কচুয়া প্রতিনিধি
সোহাগ হোসেন একজন শারীরিক বাক প্রতিবন্ধী। বয়স ৩৪ বছর। জীবন সংগ্রামে কখনো হারতে চাননি তিনি। একজন প্রতিবন্ধী হয়েও পরিবারের বোঝা কাঁধে নিয়ে চলছে তার সংসার। ভিক্ষা কিংবা কারো কাছে হাত পেতে নেয়ার অভ্যাস নেই তার। তাইতো নিজের পায়ে দাঁড়াতে এখন সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ক্ষুদ্র ঋন নিয়ে চলে তার মেশিনারীজ ব্যবসা। ভবিষ্যতেও ঋনের পরিমান বেশি নিয়ে তার ব্যবসায় বড় পরিসরে বাড়াতে চান তিনি। বলছি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পালাখাল গ্রামের শারীরিক বাক প্রতিবন্ধী সোহাগের কথা।
জানা যায়, উপজেলার পালাখাল গ্রামের অধবাসী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জোহর আলীর ছেলে সোহাগ হোসেন শৈশবে কেটেছে তার কষ্টে। পালাখাল গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। বাবা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জোহর আলী ও মা মাজেদা বেগমের ২য় সন্তান সোহাগ হোসেন শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধী। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫জন। বর্তমানে পরিবারের সদস্যদের ভরনপোষন কিংবা নিজের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রথমত তাকে অনেকে ঘৃনার চোখে দেখলেও এখন আর দেখে না, কারন নিজেই কারো কাছে হাত না পেতে ব্যবসায় চলে তার সংসার।
পরিবারের অস্বচ্ছলতার কারণে বেশি একটা লেখাপড়া করতে পারেনি। যতটুকু শিখেছে ততটুকু নিয়ে সাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। চাকরি কিংবা কারো উপর বোঝা না হয়েও পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সে। এতে কষ্ট পেলেও মনোবল হারাননি সোহাগ। সব প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে জীবনযুদ্ধে হার না মানা তরুণ সোহাগ হোসেন এখন আর কারও বোঝা নন। দারিদ্র্য আর সামাজিক বাধা-বিপত্তি-যন্ত্রণা হারিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন অনুসরণীয়।
সোহাগ হোসেনের বাবা জোহর আলী ও মা মাজেদা বেগম বলেন, সন্তানের এই অস্বাভাবিকতা ছিল বড় দুশ্চিন্তার কারণ। বহু চিকিৎসায়ও ফল মেলেনি। একপর্যায়ে সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা রেখে ছেলেকে কিছুটা শিক্ষিত করলেও দারিদ্র্যতার কারনে তেমনি একটা পড়াতে পারিনি। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কষ্টে জীবন-যাপন করছি। আমাদের ছেলে প্রতিবন্ধী সোহাগ এখন ছোট-খাটো মেশিনারীজ ব্যবসা করে। যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ চলে। ছেলের সফলতা কামনায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।
শারীরিক প্রতিবন্ধী সোহাগ হোসেন বলেন, ছোটবেলায় আমার ইচ্ছে ছিল ভালো পড়াশুনা করে চাকরি করব। কিন্তু দারিদ্র্যতার কষাঘাতে তা আর হলো না। পরে নিজের পায়ে দাড়াতে এখন দিয়েছি ছোট একটি মেশিনারীজ ব্যবসা। উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে ক্ষুদ্র্র ঋণ নিয়ে ব্যবসা করার জোর দেন। সেখান থেকে তার সাফল্যের যাত্রা শুরু। প্রথমে ১০ হাজার টাকার ঋন নিয়ে পরবর্তীতে তিনি ২০ হাজার টাকার ঋন নেন। এভাবে ব্যবসার আয় দিয়েই তিনি ঋণ শোধ করেন। তারপর আর সোহাগ হোসেনকে পেছনে তাকাতে হয়নি। সোহাগ মনে করেন প্রতিবন্ধিত্বের জীবন বড়ই কষ্টের। প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ থেকে সুবিধা নিয়ে অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে মেশিনারীজের মালামাল অনেক দাম। তাই সমাজসেবা থেকে বড় আকারে ঋন নিয়ে ব্যবসা করতে চান তিনি।
কচুয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মক