তিনি। এমন ঘটনার পর বিষয়টি চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের নজরে পড়ে। পরে তিনি ঘটনার ভুক্তভোগী তরুণীকে উদ্ধার করে সদর মডেল থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেই। কিন্তু পুলিশ যাওয়ার আগেই অভিযুক্ত যুবক এবং তার বাবা পালিয়ে যায়। তবে তার মাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আশা করি, খুব দ্রুতই অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘২২ ধারায় ভিকটিম ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছে। ঘটনা সত্য। বাড়ির আশপাশের লোকজনও আমাদের জানিয়েছে মেয়েটিকে মাঝে মধ্যেই মারধর করতো তারা। বিষয়টি বাড়ির মালিককেও বিভিন্ন সময় জানানো হয়। ভুক্তভোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। আমরা তাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠাব। তার অভিভাবক তাকে নিতে চাইলে নেবে। না হলে আমরা একটা ব্যবস্থা করব।’

এ বিষয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ জানান, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহকর্মী তরুণীর কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে ওই পরিবারের ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। গত শনিবার চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে গৃহকর্মীর। এর আগে মামলার প্রেক্ষিতে শহরের ওয়ারলেস এলাকার বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় নিলয়ের মা শাহনাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *