তারা চেয়েছিল এ জাতি যেন মেধাশূন্য থাকে : জেলা প্রশাসক

স্টাফ রিপোর্টার: চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশ।
তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, ২৫ মার্চ কে জাতীয় দিবস করায় সরকাররকে ধন্যবাদ জানায়। এর কারণে নতুন প্রজন্ম ২৫ মার্চ সম্পর্কে জানতে পারবে। নিজের ইতিহাস না জানলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না। অনেকেই বলেই অতীত জেনে লাভ কি? তারাই বলেন যাদের অতীতে দোষ আছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, ১৯৭০ সনে বঙ্গবন্ধু জয়ী হলেন তখন পাকরা তাঁর কাছে ক্ষমতা দিতে চাচ্ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু খুবই সুকৌশলে ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। সায়মন নামের সাংবাদিক আন্তর্জাতিকভাবে সংবাদ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ২৫ মার্চের কালো রাতে বিভিন্ন কলেজের হলগুলো আক্রমন করেছিল। তারা চেয়েছিল এ জাতি যেন মেধাশূন্য থাকে। এ জাতি যেন আর দাঁড়াতে না পারে। নতুন প্রজন্মকে এ বিষয়ে আরও ভালোভাবে জানা দরকার।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, বর্তমান সময়ে আমাদের যা দরকার, তা হচ্ছে নিজ দেশকে সুন্দরভাবে গড়া। কথা কম বলে কাজ করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক কাজ করে যাচ্ছেন। সবদিকদিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন এদেশকে। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতা আমাদের ধরে রাখতে হবে। এ সাফল্য ধরে রাখতে হলে দূর্নীতিকে না বলতে হবে। আমাদের সচেতন হতে হবে। দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দেশ প্রমিক হয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে। নতুন প্রজন্ম আমাদের দিকে তাঁকিয়ে আছে আমরা কি করি? আমাদের দায়িত্ব কিভাবে পালন করি। তারা আমাদের কাছ থেকেই শিখবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার)। তিনি বলেন, ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংসতম একটি রাত ছিলো এইরাত। এই একরাতে সেদিন প্রায় লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। যারা ছিলেন নিরস্ত্র। জাতির পিতা ৭মার্চ খুব সুকৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। ২৫ মার্চের কাল রাতের নাম ছিলো অপারেশন সার্চ লাইট। এর নীতি ছিলো পোড়া মাটি নীতি।
তিনি আরো বলেন, সেদিন পুলিশের নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আমাদের পুলিশ বাহিনী তৈরী হয়েছিলো, কিন্তু পুলিশের অস্ত্রগার তালা দিয়ে বাড়ি ছিলেন। তার থেকে চাবি আনা হয়েছিলো। যখন খবর আসে দেশ পুলিশবাহিনীর আক্রমন করার আদেশ আসলো, তখন যাদের কাছে অস্ত্র ছিলো না তারা অস্ত্রগার থেকে অস্ত্র নিয়েছিলেন। ১১.৪৫ মিনিটে আমাদের হাসপাতাল থেকে গুলি ছুড়ে ২জন পাকবাহিনী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। পৌনে ১১টা থেকে প্রায় ৩টা পর্যন্ত যুদ্ধ করেছিলেন বীরের সাথে। সম্মুখযুদ্ধে যখন পারে নাই তখন গেরিলা যুদ্ধের জন্যে তৈরী হয়ে যুদ্ধ করে। সেদিন প্রায় ৪শতাধিক পুলিশ সদস্য শহিদ হন।
পুলিশ সুপার বলেন, আমি পুলিশ বাহিনীর সদস্য হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। কারণ প্রথম গুলি পুলিশ বাহিনী করেছিলেন। রক্তের শপথ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বাঙ্গালী জাতির নিজের দেশের জন্যে প্রাণ দিতে কুন্ঠাবোধ করে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে তা চারপাশে তাঁকালেই বুঝা যায়।
সাংবাদিক এমআর ইসলাম বাবু’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, পৌর মেয়র মো. জিল্লুর রহমান, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ, প্রেসক্লাব সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, বিশিষ্ট ছড়াকার ডা. পিযুষ কান্তি বড়ুয়া প্রমূখ।
আলোচনা সভা শেষে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *