চাঁদপুর সদর হাসপাতালে দালাল ঠেকাতে নয়া উদ্যোগ : খাদ্যের ঠিকাদার ও ফার্মেসীর দত্ত বাবুকে জরিমানা

এম কে এরশাদ

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের খাদ্যের ঠিকাদারের অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং দালালদের দৌরাত্মের পাশাপাশি হাসপাতালের ভিতরে ওষুধের দোকানে ন্যায মূল্যে ওষুধ বিক্রি শতকরা ৩০% ছাড় লেখা থাকলেও তার কিছুই ছাড় দেয়নি দোকান মালিক দত্ত বাবু।

দীর্ঘ দিন হাসপাতালে অনিয়ম দুনীতি চলে আসলেও এর কোন প্রতিকার হয়নি এতোদিন। থামছেনা দালাল দৌরাত্ম। হয়রানির শিকার সাধারণ রোগীরা। খাবারে ভেজাল এবং ওষুধের

দোকানে বেশী দামে ওষুধ বিক্রি ও মেয়াদ উত্তিন ওষুধ রাখায় তাদের বিরুদ্ধে চাঁদপুরের ভোক্তা অধিকারের ভ্রম্যমান আদালত ৩৫ হাজার টাকা জরিপানা আদায় করেন। গতকাল

রবিবার ২৮ শে আগস্ট দুপুর দেড়টার সময় হাসপাতালের খাদ্যের ঠ্কিাদার সুনজিৎকে ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা জরিমানা করা হয় এবংমেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ রাখার দায়ে ফার্মেসী

মালিক দত্ত বাবুকে ১৫,০০০/- টাকা জরিমানা করেন চাঁদপুর জেলা ভোক্তা অধিকার। ভোক্তা অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলার সহকারী পরিচালক নুর হোসেন এর নেতৃত্বে চাঁদপুর সদর

হাসপাতালে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় তিনি বলেন,‘চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা বিভিন্ন যায়গায় অভিযান পরিচালনা করি।’ তার মধ্যে

 

চাঁদপুর হাসপাতালের ভিতরের ওষুধের দোকানে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ রাখায় দোকান মালিক দত্ত বাবুকে ১৫ হাজার টাকা জরিপানা করেছি এবং হাসপাতালের খাদ্যে অনিয়ম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা না থাকায় কন্টেট্টার সুনজিৎকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করি। আমরা বলে দিয়েছি যেন খাদ্য আর যেন কোন ধরনের অনিয়ম না হয়। আর হাসপাতালের পাশে

 

ওষুধের দোকানে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ রাখায় বেশি দামে রোগিদের কাছে ওষুধ বিক্রি করার অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে আমরা আবারো জরিমানা আদায় করবো।

এদিকে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা সরকারি জেনারেল হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য দীর্ঘদিনের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের বেশ কয়েকবার অভিযানের পরেও তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ

করা সম্ভব হচ্ছিল না। রোগীদের সাথে প্রতারণা করে তারা প্রতিদিন আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠে। এসব কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখন চিকিৎসা সেবা কাজে নিয়োজিত

কর্মচারীদেরকে দালালদের কাছ থেকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে এপ্রোণ দিয়েছেন। প্রতিদিন হাসপাতালে এপ্রোন পরে আসা বাধ্যতামূলক।

গতকাল রবিবার (২৮ আগষ্ট) সকালে হাসপাতালে গিয়ে জরুরি বিভাগ ও বিভিন্ন চিকিৎসকের কক্ষে এপ্রোন পরা আউট সোর্সিং কর্মীদেরকে পাওয়া যায়।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ৫৮জন কর্মচারি আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে কাজ করেন। এর মধ্যে সকাল ৮টা থেকে ৮ঘন্টা কাজ করেন

২৬জন। পরবর্তীতে ৮ ঘন্টা করে ১৬জন কর্মী দুই শিফটে কাজ করেন।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহবুবুর রহমান বলেন, দালালের সমস্যা দীর্ঘদিনের। আমি ১১ মাস দায়িত্বে আছি। দালাল নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সময়ে

অভিযান হলেও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে আউট সোর্সিং এ কাজ করা কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে এপ্রোনের ব্যবস্থা করি। গত এক সপ্তাহ এপ্রোন পরা চালু হয়েছে। কোন

কর্মচারি এপ্রোন না পরে কাজে এসে অভিযানে আটক হলে আমাদের কোন সুপারিশ থাকবে না।

ইতিপূর্বে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বার বার উদ্যোগ নিয়েও দালালদের দৌরাত্ম থামাতে ব্যর্থ। আর এর জন্য বার বার হাসপাতালের সেবার মান ও তত্ত্বাবধান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সম্প্রতি সদর হাসপাতালে দালাল চক্রের দৌরাত্ম এতোটাই বেড়ে যায় যে, এতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে সাংবাদকিদের ব্যাপক ভূমিকা রাখতে দেখা যায়। এর ফলশ্রুতিতে কর্তৃপক্ষ নতুন

এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়। তবে সূত্র জানায় দালালদের দৌরাত্ম ঠেকাতে আরো উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। মানুষ যাতে নির্ভিঘ্নে সরকারি সেবা গ্রহণ করতে পারে সেই

জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাবে। এতে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানা যায়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *