চারপাশে পারিবারিক সহিংসতা বেড়েছে। শুধু বাড়াই নয়, তা রীতিমতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। ফলে হত্যার মতো জঘন্য অপরাধও অবলীলায় সংঘটিত হচ্ছে। একের পর এক তুচ্ছ কারণে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এক সময় নানান দ্বন্দ্ব-সংঘাত থেকে যে জঘন্য অপরাধের কথা শুধু বাইরেই ঘটার কথা জানা যেত, আজ তা ঘরেও ঢুকে পড়েছে। পুনঃপুন এ ধরনের জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে ঘরে ও পরিবারে। যা নির্মমতা ও নৃশংসতাও ক্রমেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে সব মাত্রা।
প্রতিদিনই অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। তার কোনোটি খবরের কাগজে আসছে, কোনোটি হারিয়ে যাচ্ছে, তলিয়ে যাচ্ছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। যেসব ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদপত্রে এসেছে, সেই বর্ণনাগুলো আমাদের সমাজের জন্য খুব সুখকর না। বরং তা একটি বাজে সময়েরই বার্তা বহন করছে।
সংবাদমাধ্যম থেকে তুলে আনা প্রতিটি ঘটনার দিকে তাকালে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, এর প্রতিটির পেছনেই কাজ করেছে এক ধরনের লোভ, লালসা। কখনো সেই লোভ সম্পত্তির, আবার কখনো তা ভেতর থেকে জেগে ওঠা আদিম সত্তার। তবে তার সবাই যে মানসিক বিকৃতি, ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে ওঠা ভেতরের অপরাধপ্রবণতাÑ এক ধরনের বিকৃতি তা অস্বীকারের সুযোগ নেই। তবে এই যে হিং¯্র হয়ে ওঠা, আমাদের ভেতরে পশুবৃত্তি জেগে ওঠা, এর পেছনে নিশ্চয় মনস্তাত্ত্বিক কারণ রয়েছে।
রয়েছে সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যাও। তবে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলো বা কিছু আগের যেসব চাঞ্চল্যকর ঘটনা সমাজে আলোড়ন তুলেছে, ছাপ ফেলেছে, সে সবের বিশ্লেষণ করে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সমাজের এই পরিবর্তনের পেছনের কারণ অনুসন্ধান করে তা সমাধানের ইঙ্গিত দেবেন। তবে তার আগে আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে সমাজের এই বদলে যাওয়া চেহারা থেকে পরিত্রাণের পথ।
আজ খুব দ্রুত ভেঙে পড়ছে আমাদের সামাজিক প্রথা। অনেক আগেই ভেঙে গেছে যৌথ পরিবার। এমনকি সমাজের সুস্থতার জন্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে ভূমিকা থাকা দরকার তাও আজ যথাযথভাবে পালন হচ্ছে বা প্রতিষ্ঠানগুলো যে দায়িত্ব পালন করতে পারছে- এ কথাও নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই।
সমাজের যে ভারসাম্য দীর্ঘদিন থেকে প্রতিষ্ঠিত, তা কিন্তু আজ হঠাৎ একদিনে ভেঙে পড়ার প্রবণতা তৈরি হয়নি। এর পেছনেও দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, বিভেদের সীমানা টানা, শ্রেণিকরণ প্রবণতা এবং উঁচু ও নীচুর মধ্যে ফারাক দেখিয়ে দেওয়াও যে বহুলাংশে দায়ী নয়- বর্তমান অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য এসবও চিহ্নিত করা জরুরি। সমাজ বিবর্তনের পথ ধরে স্বার্থের যে প্রচ্ছন্ন ভূমিকা, শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজেকে, ব্যক্তিকে বড় করে তোলার প্রবণতা, আধুনিকতাকে সঙ্গী করে নিত্য নতুন ভোগ ও বিলাস দ্রব্যের প্রতি দুর্বার আকর্ষণ, একই সঙ্গে চিন্তার দীনতাকে স্পষ্ট করে যে নীতিহীন অসহিষ্ণুতার চর্চা প্রতিনিয়ত সংঘাতের পথকে উসকে দিচ্ছে, সেই দ্বন্দ্বকেও আজ অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে সমাজ ও পরিবারে আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় করার বাইরে এই সংকট থেকে উদ্ধারের পথ সহজ নয়।
কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল