করোনায় স্কুল বন্ধ থাকার সময় চাঁদপুরে অনেক শিক্ষার্থী বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন কাজে যোগ দেয়। অনেক মেয়ে শিশুর বিয়ে দিয়ে দেন বাবা-মা। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এসব শিক্ষার্থী আর স্কুলে যাচ্ছে না।
গত কয়েক দিন ধরে স্কুল খোলা হলেও তাদের উপস্থিত হতে দেখা যায়নি বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে কত শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না তা নির্দিষ্ট করে সংশ্লিষ্টরা বলতে না পারলেও ধারণা করা হচ্ছে কয়েক হাজার হবে।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার পেছনে অতিমাত্রায় শিক্ষাব্যয়কে অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সমাজের দরিদ্র ব্যক্তিটিও চান, তার সন্তান লেখাপড়া করুক। কিন্তু শিক্ষা নিয়ে দেশে যে ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে; নোট-গাইড আর প্রাইভেট-কোচিংয়ের যে দৌরাত্ম্য চলছে- কম আয়সম্পন্ন পরিবারগুলো এ ‘ধাক্কা’ সামলাতে পারছে না বলেই ঝরে পড়ার ঘটনা ঘটছে।
অবশ্য এক্ষেত্রে আর্থিক অসঙ্গতি যেমন দায়ী, তেমনি বাল্যবিয়ে ও কুসংস্কারসহ নানা ধরনের সমস্যাও রয়েছে। আইনগত বিধিনিষেধ থাকার পরও দেশে বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে; না হলে শিক্ষাবঞ্চিত শিশুরা একদিন দেশের জন্য বোঝা হয়ে উঠতে পারে।
শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা ও ধরে রাখার জন্য সরকার প্রতিবছর ‘উপবৃত্তি’সহ অন্যান্য খাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। পাশাপাশি বিনামূল্যে বই ও খাবার দেয়া হচ্ছে। এরপরও বিভিন্ন পর্যায়ে এত অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী কেন ঝরে পড়ছে, এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নকামী একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে শিক্ষাকে আরো এগিয়ে নেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। অথচ মাধ্যমিকসহ অন্যান্য পর্যায়ে প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ছিটকে পড়ছে, যা মেনে নেয়া কষ্টকর।
শিক্ষা খাত নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পর্যালোচনামূলক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তির সাড়ে ৮৮ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। মূলত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরাই এ শ্রমশক্তির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এর পেছনে রয়েছে দারিদ্র্য। দারিদ্র্য দূর করা না গেলে শিক্ষা ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের স্বপ্ন সুদূরপরাহত থেকে যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাছাড়া স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও দরিদ্র ও বিত্তবানদের মধ্যে এখনও বড় ধরনের ফারাক রয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য বৈষম্য দূর করার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এ পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণা ও কথাবার্তা কম হয়নি; যার অধিকাংশই অব্যবস্থাপনা, অদূরদর্শিতা, দুর্নীতি ও রাজনীতিকরণের ঘূর্ণাবর্তে এরইমধ্যে হারিয়ে গেছে। মাধ্যমিকসহ অন্যান্য পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করতে হলে এগুলো সযত্নে পরিহারের পাশাপাশি সরকার এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল