ঘুরে দাঁড়াতে চায় কিন্ডারগার্টেন

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকার পর রোববার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো খুলছে কিন্ডারগার্টেন। প্রাক-প্রাথমিক স্তর ছাড়া অন্য সব শিক্ষার্থীই ফিরবেন ক্লাসে।

সরকারের সিদ্ধান্তে খুশি পরিচালক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। ইতিমধ্যে ধুয়ে-মুছে ক্লাস নিতে প্রস্তত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার সেজেছে রঙিন সাজে। শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে অপ্যায়নের।

গত দেড় বছরে প্রতিষ্ঠান থেকে হারিয়ে গেছে অনেক শিক্ষার্থী, বাকি পড়েছে বাড়ি ভাড়া, কর্মচারীর বেতনসহ আনুষঙ্গিক খরচ, নতুন বছরে ভর্তির সংখ্যাও কম। এমন পরিস্থিতিতেও ঘুরে দাঁড়াতে চান প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। তবে অধিকাংশ শিক্ষকের টিকা না পাওয়া নিয়েও তাদের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ।

সারা দেশের নামিদামি স্কুলগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম সাধারণত প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু হয়। আর বেশিরভাগ সরকারি মাধ্যমিকে কার্যক্রম শুরু হয় তৃতীয় শ্রেণি থেকে। এর আগ পর্যন্ত অভিভাবকদের অন্যতম পছন্দ কিন্ডারগার্টেন। প্লে, নার্সারি, কেজিসহ বিভিন্ন শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়। তবে উল্লেখিত তিন শ্রেণিতেই মূলত শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি থাকে। কিন্তু কিন্ডারগার্টেন খুললেও বন্ধ থাকছে প্রাক-প্রাথমিক স্তর। আর এতে দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের সংকট।

এ ছাড়া গত দেড় বছরে প্রতিষ্ঠান থেকে হারিয়ে গেছে অনেক শিক্ষার্থী। নতুন বছরে ভর্তির সংখ্যাও কম। অন্যদিকে দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও মাফ হয়নি বাড়ি ভাড়া, এ ছাড়া কর্মচারী না থাকায় পড়ে পড়ে নষ্ট হয়েছে স্কুলের আসবাবপত্র। ফলে সবকিছুই নতুন করে তৈরি করতে হয়েছে। অধিকাংশের মাথায়ই চেপে বসেছে বিশাল ঋণের বোঝা। তবুও স্কুল খোলায় খুশি পরিচালক, অধ্যক্ষরা।
কিন্ডারগার্টেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশেন বাংলাদেশের মহাসচিব এবং রাজধানীর শাহজাদপুরের সোলাইমান কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক মো. সোলাইমান হোসেন বলেন, স্কুল খুলে দেওয়ায় সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। সরকারের সব নির্দেশনা মেনে স্কুল খোলা হবে। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

ফেডারেশন অব কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচির মনির হোসাইন বলেন, গত দেড় বছরে প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী হারিয়ে গেছে। এখন স্কুল খোলার খবরের শিক্ষার্থীরা ক্লাস করার জন্য যোগাযোগ করেছে। অনেক শিক্ষার্থী আরার বিভিন্ন কাজে যোগ দিয়েছে।

ঢাকা কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের প্রচার সম্পাদক এবং ফিউচার স্টার স্কুলের পরিচালক তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় দেড় বছর বন্ধ কিন্ডারগার্টেনগুলোর অধিকাংশেরই ভাড়া ও শিক্ষকদের বেতন বাকি এক বছরের। কারও কারও আরও বেশি। সেসব দায় কাঁধে নিয়ে এখনো যারা টিকে আছেন তারাই খুলতে পারছেন স্কুল।

অনেকের বিদ্যালয়ে ভাড়া নেওয়া বাড়ির মালিক তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন। অনেকে স্কুল দিনের পর দিন বন্ধ থাকায় স্কুল ছেড়েও দিয়েছেন। আবার শিক্ষার্থীদের অনেকেই ঝরে পড়েছে। অভিভাবকদের অনেকে ঢাকা ছেড়ে দিয়েছেন। আবার অনেকে বসবাস থেকে টাকা বাঁচাতে এলাকা পরিবর্তন করেছেন।

তিনি আরও বলেন, সব মিলিয়ে স্কুল খুললে সার্বিক পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হবে। আপাতত যা বলা হচ্ছে তা বায়বীয় তথ্যে।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই গণমাধ্যমকে জানান, আমাদের কোনো সার্ভে নেই। আমাদের ধারণা, সারা দেশে কিন্ডারগার্টেনে ১০ লাখের মতো শিক্ষক আছেন। এই শিক্ষকদের ৫০ শতাংশ এখনো করোনার টিকা পাননি। শিক্ষকরা নিজ উদ্যোগে টিকা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমি নিজেও টিকা নেওয়ার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখনো টিকা পাইনি।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কিন্ডারগার্টেনগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। এজন্য সরকারের কাছে আমরা একটি প্রণোদনা চেয়েছি। আমাদের ধারণা বছরের শুরুতে যে শিক্ষার্থীরা কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হয়েছিল এখন তার ১০-১৫ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। আমার স্কুলেই ২০০ জনের মতো ভর্তি হয়েছিল। তার মধ্যে যোগাযোগ রেখেছে মাত্র ২০-২৫ জন। সব কিন্ডারগার্টেনের একই অবস্থা।

সময় ডেস্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *