শাহরাস্তিতে গৃহবধূ নওরোজ আফরিন প্রিয়া হত্যায় দু’ ভাড়াটিয়া খুনির সন্ধ্যানে নেমেছে পুলিশ। প্রিয়ার মা সুলতানার পরকীয়া প্রেমিক মোঃ হান্নান হোসেন (৩০) এর সামনে ধারালো অস্ত্রদিয়ে দুই ভাড়াটিয়া খুনি তাকে কুপিয়ে হত্যা করে নির্বিঘ্নে সটকে পরে। প্রিয়া খুনির সন্ধ্যানে নেমে পুলিশ এমনই নতুন তথ্য দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, প্রিয়ার মা তাহমিনা সুলতানা রুমি’র (৪৩) পরকীয়া প্রেমিক মোঃ হান্নান হোসেন (৩০) এর সামনে ঘটনার দিন ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ভাড়াটিয়া দুই খুনি।
শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের আহম্মদনগর ছোট পোদ্দার বাড়ির সৌদি আরব প্রবাসী মোঃ ইসমাইল হোসেনের মেয়ে নওরোজ আফরিন প্রিয়া (২১) খুন হয়। তার স্বামীর বাড়ী কুমিল্লায়। স্বামী কাইরুজ্জামান চৌধুরী হৃদয় কুমিল্লায় চাকরি করেন। নিহতের আবরীন জামান উম্মে আনহার নামে দুই বছরের শিশু সন্তান রয়েছে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নিজ বাড়িতে প্রিয়াকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার ৫দিন পর রহস্য উদঘাটনে ঘটনাস্থল ও আশপাশ পর্যবেক্ষন করেন পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম(বার), সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (কচুয়া সার্কেল) মোঃ আবুল কালাম চৌধুরী, শাহরাস্তি মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আবদুল মান্নান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আসাদুল ইসলাম প্রমুখ।
ঘটনার ৭দিন পর মামলার রহস্য উদ্ঘাটন হলে পুলিশ গত ২৩ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত ও হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মামলার বাদী তাহমিনা সুলতানা রুমি ও তার পরকীয়া প্রেমিক হান্নান হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আদালতে প্রিয়ার মা তাহমিনা সুলতানা রুমির জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আসাদুল ইসলাম জানান, নওরোজ আফরিন প্রিয়ার হত্যার পরদিন ১৭ সেপ্টেম্বর তার মা তাহমিনা সুলতানা রুমি বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দাখিল করেন। মামলা তদন্তকালীন সময়ে স্থানীয় উপস্থিত সাক্ষী ও বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বাদীর কথাবার্তায় সন্দেহ হলে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায় তিনি জানান, তার বাড়ির পাশ্ববর্তী দেবকরা এলাকার মৃত মুনসুর আলী মিয়া পুত্র মোঃ হান্নান হোসেনের সাথে প্রায় ৫/৬ বছর পূর্ব হতে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক। বাদীর মেয়ে প্রিয়া প্রতিনিয়ত পরকীয়ায় লিপ্ত না হওয়ার জন্য বাধা প্রদান করত। বাদী রুমি ও মোঃ হান্নান হোসেনের পরকীয়া প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে তারা প্রিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা শুরু করেন।
পুলিশ আরো জানায়, ঘটনার দিন ১৬ সেপ্টেম্বর রুমি তার নাতনি আনহারকে নিয়ে বিকেল ৪টায় বাড়ি থেকে শাহরাস্তি ঠাকুর বাজারে ডাক্তার দেখাতে যান। বাড়িতে তার একমাত্র ছেলে দিয়া হোসেন পরশ (১৯) অবস্থান করে। তারা ডাক্তার দেখিয়ে অনুমান সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাসায় ফিরে আসামাত্র তার ছেলে দিয়া হোসেন পরশ খিলাবাজারে চলে যায়।
সেই সুযোগে প্রিয়াকে বাড়িতে একা রেখে রুটি বানানোর কথা বলে কৌশলে তার জা জান্নাতের বাড়িতে সন্ধ্যা ৭টার দিকে চলে যায়। সে সময় হান্নান হোসেন তাদের ঘরে প্রবেশ করে প্রিয়ার সাথে কথাবার্তা বলতে থাকে। এসময় হান্নানের ২ সহযোগী ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেই তাদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলার ও মাথার পেছনে ডান চোয়াল এবং পিঠে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
মামলার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন হলে তাৎক্ষণিক মামলার অভিযুক্ত ও মূল পরিকল্পনাকারী মামলার বাদী তাহমিনা সুলতানা রুমি ও হান্নান হোসেনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেন। এরমধ্যে আসামী তাহমিনা সুলতানা রুমির জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়। অন্যান্য সহযোগী পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের জোর-প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আসামী হান্নান ও বাদী শলাপরামর্শে তাদের সহযোগী ২ জনকে নিয়ে উক্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার