তাওবার নামাজ পড়ার নিয়ম

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা : গুনাহ হয়ে গেলে তাওবার নিয়তে নামাজ পড়াকে তাওবার নামাজ বলে। গুনাহ সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ নামাজ পড়া উচিত। বিগত জীবনের গুনাহ থেকে তাওবার নিয়তেও তা পড়া যায়। বিজ্ঞ আলেমদের মতে, তাওবার নামাজ পড়া মুস্তাহাব। কারণ বিভিন্ন হাদিসে তাওবার নামাজের ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এবং বিভিন্ন সাহাবায়ে কেরাম তাওবার নামাজ পড়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। আসমা ইবনুল হাকাম (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি আলী (রা.)-কে বলতে শুনেছি,…তিনি বলেন, আবু বকর (রা.) আমাকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং তিনি সত্যই বলেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যখন কোনো বান্দা কোনো ধরনের গুনাহ করে উত্তমরূপে অজু করে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে এবং আল্লাহর কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫২১)

আমাদের উচিত, কখনো কোনো গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করা। এর একটি উত্তম পদ্ধতি হলো, উত্তমরূপে অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে তাওবা করা।

তাওবা করার সময়সীমা : তিন মুহূর্ত আসার আগ পর্যন্ত মহান আল্লাহ তার বান্দার তাওবা কবুল করেন। কিন্তু এরপর আর তাওবা কবুল করা হয় না। নিম্নে সেই তিন মুহূর্ত তুলে ধরা হলো—
ক. মৃত্যু আসার আগ পর্যন্ত। (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৮)
খ. আজাব চলে আসার আগ পর্যন্ত । (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৮৫)
গ. পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত। (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৫৪)

তাওবার নামাজ পড়ার নিয়ম : তাওবার নামাজের পদ্ধতি ওপরে উল্লিখিত আবু বকর (রা.)-এর হাদিসে স্পষ্ট বর্ণিত আছে। প্রথমে উত্তমরূপে অজু করতে হবে। তারপর একাগ্রচিত্তে নফল নামাজের মতো দুই রাকাত নামাজ পড়বে। তাওবার নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সুরা নেই। তাই যেকোনো সুরা দিয়েই তাওবার নামাজ পড়া যায়। এই নামাজের অজু ও নামাজের মাঝখানে কোনো দুনিয়াবি কাজ বা কথা না বলা উত্তম। কারণ হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার মতো এভাবে অজু করবে, অতঃপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং এর মাঝখানে দুনিয়ার কোনো খেয়াল করবে না, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৫৯)। নামাজ শেষে আল্লাহর তাসবিহ পড়বে, আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং ইস্তেগফার পড়ে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করবে।

তাওবার দোয়া : তাওবার শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো, সাইয়েদুল ইস্তিগফার। নিম্নে তার উচ্চারণসহ অর্থ তুলে ধরা হলো, ‘আল্লাহুম্মা আনতা রব্বি, লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খলাকতানি, ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা, ওয়া ওয়া‘দিক মাসতাতা‘তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবু-উ লাকা বিনি‘মাতিকা আলাইয়া ওয়া আবু-উ বিজাম্বি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’

অর্থ—হে আল্লাহ, আপনি আমার রব, আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আমাকে আপনি সৃষ্টি করেছেন, আমি আপনার বান্দা। আমি যথাসাধ্য আপনার সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকব। আমি আমার নিকৃষ্ট আমল থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই, আপনার যে অসংখ্য নিয়ামত ভোগ করছি এ জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। আমি আমার কৃত অপরাধ স্বীকার করছি। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। আপনি ছাড়া অপরাধ ক্ষমা করার কেউ নেই। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৭০)

উল্লেখ্য, কারো এই দোয়া মুখস্থ করা সম্ভব না হলে সে নিজের ভাষায়ও মহান আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে তাওবা করতে পারবে। ইনশাআল্লাহ, মহান আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন।

অনলাইন সময় ডেস্ক, ২ সেপ্টেম্বর ২০২১;

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *