মতলব উত্তরে পোড়া মবিল মিলের বিষাক্ত ধোঁয়ায় পরিবেশ দুষণ

মতলব উত্তরে নাগরিক দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে মের্সাস সমু মেশিন ওয়েল (মবিল কারখানা)। এতে নির্গত হচ্ছে কেমিক্যাল বর্জ্য ও নোংরা পানি। মেঘনা-ধনাগোদা নদী ও খাল পেরিয়ে এই পানিতে দূষিত হচ্ছে নদী। যে খালের পাড়ে কারখানা সেই পানি কালিপুর পাম্প হাউজ দিয়ে সেচের কাজে ব্যবহার হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে চাষীরা। পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বেড়েছে নাগরিক দুর্ভোগ।

জনবসতির পাশে গড়ে উঠা পোড়া মবিল মিলের বিষাক্ত ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। একদিকে বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার গন্ধে মানুষের শ্বাসবন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে, অন্যদিকে শিশুদের কাশি ও শ্বাস কষ্টজনিত রোগ বাড়ছে।

জানা গেছে, মতলব উত্তর উপজেলার কালিপুর বাজারে গড়ে উঠা মবিল তেলের মিলের দুগর্ন্ধযুক্ত পানি ও কালো ধোঁয়া যেমন অক্সিজেন কেড়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে বিষাক্ত এসিড মিশ্রিত কালো ধোঁয়ায় বায়ুমন্ডল ঘনীভতূ হওয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মবিল তেল তৈরির এ কারখানার বিষাক্ত পানি ও কালো ধোঁয়ার কারণে কালিপুর ও আপাশপাশের এলাকার মানুষকে দুবিসহ কষ্টে জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির জায়গায় গড়ে উঠা এ মবিল তেলের মিলের কারনে এলাকায় মানুষের কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেড়েছে। এছাড়া কালো ধোঁয়ার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বাচ্চাদের নিয়ে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

ঘনঘন বাচ্চাদের অসুখ-বিসুখ হচ্ছে। একটি লোহার তৈরি উঁচুঘরে বড় বড় বয়লার। গাড়ির ব্যবহৃত মবিল বয়লারে দিয়ে কাবর্ন-ডাই-অক্সাইড সালফার-ডাই-অক্সাইড এসিড মিশিয়ে তাতে পযার্প্ত পরিমাণে আগুনের তাপ দিয়ে পাতলা একটি সংমিশ্রণে মবিল তেল তৈরি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, মতলব উত্তর থানা, নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসীরা।

অভিযোগ সূত্র জানা গেছে, মতলব উত্তর উপজেলার কালিপুর বাজার সংলগ্ন মের্সাস সমু মেশিন ওয়েলের লোকমান হোসেন ঢালী খরচ বাঁচানোর জন্য রাতের আঁধারে শিল্প-কারখানার বর্জ্য কোনও শোধন না করেই সরাসরি নদী সংযোগ খালে ছেড়ে দেয় এমনই অভিযোগ এলাকাবাসীর।

এদিকে বায়ু দূষনের কুফলে এসব নির্গত কালো ধোয়ার কারণে পরিবেশ ও বায়ু দূষণ করে মানুষের শ্বাস কষ্ট, হাপানিসহ নানা রোগ-বালাইয়ের সৃষ্টি করছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার কালিপুর বাজার সংলগ্ন এ মের্সাস সমু মেশিন ওয়েল এলাকার খাল ও নদীর পানি কালো ও হয়ে আছে। উৎকট দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম স্থানীয়দের। এসব নোংরা ময়লা পানিতে জন্ম হচ্ছে মশার। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ স্থানীয়রা।

এই মবিল কারখানার পাশেই রয়েছে বাজার, হাসপাতাল, স্কুল কলেজ ও মতলব-ঢাকা যাতায়াতের ট্রলার সংযোগ। এখান দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার লোকের সমাগম।

এ এলাকার বাসিন্দারা জানান, পানি নিস্কাশনের সব খালের পানির রঙ লাল ও কালো হয়ে গেছে। প্রায় ১৫ বছর ধরে এই অবস্থার মধ্যেই এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ বসবাস করে আসছেন।

সমু মেশিন ওয়েলের মালিক লোকমান ঢালী ব্যবসার কথা চিন্তা করলেও সাধারণ মানুষের কোনও চিন্তা তার নেই। ফলে মবিল কারখানার দুর্গন্ধ মানব দেহের বিভিন্ন ক্ষতি করে।

এলাকাবাসীদের অভিযোগ, এই মবিল কারখানায় ক্ষতিকারক স্পিরিট, প্লাস্টিক কনা ও পোড়া মবিল ব্যবহার করছে। তাছাড়া সরসারি বর্জ্য ও কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি সরাসরি খালে ও নদীতে ছাড়ার কারণে এ এলাকা দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এ বিষয়ে মের্সাস সমু মেশিন ওয়েলের মালিক লোকমান হোসেন ঢালী বলেন, আমি সরকারি সকল নিয়ম-কানুন মেনেই কাজ করছি। আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা।

মতলব উত্তর প্রতিনিধি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *