দীর্ঘ ১৮ মাস পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। এর আগেএতো লংটাইম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নজির শুধু বাংলাদেশ কেন পৃথিবীর কোথায়ও নেই। ২০২০ সালে পৃথিবীতে করোনা মহামারি হানা দেয়ার পর থেকে এর নির্মম শিকারে পরিনত হয় নতুন প্রজন্ম তথা শিক্ষার্থীরাই। যারা লেখাপড়া নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করতো তারা হঠাৎ করেই হয়ে যায় একেবারে নিঃসঙ্গ। সহপাঠিদের থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপনের ফলে অধিকাংশরাই ঝুঁকেছে অনলাইনের দিকে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের জীবনে এক বিপর্যয় নেমে আসে।
বলতে গেলে দীর্ঘ দেড় বছরের অবসর জীবনের ইতি টেনে অবশেষে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে আবারো স্কুলগামী হয়ে শিক্ষাীর্থরা যেন এক নতুন জীবন ফিরে যায়। সেই বই, কোচিং, আড্ডা আর খেলাধুলার জীবন ফিরে পেয়ে শিক্ষার্থীদেরকে অনেক উচ্ছ্বসিতদেখা যাচ্ছে। কথায় আছে ‘বন্যরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃকোড়ে।’ আবারো প্রমাণীত হলো‘শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই মানায় অন্য কোথায়ও নয়।’ শ্রেণীকক্ষে যে শিক্ষা দেওয়া হয় সেটা কি আর অনলাইনে ক্লাস করে পাওয়া যায় ? অবশ্যই নয়। বরং হঠাৎ করেই শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে অনলাইন মুখী হয়ে নৈতিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে বৈকি।
শিক্ষাপ্রতিন্ঠান খোলার সময় দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে বলতে গেলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা বাবা-মায়ের নিয়ন্ত্রনের বাই চলে যায়। অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কারণে প্রতিটি শিক্ষার্থীই এর জন্য এক মহাযাতনা ভোগ করেছে যে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। দেড় বছর পর হলেও আবারো ক্লাস মুখী হতে পেরে সবাই যেমন উচ্ছ্বসিত তেমনি এসব শিক্ষার্থীদের একটা বিরাট অংশই অকালেই ঝড়ে পড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। অনেকে শিক্ষা জীবনের ইতিটেনে স্থায়ীভাবে কাজ কর্মে ঢুকে পড়েছে।
আবার অনেকে সাময়িক কাজে কর্মে গেলেও ফেরা নিয়ে রয়েছে অনেক সংশয়। ঐসব শিক্ষার্থীদের আবার ক্লাসে ফেরানোই এখন বড়ো চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন শিক্ষকরা।
অনেক পরিবারে করোনা শুধু শিক্ষা জীবনকেই বিপর্যস্ত করেনি করেছে নিঃস্বও। অর্থনৈতিক যাঁতাকলে পড়ে অকালেই বিয়ের বিড়িতে বসতে হয়েছে অনেক শিক্ষার্থীকে। অনেক বাবা-মাকে সন্তানের শিক্ষা বিমুখতার সুযোগে নৈতিক স্খলনের দোহাই দিয়ে মেয়েকে দ্রুত বিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠতে দেখা গেছে। যা ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক। ঐসব শিক্ষার্থীরা আর ক্লাসে ফিরতে পারবে না যে এটাই এখন কঠিন বাস্তবতা।
একজন শিক্ষাীর্থর জন্য ১৮ মাস শিক্ষা থেকে দূরে থাকা অনেক বড়ো একটি চ্যালেঞ্জ। নতুন করে স্কুলে গিয়ে সিলেবাস আয়ত্ব করা তার জন্য কতটা সম্ভব সেটাই এখন দেখার বিষয়। সিলেবাস শর্ট করে একটি স্ট্যান্ডারতার আনতে না পারলে পরবর্তি শ্রেণীতে যথাযথ মূল্যালয়ন কতটা সম্ভব হবে সেটা দেখতে হবে।
তবে শিক্ষার্থীরা কতটা উপযোগী সিলেবাস পাবে তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের ক্লাসে ফেরা। সবাই ক্লাসে ফিরতে পারছে এটাই এখন বড়ো বিষয়। আমরা মনেকরি খুব শিঘ্রই সীমিত ক্লাশ থেকে পরিপূর্ণ ক্লাশে ফিরবে শিক্ষার্থীরা।
করোনা মহামারির প্রাদূর্ভাব যদি বেড়ে যায় সে ক্ষেত্রে আবারো স্কুল বন্ধের ঘোষণাও দেয়া হয়েছে ইতিমধ্যে। আমরা মনেকরি করোনা নিয়ন্ত্রণে শিক্ষাীর্থদেরকে দ্রুত টিকা প্রদানের জন্য ব্যবস্থা করা এখন অপরিহার্য। কোন হাসপাতাল বা টিকা কেন্দ্রে নয় বরং শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই টিকা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। এতে একদিকে হয়রানীও কমবে এবং সময়ও বেচে যাবে।
তাই সময় ক্ষেপন না করে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিকা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করলে কোন শিক্ষার্থীকেই শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রেখে টিকা গ্রহণ করতে হবে না। আমরা মনেকরি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে দেখবেন। যত দ্রুত সম্ভব এই উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বন্ধ রাখতে হবে না। এভাবে দেশের সকল মানুষকে টিকা প্রদান নিশ্চিত করা হলে এবং সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে অবশ্যই আমরা করোনা মহামারি থেকে মুক্ত হতে পারবো ইনশাআল্লাহ।