জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়, ৪ ঘন্টা পর বিদ্যুৎ স্বাভাবিক হলো চাঁদপুরে

স্টাফরিপোর্টার

জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। ফলে দেশের বেশিরভাগ স্থানে বিদ্যুৎ নেই।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক শামীম হাসান বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চলছে। গতকাল এই

বিপর্যয়ের মধ্যে চাঁদপুরে খুব দ্রুতই মাত্র ৪ ঘন্টার ব্যবধানে বিদ্যুৎ সাভাবিক হয়ে আসে।

কখন বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষ। তবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ চালুর চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে ডিপিডিসি

ও ডেসকো।

বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রীডে কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) জানিয়েছ, জাতীয় গ্রীডে ত্রুটির কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ

সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।

পিজিসিবি আরও জানিয়েছে, জাতীয় গ্রীডের ত্রুটি ঠিক করার জন্য এরিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এ ধরণের পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে আট থেকে দশ ঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে।

পিডিবির কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার দুপুর দুইটা পাঁচ মিনিটে এই বিপর্যয় ঘটে। ফলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লার বড় অংশে বর্তমানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। দুপুর তিনটা দশ মিনিটের দিকে যমুনা নদীর

পাড় থেকে টঙ্গী পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা গেছে। বাকি অংশে কাজে চলছে। তা কত সময় লাগবে সেটা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।

কিছুক্ষণ আগে জানা গেছে, খুলনা অঞ্চল বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। উল্লেখ্য, জাতীয় গ্রীডে এমন ধরনের বড় বিপর্যয় সবশেষ ঘটেছিলো ২০১৪ সালে।

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার স্বাভাবিক গতি চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। পাশাপাশি বাসাবাড়িতে পানি সংকট ও বহুতল ভবনে লিফট

বন্ধ থাকায় বেশ কষ্ট পেতে হয় নগরবাসীকে।
মঙ্গলবার বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থাকা রোগীরা নানামুখী ভোগান্তিতে পড়েন। জরুরি বিভাগে এ সমস্যা ছিল প্রকট। রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-

নিরীক্ষার মেশিনগুলো বিদ্যুতের অভাবে চলছিল না। ওয়ার্ড থেকে হাসপাতাল বারান্দা-টয়লেট কোথাও বিদ্যুৎ নেই। কেউ কেউ মোমবাতি জ্বালিয়ে অবস্থান করছিলেন। আবার অনেকে হাতপাখা দিয়ে রোগীদের

বাতাস করছিলেন। চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও নিরাপত্তাকর্মীরা রোগীদের চিকিৎসা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।
বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালের সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। বিলের পেমেন্টসহ দাপ্তরিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। অনেক চিকিৎসক চেম্বারে এসে বিদ্যুৎ না থাকায় রোগী না দেখে চলে গেছেন।

মঙ্গলবার বিকালে ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (অর্থ ও স্টোর) ডা. আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের জানান, একান্তভাবে যেখানে প্রয়োজন সেখানে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউ ও ওটিতে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জেনারেটর টানা ১২ ঘণ্টা চলবে, তার পর সম্ভব নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুপুর থেকেই রাজধানীর সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিক জেনারেটরের মাধ্যমে চালিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হয়। এসব হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বলছেন, দ্রুততম

সময়ে বিদ্যুৎ না এলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। দুপুর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় রোগী স্বজনরা বারান্দায় অবস্থান নেন। সাধারণ ওয়ার্ডগুলো একেবারেই অন্ধকার ছিল। কিছু

হাসপাতাল ২ ঘণ্টা জেনারেটর চালিয়ে ২ ঘণ্টা বন্ধ করে আবারো চালু করে রোগীদের সহায়তা করছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন হাসপাতাল স্টাফ জানান, কোনো হাসপাতালেই পর্যাপ্ত ডিজেল রাখা হয়নি। এ ক্ষেত্রে রাজধানীর বিভিন্ন পেট্রল পাম্পও বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ ছিল। ফলে পেট্রল না মেলায় বহু হাসপাতালে জেনারেটরও চালানো সম্ভব হয়নি। হাসপাতালে পানিরও চরম সংকট দেখা দেয়।
এদিকে শুধু হাসপাতাল নয়, আবাসিক এলাকায় বিদ্যুতের অভাবে পানি উত্তোলন না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে পানি সংকট চরমে উঠে। বিদ্যুৎহীনতার মধ্যে বাসাবাড়িতে পানির সরবরাহ না থাকার ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। খাবার পানি থেকে শুরু করে রান্না-বান্না, গোসল আর নিত্যকার কাজে সংকটের মধ্যে পড়েছেন তারা। লিফট বন্ধ থাকায় উঁচু ভবনে উঠানামায়ও কষ্টের মুখোমুখি হয়েছে মানুষ।
পুরান ঢাকার ইসলামপুরের ব্যবসায়ী মিলন চৌধুরীর জানান, পুরান ঢাকা এমনিতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। বেলা ২টার পর বিদ্যুৎ চলে যায়। সেই থেকেই আতংক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। ওই সময় পানি সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়। মসজিদ থেকে মাইকিং করা হয় অযু করে নামাজে যেতে। মসজিদে পানির সংকট দেখা দেয় বিদ্যুৎ যাওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই। দুপুরের দিকে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় রান্না-বান্না, গোসল করার ক্ষেত্রে বিশেষ সমস্যায় পড়তে হয় বাসিন্দাদের।
সেগুনবাগিচার বেশ কয়েকটি উঁচু ভবনের স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক ঘণ্টা ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টার পর আর সম্ভব হয়নি। তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় ঢাকার বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে ডিজেলের জন্য দেখা দিয়েছে লম্বা লাইন। সেখানেও যথাযথ তেল পাওয়া যাচ্ছিল না। দুপুরের পর থেকেই লোকজন কনটেইনার নিয়ে তেলের জন্য বিভিন্ন তেলের পাম্পে ভিড় জমায়।
এদিকে হাতিরঝিল এলাকায় লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে বিকাল থেকেই। বিদ্যুৎবিহীন বাসাবাড়ি-ভবনে থাকা সাধারণ লোকজন ঝিলের পাড়ে অবস্থান নেন। সুজন নামের এক বাসিন্দা জানান, তিনি হাতিরঝিল ঢাল পাড় থাকেন। তিনি শুধু নন, প্রায় শতাধিক মানুষ বাসা-বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাতিরঝিলে অবস্থান নেন- একটু স্বস্তি পাওয়ার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *