দেশের খাদ্যের বড় চাহিদার অংশ হলো মাছ। মাছ আমিষের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক চাহিদাও পূরণ করতে পারে। দেশে মাছের চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ফলে আমাদের দেশে আবাদি জমি ও মৎস্য চাষের জায়গা দিনদিন কমে যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য তাই সীমিত জায়গার সঠিক ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিনির্ভর মাছ চাষ অল্প জায়গায় বেশি মাছ উৎপাদন উপহার দিতে পারে।
বর্তমানে বৃদ্ধি পাচ্ছে মাছ চাষের নানা ব্যবস্থা। পুরানো পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে অনেক মৎস চাষি লোকসানের সম্মুখীন হয়, তাই মাছ চাষের খরচ কমানোর জন্য এসেছে নতুন ধারার অনেক প্রযুক্তি।
বর্তমান সময়ে প্রযুক্তিনির্ভর মাছ চাষের বহুল আলোচিত পদ্ধতি হল বায়োফ্লক।আয়তনে ছোট আমাদের বাংলাদেশে মাছ চাষের জন্য খুবই উপকারী। পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে অনেকে মাছ চাষ করতে পারে না। সেক্ষেত্রে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ একটি উৎকৃষ্ট সমাধান।
কারণ, এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের খুবই অল্প জায়গা প্রয়োজন। বায়ো শব্দের অর্থ জীবন আর ফ্লক শব্দের অর্থ আলতোভাবে লেগে থাকা কণা সমষ্টি। বায়োফ্লক হলো উপকারী ব্যাকটেরিয়া, অণুজীব ও শৈবাল দিয়ে গঠিত পাতলা আস্তরণ, যা পানিকে ফিল্টার করে এবং পানি থেকে নাইট্রোজেন জাতীয় ক্ষতিকর উপাদানগুলি শোষণ করে নিয়ে অধিক প্রোটিন যুক্ত খাবার (ফ্লক) তৈরি করে। উৎপাদিত এই অধিক প্রোটিন যুক্ত খাবার মাছ গ্রহণ করে দ্রত বেড়ে উঠে।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছের জৈব বর্জ্য হতে পুনর্ব্যবহারযোগ্য খাবার তৈরি হয়। বায়োফ্লক প্রযুক্তির সিস্টেমের উপকারী ব্যাকটেরিয়া মাছের অব্যবহৃত খাদ্য, মল-মূত্র থেকে অণুজীব প্রোটিন (ফ্লক) তৈরি করে ফলে কম খাদ্য সরবরাহ করলেও হয়। তাই বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ লাভজনক টেকসই ও পরিবেশবান্ধব। এই পদ্ধতিতে ৩০% পর্যন্ত মাছের খাবার সাশ্রয় হয়।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রকার মাছ করা যায়। যার মধ্যে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে তেলাপিয়া, শিং, পাবদা, গুলশা, রুই মাছ চাষ শুরু হয়েছে। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের সবচেয়ে উপকারী দিক হলো, এটি অল্প জায়গায় করা যায় এবং বেশি পরিমাণ মাছ উৎপাদন করা যায়। খাদ্যের পুনর্ব্যবহার হয় বলে খাবারের অপচয় অনেক কম হয়।
প্রাকৃতিক ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহার করা হয় বলে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে, ফলে খামারকে রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা করা যায়। প্রকৃতিতে বিদ্যমান উপকারী ব্যাক্টেরিয়া প্রয়োগ করা হয় বলে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ খুবই পরিবেশ বান্ধব। পুকুরের সমান পরিমাণ জায়গায় কম সময়ে বায়োফ্লক ২০ গুণ বেশি মাছ উৎপাদন করা যায়।
কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল